আজ মহানায়কের প্রয়াণ দিবস, কী বললেন বাড়ির দুই পুত্রবধূ ? জানুন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ক্যালেন্ডারের পাতায় আরও একটা 24 জুলাই ৷ 1980 সালের এই দিনটায় বাঙালি চোখের জল ফেলেছিল ৷ না, নিজের কোনও আত্মীয় বা পরমাত্মীয় বা পরিবারের কোনও সদস্যের জন্য নয়। তারা কেঁদেছিল তাদের মনের রাজা মহানায়ক উত্তমকুমারের জন্য।

তিনি যেমন আম বাঙালির কাছে ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমার। তেমনি পরিবারে কারওর তিনি ‘জ্যাজান’ কারওর ‘দাদু’ কারওর আবার ‘বাবি’। আজও তাঁর নাম উচ্চারণ করে কথা বলেন না যে দুজন তাঁরা হলেন উত্তম কুমারের পুত্র গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের দুই স্ত্রী সুমনা চট্টোপাধ্যায় এবং মহুয়া চট্টোপাধায়। মহানায়ক শুধুই তাঁদের কাছে ‘বাবি’। শ্বশুরমশাইয়ের নাম, ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাঁদের অবদানও কম নয়। একই স্বামীর দুই স্ত্রী হয়েও একে অপরের পরম বন্ধু।

মহানায়কের কথা ভেবে কখনও একে অপরের সঙ্গে লড়াইতে শামিল হননি। প্রয়োজনও পড়েনি অবশ্য ৷ সাক্ষাৎকারে দুজনেই বলছিলেন, “আমরা যদি একে অপরের সঙ্গে মারামারি, চুলোচুলি করি সেই কালি ছিটবে বাবির গায়ে। সবাই মহানায়কের বাড়ির অন্দর নিয়ে চর্চা করবে। কী হবে তখন আমাদের তিন ছেলেমেয়ে নবমিতা, গৌরব আর মৌমিতার? আমাদের স্বামীও মৃত্যুকালে বলে গিয়েছিলেন, তাঁর তিন ছেলেমেয়ের যেন কোনও অবহেলা না হয়। তারা যেন ভালো থাকে। তিন ভাইবোনের মিল দেখলে সবাই অবাক হয়। যেমন ঝগড়া তেমন ভাব।…”

আরও পড়ুন:- পশ্চিমবঙ্গের নতুন প্রকল্প ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’, কি কি সুবিধা পাবেন ? জেনে নিন

মহানায়কের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মহুয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাবি আমার বাবার ছেলেবেলার বন্ধু ছিলেন। দুজনের জন্ম সালও এক ৷ একই সালে বাবির জন্ম 3 সেপ্টেম্বর আর আমার বাবার জন্মদিন 5 সেপ্টেম্বর। দুজনের পৈতেও একইদিনে হয়েছে। বাবার বন্ধু ছিলেন, ফলে আমি ওনাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তবে, আমার বিয়ের আগেই উনি মারা যান। তবে, অনেক স্মৃতি ওনাকে ঘিরে ৷ এই বাড়ির দুই মেয়ে আমার বন্ধু। একবার তিনজনে মিলে সিনেমা দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে গিয়েছিলাম বাবির কাছে। আমাদের বাড়িতে গিয়ে বলেছিলেন- এই যে পালের গোদা কখনও সিনেমা দেখার ইচ্ছা হলে আমাকে বলবে। বাবি যে সব ছবিতে ভিলেনের অভিনয় করেন সেগুলো দেখতে দিতেন না। একটা কথাই বলতে হয়, এই বাড়ি খুব রক্ষণশীল। নিয়মকানুনে বাঁধা এদের জীবন।”

তিনি আরও বলেন, “স্কুলে যখন লোকাল গার্ডিয়ানের নাম লিখতে বলা হয়েছিল মনে আছে বাবি আমার বাবাকে বলেছিলেন তাঁর নাম লিখতে।” মহানায়কের জন্মদিনের থেকেও মৃত্যুদিন বেশি পালন করে বাঙালি ৷ এই প্রসঙ্গে মহুয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সবথেকে বড় কথা ক’জন লেজেন্ডের জন্ম-মৃত্যুদিন এভাবে মনে রাখে মানুষ? মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ কাপুরের অবদান কম নয়। ওখানে জনে জনে জিজ্ঞেস করুন তো রাজকাপুরের জন্ম ও মৃত্য তারিখ? কেউ পারবে না বলতে। কিন্তু আমাদের বাবিরটা সবাই জানে। মনে রাখে। বাবি কাজ করতে করতে চলে গিয়েছেন মানে রাজা রাজ্য শাসন করতে করতে চলে গিয়েছেন ৷ যাকে বলে ‘কিং এক্সিট’। এভাবে যে রাজা চলে যায় তাকে সবাই মনে রাখে। আর সে যদি দয়ালু রাজা হয়। আমাদের বাবি তেমনই একজন।

আরও পড়ুন:- শিশুর বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বাবা-মায়ের এই ভুল, অবশ্যই জেনে রাখুন

সুমনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাবি মানে মহানায়ক কোনওদিন আমার সামনে এসে দাঁড়াবেন এটাই অবিশ্বাস্য ছিল। উনি আমাকে স্নেহ করতেন। খুব বেশি কথা আমার সঙ্গে হত না। তবে, দেখলেই কথা বলতেন। বাবির জন্মদিনে মামি (উত্তম জায়া গৌরী দেবী) ওনাকে নিজের হাতে রান্না করে দিতেন। পোলাও, মাছ, চিকেন, পায়েস। উনি ভালোবাসতেন কলাইয়ের ডাল, আলুপোস্ত, ফিশ ফ্রাই, কাঁটার ঝাল। তবে, নিরামিষ বেশি ভালোবাসতেন।”

মহুয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই বাড়ির আরও দুই ছেলে তরুণ কুমার এবং বরুণ কুমারও নিরামিষ খেতে ভালোবাসতেন। শুক্তো, বড়ি দিয়ে শাকভাজা, ডুমুরের ডালনা, ধোকার ডালনা, পাঁপড়ের ডালনা, এঁচোরের কোপ্তা কত কী-ই না রান্না হত৷ বিয়ে হয়ে আসার পর আমাকে একটা অন্তত পদ রাঁধতে হত। এটা আমাদের স্বামীর নির্দেশ ছিল। রান্নার ঠাকুর ছিলেন, তাও রাঁধতে হত। বাবি আমার বিয়ের আগে আমার হাতের রান্না আমার বাপের বাড়িতে খেয়েছেন। আমি এখানে আসার আগেই বাপি গত হয়েছেন। তাই এখানে আর খাওয়াতে পারিনি। “

জানা গেল, মহানায়ক কোনও ওপেনিং অনুষ্ঠানে যেতেন না। তবে, ফাটাকেষ্টর কালী পুজোতে তাঁকে যেতে হয়েছিল। মহুয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কেননা উনি বাবিকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছিলেন। না গেলে…। আরেকবার সুব্রত মুখোপাধ্যায় আর প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী বাবিকে একটা অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই অনুষ্ঠানটা থেকে উঠে আসা অর্থ গরিবদের দেওয়া হবে বলে। তাই বাবি রাজি হন, কথা দেন যে যাবেন। কিন্তু সেদিন তুমুল বৃষ্টি কলকাতা শহরে। যেখানে গেলেন সেখানে বৃষ্টি ছিল না। কিন্তু উনি গেলেন জল ঠেলে। বিনা পয়সায় হাজিরা দিলেন সেই অনুষ্ঠানে। এই ছিল কথার দাম। কারওকে একবার কথা দিলে ফেরাতেন না।”

মহানায়ক অভিনীত দুজনের পছন্দের নাম জানতে চাইলে উঠে আসে ‘নায়ক’, ‘অগ্নিশ্বর’, ‘বিকেলে ভোরের ফুল’, ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘বাঘ বন্দি খেলা’, ”ব্রজবুলি’, ‘অপরিচিত’, ‘জীবন জিজ্ঞাসা’, ‘নিধিরাম সর্দার’-এর নাম। তবে দুজনেরই বক্তব্য, মহানায়কের সব ছবিই পছন্দ।

প্রশ্ন করা হয়, মহানায়ককে তাঁরা কখনও রাগতে দেখেছেন কিনা। মহুয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাগী ছিলেন না মোটেও। তবে, অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতেন। অনিয়ম পছন্দ করতেন না। সেটাকে যদি কেউ রাগ বলে তা হলে রাগ। তবে, ‘নিধিরাম সর্দার’ ছবির শুটিংয়ের আগে মেক আপ চলাকালীন কেউ বিরক্ত করলে রেগে যেতেন। কেন না অনেক কষ্ট করে করতেন মেক আপটা। গরম মোম কাজে লাগিয়ে মেক আপ হত। আবার মেক আপ তোলাও হত গরম মোম ঢেলে। ওই কষ্টটা বাবিকে সহ্য করতে দেখেছি। কাজের প্রতি কত নিষ্ঠা থাকলে মানুষ এটা করতে পারেন।…”

তিনি আরও বলেন, ” বাবিকে অনেকে রোম্যান্টিক নায়ক বলেন। আমি বলব, ওঁর মতো ভার্সেটাইল অভিনেতা বিরল। ভিলেন থেকে ভৃত্য সব চরিত্রেই বাবি অনবদ্য ছিলেন।”

আরও পড়ুন:- বঙ্গোপসাগরে তৈরি ‘উইফা’ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলার কোন কোন জেলা ভাসবে ? লেটেস্ট আপডেট

 

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন