আলুর মতো পেঁয়াজ উৎপাদনেও স্বনির্ভর হতে পারে রাজ্য, কী কী করণীয়?

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- রাজ্য়ে পেঁয়াজ চাষে শীর্ষে রয়েছে হুগলি ও মুর্শিদাবাদ জেলা ৷ তবে অন্য রাজ্যের তুলনায় এই পেঁয়াজ চাষের পরিমাণ অনেকটাই কম । তাই বাংলাকে পেঁয়াজের জন্য নির্ভর করতে হয় বেশিরভাগটাই অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যের উপর ৷ কিন্তু রাজ্যে পেঁয়াজ চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে ৷ যদি পেঁয়াজ চাষ বাড়ানো যায় এবং সঙ্গে বৃদ্ধি করা হয় স্টোরেজ ব্যবস্থা, তাহলে আলুর মতোই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে পশ্চিমবঙ্গ । পেঁয়াজ যোগানের ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজ্যের উপর থেকে কমবে অনেকটাই নির্ভরতা ।

রাজ্যে শীতকালে পেঁয়াজ চাষ হয় ৷ জানুয়ারি মাসে চাষ করা পেঁয়াজ তোলা হয় মার্চের শেষের দিকে ৷ এই উৎপাদনের উপর রাজ্যে 2 মাস থেকে আড়াই মাস চলে । বাকি পুরোটাই নির্ভর করতে হয় অন্যান্য রাজ্যের পেঁয়াজ আমদানির উপর । হুগলি জেলায় বলাগড় ও পোলবা-সহ সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয় । মুর্শিদাবাদ জেলায় 12 হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয় । এছাড়াও মালদা ও জলপাইগুড়ি-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় পেঁয়াজ চাষ হয় । কিন্তু যে পরিমাণ পেঁয়াজ চাষ হয়, তাতে 20 শতাংশ রাজ্যে যোগান দেওয়া সম্ভব ।

আরও পড়ুন:- মাসে 31,000 টাকা বেতনে কলকাতা এয়ারপোর্টে নতুন কর্মী নিয়োগ। শীঘ্রই আবেদন করুন

রাজ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ চাষের জন্য কী কী করণীয়?

ভিনরাজ্যের মতো এই রাজ্যে শীতকালীন ও বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ করতে হবে । তবেই অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যের নির্ভরতা কাটানো সম্ভব । বাংলার বিভিন্ন জেলায় পেঁয়াজ ঘর ও স্টোরেজ করা হচ্ছে । আরও বেসরকারিভাবেও সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে ।

মুর্শিদাবাদ জেলার উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক প্রিয়রঞ্জন ষন্নিগ্রহী বলেন, “মুর্শিদাবাদে পেঁয়াজের বেশি ফলন হয় । সংরক্ষণের জন্য 25 মেট্রিক টনের 101টি পেঁয়াজ ঘর দেওয়া হয়েছে । এই চাষের এলাকা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে । কিন্ত যেই জায়গায় পেঁয়াজ চাষের পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও হয় না, সেই জায়গায় চাষ বাড়তে হবে ।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের রাজ্যে পেঁয়াজ চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে । উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়িতে ও দক্ষিণবঙ্গে পেঁয়াজ চাষ হবে । রাজ্যে আলুর উৎপাদন বেশি হয় বলে হিমঘরগুলি হয়েছে । আলুর মতো পেঁয়াজের স্টোরেজ নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে । তাহলে এই ফসল সংরক্ষণ সম্ভব । তবে পেঁয়াজের চাষ ও উৎপাদন বাড়ানো আবশ্যক ।”

onion cultivation

পেঁয়াজ রফতানিতে পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ

 

হুগলি জেলার উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক শুভদীপ নাথ বলেন, “মহারাষ্ট্রে যেমন শীতকালীন ও বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়, তেমনই বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দিতে হবে রাজ্যে । হুগলি জেলাতেও বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ সফল এবং ফলনও বেশি ৷ চাষিরা দামও পাচ্ছেন । কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে চাষ আরও বাড়াতে হবে । সেই সঙ্গে বড় সংরক্ষণের চেয়েও ছোট ছোট সংরক্ষণের স্টোর বাড়াতে হবে । বর্তমানে যা সংরক্ষণের পরিমাণ রয়েছে । তার চেয়ে তিনগুণ পরিমাণ বাড়াতে হবে । তাহলেই পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে ।”

তাঁর কথায়, “হুগলি জেলাতে আলুর প্রচার প্রসারের মূল কারণ হিমঘরে রেখে দাম বাড়লে বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হন । পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও কৃষকরা লাভবান হতে পারেন । আলুর হিমঘর তৈরি করতে বিরাট অংশের অর্থের প্রয়োজন হয় । পেঁয়াজ সংরক্ষণের খরচ তার থেকে কম । বড় কৃষকরা এগিয়ে এলে পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুবিধা হবে ।”

 

ব্যবসায়ীদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে খুব কম পরিমাণ পেঁয়াজ রফতানি করা হয় ৷ বিহার, অসম-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই পেঁয়াজ যায় ৷ তাও সেটা পেঁয়াজ ফলন ও দামের উপর নির্ভর করে ৷ দাম কম ও ফলন বেশি থাকলে রফতানি বেশি হয় ৷ অন্যদিকে, 70 শতাংশ পেঁয়াজ ভিন রাজ্য থেকে আমদানি করা হয় বাংলার ছোট থেকে বড় 60টি বাজারে । মহারাষ্ট্র ,অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ অন্য রাজ্য থেকে 150টিরও বেশি ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয় প্রতিদিন । একটি ট্রাকে করে 25 থেকে 30 টন পেঁয়াজ আসে ৷ গড়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন রাজ্যে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ।

দেখে নিন কোন জেলায় পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ কত ?

  • জলপাইগুড়ি ,কোচবিহার-সহ একাধিক বাজারে 11 ট্রাক ।
  • দার্জিলিংয়ের শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে 15 ট্রাক ।
  • মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, খাগড়া, বেলডাঙা, ঝুলিয়ান-সহ বাজারগুলিতে 13 ট্রাক ৷
  • মালদার বাজারগুলিতে 4 ট্রাক ৷
  • পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জ, আসানসোল, নিয়ামতপুর, বরাকর-সহ বাজারগুলিতে 20 ট্রাক ।
  • পশ্চিম মেদিনীপুরের গোলবাজার-সহ বাজারগুলিতে মোট 18 ট্রাক ।
  • হুগলির পাণ্ডুয়া ও শেওড়াফুলি বাজারে 8 ট্রাক ।
  • হাওড়া জেলার আমতলা, ধূলাগড় বাজারে 10 ট্রাক ।
  • পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহর, গুসকরা, মেমারি, ধাত্রীগ্রাম-সহ বাজারগুলিতে 9 ট্রাক ।
  • বাঁকুড়া জেলায় 3 ট্রাক ।
  • বীরভূম জেলার বোলপুর, সাঁইথিয়া, নলহাটি, রাজগ্রাম-সহ বাজারগুলিতে 12 ট্রাক ।
  • কলকাতার মধ্যে শিয়ালদা, পোস্তা, শ্যামবাজার, দমদম ও নাগেরবাজারে 25 ট্রাক ।
  • উত্তর 24 পরগনার খড়দা, টিটাগড়, কাঁকিনাড়া, শ্যামনগর,চাকদা, বারাসত, বসিরহাটের বাজারগুলিতে 20 ট্রাক ৷

এর মধ্যে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ট্রাকের সংখ্যা কম বেশি হয় বিভিন্ন সময়ে । আগে শেওড়াফুলি বাজার থেকেই হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, কলকাতা, হাওড়া, উত্তর 24 পরগনার বাজারগুলিতে পেঁয়াজ যেত । শেওড়াফুলি বাজারের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী বিনোদকুমার ভকত বলেন, “গোটা রাজ্যে মহারাষ্ট্র, অন্ধপ্রদেশ থেকে প্রায় দেড়শো ট্রাক (25 টন) পেঁয়াজ আমদানি হয় । আর আমাদের রাজ্যে যা পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দু’মাস চাহিদা মেটে ৷ আলুর মতো পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না সেভাবে ৷ প্রতিটা ফসলের আলাদা আলাদা মেয়াদ রয়েছে ৷ পেঁয়াজ পাঁচ থেকে ছয় মাসের বেশি রাখা যায় না ।”

তাঁর কথায়, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মাঝে মধ্যে চাষিদের সমস্যায় পড়তে হয় । যেবছর ভালো পেঁয়াজ চাষ হয় সেসময় দাম পাওয়া যায় । তার মধ্যে যদি নাসিকের পেঁয়াজের আমদানি বেশি হয়, তাহলে সেবারে দাম কম থাকে । যদি এই রাজ্য থেকে বিহার অসম-সহ বিভিন্ন রাজ্যে পেঁয়াঁজ যায় তাহলেও দাম বাড়ে ।”

এবিষয়ে বলাগড়ের চাষি স্বপন সরকার বলেন, “এবছর আবহাওয়ার ভালো থাকার কারণে পেঁয়াজ চাষ ভালো হয়েছে ৷ দামও পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই ৷ তবে গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে পেঁয়াজে লোকসান হয়েছে চাষের প্রতি আমাদের অনীহা তৈরি হয়েছে ৷ বহু চাষি পেঁয়াজ চাষ সেরে সরষে, গম-সহ ফসল চাষ করছেন । আলুর মতো পেঁয়াজের স্টোরেজ ব্যবস্থা নেই । একমাসের মতো বাড়িতে পেঁয়াজ রাখা যাবে ।”

আরও পড়ুন:- বদলে যাচ্ছে UPI পেমেন্টে টাকা লেনদেনের পদ্ধতি, বিস্তারিত জেনে নিন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন