উত্তরবঙ্গের কালো মাছি নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণা জেডএসআই’র, বিস্তারিত জানুন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

 

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ‘রিভার ব্লাইন্ডনেস’- কাব্যিক শব্দ হলেও, ভয়ঙ্কর এই রোগের নেপথ্যে রয়েছে রক্তচোষা কালো মাছি ৷ দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের মতো উত্তরবঙ্গের অনেক নৈসর্গিক স্থানে পাহাড়ি নদীগুলি রক্তচোষা মাছির প্রজনন ঘটাতে সাহায্য করে ৷ এই রক্তচোষা মাছি মানুষের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারে ৷ আঞ্চলিক ভাষায় এরা ‘পিপসা’ বা ‘পোটু’ মাছি নামে পরিচিত ৷

এই কালো মাছিগুলি সম্প্রতি জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (জেডএসআই) ডিপ্টেরা বিভাগের বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ সম্প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত গবেষণাপত্র ‘ভেক্টর-বর্ন অ্যান্ড জুনোটিক ডিজিজেস’-এ এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ৷

অন্ধত্বের প্রধান কারণ ট্রাকোমা সংক্রমণ ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, রিভার ব্লাইন্ডনেস গ্রীষ্মপ্রধান রোগগুলির মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত ৷ এটি একটি নির্দিষ্ট ধরণের জীবাণুর থেকে হয় ৷ যা অনকোসেরসা ভলভলাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে ৷

River Blindness

উত্তরবঙ্গের কালো মাছি নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণা জেডএসআইয়ের ৷ (ছবি- জেডএসআই)

কালো মাছি এই জীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে ৷ এই মাছি যখন মানুষকে কামড়ায়, তখন মাছির থেকে জীবাণুটি মানবদেহে প্রবেশ করে ৷ প্রথম ক্ষেত্রে, জীবাণুগুলি ত্বকের নীচে নডুল বা ক্ষুদ্র স্ফিতীর আকার গঠন করে ৷ তারা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত প্রবাহের মধ্য দিয়ে চোখে প্রবেশ করে ৷ যার শেষ পরিণাম হয় অন্ধত্ব ৷ এই রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করার প্রথম পদক্ষেপটি হল সঠিকভাবে মাছি অর্থাৎ, কালো মাছি শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা ৷ অতএব, উন্নত চিকিৎসার জন্য এই রোগের বাহককে আরও ভালোভাবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন ৷

আরও পড়ুন:- AC লাগবে না! মাত্র 500 টাকাতেই ঘর ঠান্ডা হবে। সিক্রেট জেনে নিন

 

জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধিকর্তা গবেষক ধৃতী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিমুলিডে পরিবারের এই কালো মাছিগুলি অত্যন্ত ছোট ৷ এদের খালি চোখে খুব কমই লক্ষ্য করা যায় ৷ অনেক সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাছিগুলি রক্ত চুষে নেয় ৷ বৈজ্ঞানিক ভাষায়, বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সিমুলিডে মাছির দু’টি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে পার্থক্য করা বেশ কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ ৷ অনেক সময় সঠিক প্রজাতি শনাক্তকরণও সম্ভব হয় না ৷ এই কারণে, ডিপ্টেরা বিভাগের গবেষকরা চিহ্নিতকরণের উপায় হিসাবে এই মাছির ডিএনএ ব্যবহার করেছেন ৷ মাছি চিহ্নিত করার জন্য যে পদ্ধতিটি অবলম্বন করা হয়, তাকে ডিএনএ বারকোডিং বলা হয়ে থাকে ৷”

ZSI-এর ডিপ্টেরা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ও বিজ্ঞানী অতনু নস্কর জানালেন, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার আটটি স্থানে তাঁরা গবেষণা চালিয়েছেন ৷ এই আটটি স্থান থেকে কালো মাছির নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক পৃথকীকরণের পরে, প্রজাতিগুলি চিহ্নিত করতে ডিএনএ বারকোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ৷

 

জেডএসআইয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং ব্ল্যাক ফ্লাই গবেষণার সঙ্গে জড়িত গবেষকদের একজন অর্ক মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রথমে নমুনা হিসেবে কালো মাছির পা থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয় ৷ তারপরে সেই ডিএনএ বারকোড করা হয় ৷ আমরা মাছির প্রজাতি নির্ধারণের জন্য মাইটোকন্ড্রিয়াল সাইটোক্রোম সি অক্সিডেসের সাব ইউনিট সি ওয়ান জিন সিকোয়েন্স-ও ব্যবহার করেছিলাম ৷ এই প্রক্রিয়াটি সহজেই চারটি প্রজাতির কালো মাছিকে আলাদা করেছে ৷ এভাবে- সিমুলিয়াম ডেন্টাটাম, সিমুলিয়াম ডিজিটাটাম, সিমুলিয়াম প্রেলারগাম এবং সিমুলিয়াম সেনাইল নামে চারটি কালো মাছির প্রজাতিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে ৷”

গবেষক ধৃতী বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “দার্জিলিং হোক বা কালিম্পং, পর্যটন মানচিত্রে দু’টি জায়গাই বাঙালিদের কাছে খুব প্রিয় ৷ সারা বছরই এসব স্থানে প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসেন । পর্যটকরা নিজেদের অজান্তেই আনন্দ করতে গিয়ে এই রক্তচোষা মাছির কামড় খেতে পারেন ৷ যদিও ওখানকার স্থানীয়রা এই ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ৷ তবে, অন্ধত্বের ঝুঁকি উদ্বেগের বিষয় হিসাবে রয়েই যায় ৷

আরও পড়ুন:- আপনার কি চোখের সমস্যা আছে? কি কি লক্ষণ থাকলে সতর্ক হবেন? জানুন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন