জাপানে শতায়ুর সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে ! জীবনযাত্রার মানই কি প্রধান কারণ ?

By Bangla News Dunia Dinesh

Published on:

জাপানে ১০০ বছর বা তাঁর বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক সরকারি সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। সেদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, বর্তমানে জাপানে মোট ৯৯,৭৬৩ জন শতায়ু মানুষ রয়েছেন, যার মধ্যে ৮৭,৭৮৪ জন মহিলা এবং ১১,৯৭৯ জন পুরুষ। এই বিপুল সংখ্যক শতায়ু মানুষের জীবনধারণ পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনশৈলী নিয়ে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানিদের দীর্ঘায়ুর প্রধান কারণ হল তাঁদের সুষম খাদ্যাভ্যাস। তাঁদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় রেড মিটের পরিমাণ খুবই কম। বরং মাছ এবং প্রচুর শাকসবজি থাকে তাঁদের খাদ্য তালিকায়। এর ফলে হৃদরোগ এবং ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়, যা তাঁদের দীর্ঘায়ুর মূল কারণ। এছাড়া, জাপানি মহিলাদের মধ্যে স্থূলতার হার অত্যন্ত কম, যা পুরুষদের তুলনায় তাঁদের গড় আয়ু বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ। প্রসঙ্গত, জাপানের সবচেয়ে প্রবীণ নাগরিক শিগেকো কাগাওয়া নামের এক মহিলা। বর্তমানে তাঁর বয়স ১১৪ বছর।

খাদ্যাভ্যাস ছাড়াও, জাপানিরা বয়সের সঙ্গে নিজেদের সক্রিয় রাখেন। হাঁটা এবং গণপরিবহন ব্যবহারের প্রতি তাঁদের আগ্রহ ইউরোপ ও আমেরিকার প্রবীণদের চেয়ে অনেক বেশি। উল্লেখ্য “রেডিও তাইসো” (Radio Taiso) নামে পরিচিত একটি দৈনিক দলগত ব্যায়াম জাপানি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯২৮ সাল থেকে এটি তাঁদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করছে। এই তিন মিনিটের ব্যায়ামটি টিভিতে সম্প্রচারিত হয় এবং সারা দেশে ছোট ছোট কমিউনিটি গ্রুপে তা অনুশীলন করা হয়।

তবে এই সংখ্যা নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় শতায়ু মানুষের সংখ্যার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১০ সালে জাপানের একটি সরকারি নিরীক্ষায় দেখা যায়, প্রায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার শতায়ু ব্যক্তির কোনও হদিশ নেই। কিছু ক্ষেত্রে, তাঁদের কয়েক দশক আগেই মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। মৃতদের পরিবার পেনশন পাওয়ার আশায় প্রবীণদের মৃত্যুর খবর গোপন করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে।

উল্লেখ্য, এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে যখন টোকিওর ১১১ বছর বয়সী সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি বলে পরিচিত সোগেন কাতোর দেহ তাঁর বাড়িতেই তাঁর মৃত্যুর ৩২ বছর পর খুঁজে পাওয়া যায়। এই ঘটনার পরেই সরকার এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর জাপানে ‘প্রবীণ দিবস’ পালিত হবে, যা একটি জাতীয় ছুটির দিন। এই দিন নতুন শতায়ু ব্যাক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটি অভিনন্দন জানানো চিঠি এবং একটি রৌপ্য পদক উপহার পাবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এই বছর ৫২,৩১০ জন এই সম্মানের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন। ১৯৬৩ সালে যখন জাপান সরকার এই জরিপ শুরু করে, তখন শতায়ুর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫৩ জন। সেই সংখ্যা ১৯৮১ সালে ১,০০০ এবং ১৯৯৮ সালে ১০,০০০-এ পৌঁছায়। আর এখন সেই সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই বছরের শুরুর দিকে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ভারতে এই মুহূর্তে ১০০ বছর বা তাঁর বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। তবে ভারতের মোট জনসংখ্যাও অনেকটাই বেশি, প্রায় ১৪০ কোটি। যার ফলে শতায়ু মানুষের গড় সংখ্যা জাপানের তুলনায় ভারতে যে অনেকটাই কম, সে কথা বলাই বাহুল্য।

Bangla News Dunia Dinesh

মন্তব্য করুন