কেমন আছে পুরুলিয়ার এই ‘ভূতের’ স্টেশন ? পরিস্থিতি কি বদলেছে ? জানতে পড়ুন এই বিশেষ প্রতিবেদন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের গা-ঘেঁষে ছোট্ট একটা স্টেশন ৷ চারপাশের অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশ বেষ্টিত এই স্টেশন মন ভরিয়ে দেওয়ার মতো। কিন্তু, তৈরির অর্ধ-শতকের বেশি সময় পরেও এক অজানা আতঙ্কের জেরে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে স্টেশনটি ৷

পুরুলিয়া জেলার একটি বহুচর্চিত রেল স্টেশন বেগুনকোদর । ঝালদা শহরের অনতিদূরে বেগুনকোদর গ্রামে আজ থেকে 65 বছর আগে তৈরি হয় এই স্টেশন ৷ স্টেশনটি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রাঁচি ডিভিশনের মুরি-কোটশিলা শাখার অধীনে। 1960 সালে এটি হল্ট স্টেশন হিসেবে গড়ে উঠে ৷ কিন্তু ভূতের গুজবের জেরে 1967 সালে বন্ধ হয়ে যায় বেগুনকোদর স্টেশনটি । দীর্ঘ সময় পর 2009 সালে পুনরায় এটিকে হল্ট স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয় ৷ বিভিন্ন ট্রেন এখানে এসে থামত ৷ যাত্রীরাও ওঠানামা করতেন।

স্টেশনে যে ভূত বলে কিছু নেই এবং সেটি যে নিছকই একটি গুজব, তা প্রমাণ করার জন্য এই রেল স্টেশনে ভূত চতুর্দশীর দিনই সেখানে রাত্রি জাগরণ করেন বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। এই স্টেশনে ভূত দেখাতে পারলে বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণাও করা হয় ৷ তারপর ধীরে ধীরে ভয় কাটতে শুরু করে আশে পাশের মানুষজনের।

ভূতের আতঙ্ক এতটাই গ্রাস করেছিল এলাকার বাসিন্দাদের যে, একসময় এই রেল স্টেশনে রাতে তো দূরস্ত, দিনেই কেউ যেতেন না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছিল স্টেশনটি ৷ এই শাখায় ট্রেন চলাচল করলেও বেগুনকোদর স্টেশনে ট্রেন থামত না। স্টেশনে না-ছিল প্ল্যাটফর্ম, না-ছিল আলোর ব্যবস্থা ৷ যার ফলে সন্ধ্যার পর স্টেশন চত্বরে ছিল গা ছমছমে পরিবেশ।

এখনও পর্যন্ত সন্ধ্যা নামলে ওই স্টেশনে কেউ যান না। স্টেশনে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা আজও নেই ৷ স্টেশনে থাকেন না কোনও রেলের কর্মচারী ৷ সারাদিনে চারটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন এখানে থামে। এ বিষয়ে রাঁচি রেলওয়ে ডিভিশনের ডিআরএম জসমীত সিং বিন্দ্রা বলেন, “গত দু’বছরে ওই হল্ট স্টেশনে বেশ কিছু পরিষেবার মান উন্নয়ন করা হয়েছে । উচুঁ প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে ৷ যে পরিমাণ যাত্রী ওঠানামা করেন সেই হিসেবে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো রয়েছে । চারটি ট্রেন সেখানে স্টপেজ দেয়।” তবে স্টেশনে কোনও স্থায়ী রেলকর্মী না-থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সব জায়গায় স্থায়ী কর্মী থাকতে হবে, এমন কোনও বিষয় নেই । ওটি যেহেতু হল্ট স্টেশন, তাই এজেন্ট মারফত সেখানে টিকিট বিক্রি করা হয়।”

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির জেলা(পুরুলিয়া) সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো বলেন, “বেগুনকোদর রেল স্টেশনে সেই সময়ে যিনি স্টেশন মাস্টার ছিলেন, তিনি সেখান থেকে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে চেয়েছিলেন । তাই তিনি ওই ভূতের গুজব রটিয়ে দিয়েছিলেন। ভূত বলে কিছু নেই। এখন মানুষজন সুন্দরভাবে যাতায়াত করছেন । ট্রেন থামছে । তবে হল্ট স্টেশন বলে খুব বেশি ট্রেন তো থামে না ৷ সেই জন্য স্টেশনে টিকিট বিক্রি করার জন্য যে চুক্তিভিত্তিক কর্মী রয়েছেন, তিনিও সব সময় থাকেন না। সাধারণ মানুষ যারা যাতায়াত করেন, তারা নির্দিষ্ট সময়েই স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে চাপেন।”

Begunkodar railway station in purulia

পুরুলিয়ার বেগুনকোদর স্টেশনের বর্তমান ছবি 

 

এখন ছবিটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে । রেল স্টেশনে ছাউনি, প্ল্যাটফর্ম, ফুটওভার ব্রিজ সবই হয়েছে । সাধারণ মানুষের মনে কমেছে ভূতের ভয়ও। ট্রেনে স্বাভাবিক হয়েছে যাত্রী ওঠানামা । স্থানীয় বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় কুমার বলেন, “এখন আর আগের মত আতঙ্ক নেই । সকাল-সন্ধ্যায় যাত্রীরা আসাযাওয়া করেন।”

অতীতে এই স্টেশন নিয়ে সংবাদমাধ্যেমে বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়েছে ৷ স্টেশনকে ঘিরে ভূতের আজব গল্প এমনভাবে গ্রাস করেছিল যে রেল কর্তৃপক্ষও কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি ৷ ফলে এই স্টেশনে ট্রেন থামানো বন্ধ হয়ে যায় ৷ কারণ কর্মীরা এখানেও কেউ থাকতে চাননি ৷ বারবার চেষ্টা করেও কর্তৃপক্ষ নতুন কর্মী নিয়োগ করতে পারেনি ৷ ফলে তৈরির 7 বছরের মাথায় বেগুনকোদর রেল স্টেশনটি বন্ধ করে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, 2009 সালে এটি আবার কার্যকর হয়। বন্ধ থাকার 42 বছর পর স্টেশনটি পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তারপর থেকে এখানে কয়েকটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন থামলেও এই স্টেশনে এখনও কোনও রেলকর্মী নিযুক্ত নেই।

তবে বর্তমানে বেগুনকোদর স্টেশনের ছবিটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে ৷ তবে সম্পূর্ণরূপে এখনও বদল হয়নি। দুপুরবেলায় স্টেশন চত্বর খাঁ খাঁ করছে ৷ ট্রেন থেকে হাতেগোনা দু-একজন যাত্রী নামলেন। তাঁরাও ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে চাইলেন না ৷ তবে স্টেশনে এখনও নেই রেলের কোনও কর্মী। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মী রয়েছেন ৷ তিনি ট্রেনের নির্দিষ্ট সময়েই স্টেশনে আসেন। স্টেশনে যে দু-একজনের দেখা মিলল, তাঁরাও ভূতের বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। কোথাও যেন এখনও রহস্যে ঘেরা বেগুনকোদর।

আরও পড়ুন:- পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন পোস্ট অফিস বন্ধ হচ্ছে। কেন? টাকা থাকলে কি করবেন? বিস্তারিত জানুন।

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন