Bangla News Dunia, দীনেশ : আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীকে বহিষ্কার করেছে সিপিএম। তার বিরুদ্ধে অন্য জেলার দলের মহিলা সংগঠনের এক কর্মীকে মোবাইলে অশ্লীল মেসেজ পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। সেই অশ্লীল মেসেজগুলির স্ক্রিনশট ও অডিও ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। বিষয়টি সামনে আসতেই তদন্ত শুরু করে সিপিএম। এর পরেই ঘটনার সত্যতা খুঁজে নিয়ে বংশগোপালকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় দল। শনিবার রাতে সেই সিদ্ধান্তের কথা দলের রাজ্য কমিটির সম্পাদকের নামে বিঞ্জপ্তি আকারে জানানো হয়। যদিও বংশগোপালের দাবি, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
আরও পড়ুন : অস্ত্রোপচার নাকি হোমিওপ্যাথি ? জানুন কোন পথে টিউমার থেকে স্থায়ী সমাধান
রবিবার রানিগঞ্জে সাংবাদিকদের বংশগোপাল চৌধুরী জানান, দলের একটি অংশ বিজেপির সঙ্গে মিলে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ফলস্বরূপ, তাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর আগেও, একবার কলকাতার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে একজন মহিলাকে পাঠানো হয়েছিল এবং অভিযোগ করা হয়েছিল যে তিনি তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তারপরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেরাই সেই অভিযোগগুলি খারিজ করেছিলেন।
আরও পড়ুন : জানুন প্রবল গরমে সান স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ?
তিনি এদিন স্পষ্ট করে বলেন,‘দলের কিছু লোক বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলকে ভেতর থেকে দুর্বল করার জন্য কাজ করছে। আমি ১৯ বছর বয়স থেকেই দলের সঙ্গে যুক্ত। একটি আদর্শ নিয়ে দলে ছিলাম। দলের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতাম। কিন্তু দলের কিছু লোকের অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরোধিতা করার কারণে আমাকে ষড়যন্ত্র করে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই মুহুর্তে অন্য কোনও দলে যোগদানের প্রশ্নই উঠে না। পঙ্কজ রায় সরকার (দুর্গাপুরের নেতা) যখন দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন, তখন থেকেই আমার সম্পর্কে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে আমি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছি। কিন্তু এটা হয়নি। অন্য কোনও দলে যোগদানে মোটেও আগ্রহী নই।’
আরো পড়ুন : কখন “টিউমার’ ক্যান্সারে পরিনত হয় ? জানুন সঠিক তথ্য
বংশগোপাল আরও বলেন, ‘আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম, তখন আমার সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে তিনি অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করেছি। ২০১১ সালে যখন বাম সরকারের অবসান হয়, তখন আমার সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে আমার বাড়ির বাথরুমে ৫০ কোটি টাকা ছিল। কিন্তু আজ বামপন্থীদের শাসন শেষ হওয়ার ১৪ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’ তার বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘এখন সিপিএম আগের মতো নেই। যা দেখে আমি দলে যোগ দিয়েছিলাম।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘দলের কিছু নেতা এখন অবৈধ কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছেন এবং গোপনে বিজেপির সঙ্গে কাজ করছেন। আমি সেই নেতাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছিলাম। তাই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কলকাতার এক দলের নেতা এই জেলায় এসে ব্যবসা করছেন। সে মহিলাদের সঙ্গে হোটেলে যান। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে গত ৬ মাস ধরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিষয়গুলি প্রচার করা হয়েছে। আমাকে অপমান করার জন্য, তা করা হয়েছে। আজ সেই কারণেই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন যে, ‘আমি জনগণের জন্য কাজ করে যাব। কারণ রাজনীতি আমার কাছে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়। বরং তা জনসেবার মাধ্যম।’
এদিকে, বংশগোপাল চৌধুরীকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত জানার পরে স্বাভাবিক ভাবেই সিপিএমকে একযোগে আক্রমণ করেছে রাজ্য ও কেন্দ্রের দুই শাসক দল। আসানসোল পুরনিগমের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর অশোক রুদ্র বলেন, ‘বামপন্থীদের আসল চেহারা ধীরে ধীরে সামনে আসছে। সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে কেবল বংশগোপাল চৌধুরীই নয়, এমন আরও অনেক ব্যক্তিকে ঐ দলে পাওয়া যাবে যারা বড় বড় কথা বলে। কিন্তু তাদের আসল চরিত্র ঠিক এইরকম। একজন নেতা যে দলেরই হোন না কেন, তার বোঝা উচিত যে তিনি সমাজে আছেন এবং তাকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হন। এমন পরিস্থিতিতে, যদি তিনি এমন কাজ করেন, তাহলে তাকে দেখার পর যারা রাজনীতিতে আসবেন তাদের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে মহিলারা রাজনীতিতে আসার আগে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করবেন, তাই নেতাদের তাদের প্রতিটি কাজের উপর অনেক নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।
অন্যদিকে, এই প্রসঙ্গে, বিজেপির রাজ্য নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ভবিষ্যতে বংশ গোপাল চৌধুরীর মতো নেতারা তৃণমূলে যোগ দেবেন। কারণ সমস্ত চোর এবং এই ধরনের লোকেরা তৃণমূলে যোগ দেয়। তাদের একটাই জায়গা, আর তা হল তৃণমূল।’