আধার, ভোটার বা প্যান কার্ড নয়, নাগরিকত্বের জন্য আসছে Smart Citizenship Card

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধন বা SIR (Special Intensive Revision 2025) শুরু হওয়ার আগেই প্রচুর বিতর্ক শুরু হয়েছে। যে প্রক্রিয়া প্রত্যেক ১০ থেকে ২০ বছর পর পর করা হয়, সেটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একপ্রকার আতংক সৃষ্টি হয়েছে। আর বিহারে ৬৫ লাখ লোকের নাম বাদ যাওয়ায় সেই আতংকের মাত্রা আরও বেড়েছে। প্যাহেলগাম ইস্যুর পর অনুপ্রবেশকারী নিয়ে সারা দেশ যখন উত্তাল, তখন SIR এসে নতুন জল্পনার সৃষ্টি করেছে। এছাড়া সারা দেশে বাঙালী ভাষাভাষীরা বাংলাদেশী কিনা, সেটা নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার পর এবার বাংলাতে ও ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

SIR : Special Intensive Revision 2025

বিহার থেকে শুরু। এরপর পশ্চিমবঙ্গ এবং সারা দেশে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর এর জন্য পশ্চিমবঙ্গেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আর এই প্রক্রিয়া নিয়ে আদালতে মামলা ও হয়েছে। আর বিহারে ও এই বিষয় নিয়ে মামলা হয়েছে। আর সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হবে, নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয়ে-

  • ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধনে কোন নথি গ্রহণযোগ্য হবে?
  • আধার কার্ড প্রামান্য নথি হিসাবে চলবে কিনা?
  • ভোটার প্যান আর আধার কার্ড থাকলে নাগরিক নয়?
  • সারা দেশে নতুন নাগরিক কার্ড দেওয়ার ভাবনা

কারা ভারতীয় নাগরিক?

সাধারণ মানুষ মনে করেন যাদের ভোটার কার্ড আধার কার্ড বা প্যান কার্ড আছে, তারাই নাগরিক। তবে মহারাষ্ট্রের বোম্বে হাইকোর্টে গত সপ্তাহের একটি মামলায় আধার কার্ড, প্যান ও ভোটার কার্ড থাকা সত্ত্বেও নাগরিক বলে মান্যতা দেওয়া হয়নি। উক্ত মামলায় বিচাপরতি বোরকার ওই ব্যক্তির জামিন খারিজ করে দিয়ে জানান, “আধার, প্যান বা ভোটার কার্ড থাকলেই তিনি ভারতের নাগরিক হিসাবে দাবি করতে পারেন না। ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনে স্পষ্ট বলা আছে, কে নাগরিক হতে পারেন, কী ভাবে নাগরিকত্ব অর্জন করা যেতে পারে।” 

আরও পড়ুন:- BSF-এ কনস্টেবল পদে প্রচুর নিয়োগ চলছে, কী যোগ্যতা-কীভাবে আবেদন করবেন ? পুরো তথ্য জানুন

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন হিসাবে কারা ভারতীয় নাগরিক?

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়

  • জন্মসুত্রে – ব্যক্তি ভারতে জন্ম এবং জন্মের সময় বাবা ও মা দুজনেই ভারতীয় নাগরিক
  • বংশসুত্রে – যদি কোনো ব্যক্তি ভারতের বাইরে জন্মগ্রহণ করেন কিন্তু তার পিতা-মাতা উভয়ই বা তাদের মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিক হন
  • নিবন্ধনের মাধ্যমে – বিবাহ সুত্রে এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়া ব্যক্তি নিবন্ধনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেতে পারেন
  • স্বাভাবিকরনের মাধ্যমে – নির্দিষ্ট সময় ধরে ভারতে বসবাস করলে, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করা যায়।
  • নতুন সংশোধনী – উদ্বাস্তু, শরণার্থী হিসাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়া যায়, তবে তাঁর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আবেদন করতে হবে

শুধু আধার কার্ড থাকলে SIR এ নাম থাকবে?

বিহারে যে ১৬টি নথি দেখাতে বলা হয়েছে, তাঁর বেশির ভাগই ২০০২ সালের আগে হতে হবে। অর্থাৎ ২০০২ এর আগের ভোটার কার্ড, বা ১৯৮৭ সালের আগের দলিল বা অন্য নথি লাগবে, অথবা পাসপোর্ট লাগবে। আর এই কারনেই নাকি বিহারে অনেকের নাম বাদ গেছে। তবে বিহার নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত সেই ৬৫ লাখ নামের তালিকা প্রকাশ করেনি, এবং নাম কাটা যাওয়ার কারণ ও জানায়নি। এবং সুপ্রিম কোর্ট শীঘ্রই তালিকা প্রকাশ ও নাম কাটা যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে আদালত এই নির্দেশ ও দিয়েছে যাদের নাম কাটা গেছে তারা আধার কার্ড দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।

তবে কি আধার কার্ড থাকলেই তিনি নাগরিক?

ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধন বা SIR প্রক্রিয়ায় নাম কাটা গেলে আধার কার্ড দিয়ে আবেদন করা যাবে। আর এতেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি আধার কার্ড থাকলে নাগরিকত্বের প্রামান্য নথি হিসাবে কাজ করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে আদালত জানিয়েছে, আধার কার্ড দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন কর‍তে পারবেন, পরিচয় বা বাসস্থানের প্রমাণ হিসাবে। নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে নয়।

বেআইনিভাবে নাম কাটলে কড়া ব্যবস্থা

বিহারে SIR বা বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনীর মাধ্যমে তালিকা থেকে বেআইনি ভাবে বহু মানুষের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। উক্ত মামলার শুনানিতে আদালত জানিয়েছে, বেআইনি ভাবে তালিকা থেকে নাম বাদ দিলে বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর নাম কাটা গেলে সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ ও করতে হবে।

 

বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা সংশোধনীর তুলনা

বিহারে ৬৫ লাখ নাম বাদ গেছে। পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যাটি আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবং গত ৩ মাসে ২২ লাখ নাম ইতিমধ্যেই বাদ দেওয়া হয়েছে, বলে গতকাল জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। তিনি জানান, গত কয়েক মাসেই সামনে এসেছে প্রচুর ভুয়ো ভোটার। একই ব্যক্তির একাধিক ভোটার কার্ড থেকে শুরু করে মৃত ব্যক্তির ভোটার কার্ড তালিকায় নাম রয়েছে। পরিবারের লোক না জানালে BLO এর দ্বারা সম্ভব হয়না, কোনও ব্যাক্তি মারা গেছেন। এগুলো ভেরিফাই করে এবার সেই নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।

এই জন্য একসাথে এতো নাম বাদ যাচ্ছে। বাইশ লাখের মৃত্যু গত মাসে একবারে হয়নি। বেশ কয়েক বছর ধরে তালিকায় নাম থাকা মৃত ব্যক্তিদের একসাথে বাদ দেওয়া হয়েছে। ২০০২ সালের পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা সংশোধনে ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ ভোটারের মধ্যে প্রায় ২৮ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছিলো। এবার ও সেইরকম প্রক্রিয়াতে বহু নাম বাদ যাবে।

পশ্চিমবঙ্গে কবে শুরু হবে ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধন SIR?

ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধন নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India). BLO দের ট্রেনিং, তাদের ভাতা ও সমস্ত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে আদালতে একাধিক মামলা হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে কবে শুরু হবে West Bengal Special Intensive Revision 2025? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে খোদ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। সারা দেশ জুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধন হওয়া নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে গতকাল রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কবে পশ্চিমবঙ্গে (SIR) হবে, বা কবে দেশের অন্য রাজ্যে (SIR) হবে, সঠিক সময়ে তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।’ অর্থাৎ আদালত ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেই কার্যত বোঝাতে চাইলেন তিনি।

Smart Citizenship Card

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আধারকে আসন্ন জনগণনায় এবং ভোটার তালিকা সংশোধনীতে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হবে না। ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড বা প্যান কার্ডও এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। অনেক নাগরিকের কাছে জন্ম বা জাতীয়তার প্রমাণপত্র না থাকায় পরিচয় যাচাইয়ে সমস্যা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই সমস্যার সমাধানে ‘স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড’ নামে একটি অত্যাধুনিক পরিচয়পত্র চালু করতে চলেছে। এই কার্ডটি (Smart Citizenship Card) ভারতীয় নাগরিকত্বের একমাত্র এবং চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। উন্নত প্রযুক্তির এই নথি জালিয়াতি রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এটি নাগরিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছ পরিচয় ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।

 

উপসংহার

একদিকে নাগরিকত্ব হারানোর ভয়, অন্যদিকে ভোটের তালিকা থেকে নাম কাটার ভয়। এই দুইয়ে গ্রাস করছে পশ্চিমবঙ্গের একাংশ মানুষকে। কারণ অনেকের কাছেই নাকি ১৯৮৭ এর আগের নথি নেই বা ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই। একদিকে রাজ্যের শাসক দল রাজ্যের একজনের নাম কাটলে মেনে নেওয়া হবে না বলে, সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। অন্যদিকে অনুপ্রবেশ রুখে দেশের মানুষকে তাদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়ার শপথ করেছে কেন্দ্রীয় শাসক দল। আবার নতুন নাগরিকত্ব কার্ড চালু করে ভারতের নাগরিক হওয়া নিয়ে সমস্ত বিতর্কের অবসান ঘটার ও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এবার কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ ই বলবে।

আরও পড়ুন:- দেশে বিপদের মুখে মধ্যবিত্তরা, বিশেষজ্ঞরা কেন এমন আশংকা করছেন ? জানুন

আরও পড়ুন:- ‘প্রমাণ দিন, না হলে ক্ষমা চান’, রাহুলকে ৭ দিন সময় কমিশনের

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন