পৃথিবীকে রক্ষার কাজ শুরু হোক নিজের ঘর থেকেই, বার্তা মাটি বিশেষজ্ঞদের

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- মাটি হচ্ছে কৃষির মূল ভিত্তি । মাটি যদি উর্বর না হয়, তাহলে ভালো ফসল হবে না । কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, প্লাস্টিকের আবর্জনা জমে মাটির স্বাস্থ্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে । যার প্রভাব পড়ছে চাষাবাদে৷ বাড়ছে খরচও ৷

এর থেকে মুক্তির উপায় কী ? কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপায় একটাই এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে চাষি থেকে সাধারণ মানুষ, প্রত্যেককেই দায়িত্ব নিতে হবে ৷ চাষিকে যেমন মাটি পরীক্ষা করে মাটির গুণগতমান অনুযায়ী চাষ করতে হবে, তেমনই সাধারণ মানুষকেও যত্রতত্র প্লাস্টিক না ফেলার বিষয়ে সচেতন হতে হবে ৷ সচেতনতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফেও ৷

গতকাল ছিল আর্থ ডে বা পৃথিবী দিবস ৷ এই দিনটিতে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য প্রতিটি মানুষকে দায়িত্ব নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন মাটি বিশেষজ্ঞ থেকে প্রশাসন ।

মাটি বিশেষজ্ঞদের মতে, মাটির উর্বরাশক্তি কমে যাওয়ার মূল কারণ একই জমিতে বছরে একাধিকবার ফসল ফলানো, অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার । এছাড়া জমিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের অভাব, জৈব সারের ব্যবহার না করার জন্য জমির স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাওয়া । এছাড়া ভারী ধাতব পদার্থ যেমন আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, সীসা, নিকেল ইত্যাদির কারণেও মাটি নষ্ট হয় ৷ কিন্তু কৃষকেরা অধিক ফলনের আশায় অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করছেন ।

Earth Day

আবর্জনার স্তূপ 

এই নিয়ে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার এনটোমলোজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. লক্ষ্মণ চন্দ্র প্যাটেল বলেন, ‘‘কৃষকেরা বিভিন্ন ফসল চাষ করতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে থাকেন । সবুজ বিপ্লবের প্রধান কারণ ছিল রাসায়নিক সারের ব্যবহার, উন্নত মানেই বীজ ও রাসায়নিক ওষুধের ব্যবহার । কিন্তু বর্তমানে কৃষকেরা মাটি পরীক্ষা না করে অত্যাধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে মাটির স্বাস্থ্য খারাপ জায়গায় চলে গিয়েছে ।’’

যদিও 2015 সালে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ৷ এর জন্য চালু করা হয়েছিল ‘সয়েল হেল্থ কার্ড’ ৷ মাটি বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিক ফলনের আশায় অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে তার আগে মাটির চরিত্র বোঝার জন্য মাটি পরীক্ষা করতে হবে । এতে একদিকে যেমন মাটিতে অপ্রয়োজনীয় সারের ব্যবহার কমবে, চাষির কাছে সারের খরচ বাঁচবে । মাটির স্বাস্থ্য ভালো হবে ফলন ভালো হবে ।

কিন্তু তা কি আদৌ মেনে চলেন কৃষকরা ? ড. লক্ষ্মণ চন্দ্র প্যাটেল বলেন, ‘‘এদিকে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার, ডিএপি ব্যবহার করার ফলে প্রয়োজনের তুলনায় এই সার মাটিতে গিয়ে মাটির গঠন ও মাটির স্বাস্থ্যকে সাংঘাতিকভাবে নষ্ট করে দিচ্ছে । তার ফলে আগামী প্রজন্ম এই মাটিতে চাষ করতে গেলে সমস্যায় পড়ে যাবে । এটাকেই আমরা বলি মাটির বন্ধ্যাত্ব । মাটি যদি একবার বন্ধ্যা হয়ে যায় সেই মাটিতে সার দিলেও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে না । ফলে ফলন না পেয়ে চাষি তাঁর অভ্যাসমতো আরও বেশি সার প্রয়োগ করে থাকে । এর ফলে একদিকে যেমন চাষির খরচ বাড়বে, তেমন ফলনও মিলবে না ।’’

Earth Day

প্লাস্টিকে চলছে ফল বিক্রি 

যদিও রাসায়নিক সারের দাম অনেক বেশি । কিন্তু সরকার ভর্তুকি দেয় বলে কৃষকের কাছে রাসায়নিক সারের ব্যবহার এখনও আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে ৷ তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও ভাবনাচিন্তা ছাড়াই রাসায়নিক সারের ব্যবহার করা হচ্ছে ৷ এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলেই মত ড. প্যাটেলের ৷

কৃষকদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, ‘‘মাটি পরীক্ষা করে যে পরিমাণ সার প্রয়োজন সেই সার ব্যবহার করা উচিত । ফসফেট সার যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যবহার করা হয় মাটিতে আয়রন ফসফেট কিংবা জিংক ফসফেট গাছ নিতে পারবে না । এর ফলে মাটি শক্ত হয়ে গেলে সেই মাটিতে ফলন ভালো হবে না ।’’

Earth Day

আবর্জনার স্তূপ 

তিনি আরও বলেন, ‘‘এছাড়া রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে সাময়িকভাবে কৃষক কিছুটা ফলন পাচ্ছেন, ফলে তাঁরা জৈবিক সারের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন । সুতরাং সার যদি মাটিতে দিতেই হয়, রাসায়নিক সার পরিমাণ মতো দিয়ে, জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে । জৈব সার মাটিতে কোনও ক্ষতি করে না । রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমালে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে ।’’

এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ‘‘অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে মাটির মধ্যে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যায় । ফলে মাটিতে নাইট্রোজেন দিলেও গাছ সেটা পাবে না । ফসফেট ও পটাশের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে থাকে । আমরা মাটি বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার করে থাকি । তাই মাটিকে যদি আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারি তবেই আমরা মনুষ্য সমাজ ও অন্যান্য প্রাণীকূলকে বাঁচিয়ে রাখতে পারব ।’’

Earth Day

প্লাস্টিকে চলছে ফল বিক্রি 

পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মাটিকে ভালো রাখার জন্য বার্তা দেওয়া হয়েছে । পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় বলেন, ‘‘আমাদের পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম শুরু হয়েছে । সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা দেওয়া হয়েছে, আপনারা যে প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন, সেই প্লাস্টিক বাইরে কোথাও ফেলবেন না । বাড়ির একপাশে কোনও চটের বস্তা কিংবা কোনও পাত্রে জমা রেখে দিন । গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সেই প্লাস্টিকের প্যাকেট সংগ্রহ করা হবে ।’’

Earth Day

বর্ধমান শহর 

তিনি আরও বলেন, ‘‘পরে সেই প্লাস্টিক রিসাইকিলিং-এর মাধ্যমে নতুন করে প্লাস্টিকজাত পদার্থ তৈরি করে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলব । আমি নিজে, জেলা পরিষদের পুরো টিম, গ্রাম পঞ্চায়েতের টিম সকলে একযোগে উদ্যোগ নিয়ে এই কাজ করছে । সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য হাতে হাত ধরে সকলের এগিয়ে আসা উচিত ।’’

আরও পড়ুন:- প্রায় দিনই মাথা যন্ত্রণা করছে, শরীরে কিছু বিপজ্জনক রোগ পাকছে? জানুন জরুরি তথ্য

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন