Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বায়ুদূষণ ঠেকাতে দিল্লির পথে হাঁটলেও সেই কলকাতায় কেটে ফেলা হচ্ছে একের পর এক প্রকাণ্ড গাছ । একটা দুটো নয়, কমপক্ষে কাটা হয়েছে 57 থেকে 60টি এমন বড় গাছ । এই ঘটনাটি ঘটেছে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের অভিষিক্তায় । আর এই কর্মকাণ্ডে অভিযোগ খোদ কলকাতা পুরনিগমের বিরুদ্ধে । তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে সামিল হলেন পরিবেশকর্মীরা ৷
পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি করতে হবে বুস্টিং পাম্পিং স্টেশন ৷ আর তার জেরেই কোপ পড়েছে এতগুলি গাছে ৷ কেন্দ্রের রিপোর্টে চোখ রাইলেই কলকাতায় শহুরে বনায়নের বেহাল অবস্থা দেখে যেকোনও পরিবেশপ্রেমী বা সচেতন মানুষ শিউরে উঠবেন । তার উপর উন্নয়নের কোপে এবার বাইপাস লাগোয়া এলাকায় 57 থেকে 60টি গাছ ।
ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের অভিষিক্তায় গাছগুলি কাটা হয়েছে
কার্যত এই ঘটনায় বাকরুদ্ধ পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা । গাছ কাটা নয়, খুন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা । আর এই ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি চেয়ে শনিবার বিক্ষোভ দেখালেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা । সবুজ মঞ্চের নেতৃত্বে এদিন বিক্ষোভ দেখানো হয় শহরে । সেই বিক্ষোভ সামিল হয় 8 বছরের দেবত্রী সরকার থেকে 80 বছরের বৃদ্ধা ।
বিক্ষোভকারীদের দাবি একটাই, দোষীদের শাস্তি চাই । গাছ কাটা বন্ধের জন্য মেয়র ফিরহাদ হাকিমের উদ্দেশ্যে কাতর আর্জি করলেন ছোট্ট দেবত্রী সরকার । সাম্প্রতিক সময় একাধিকবার পরিবেশ রক্ষায় গাছের যত্ন ও গাছ রক্ষার পক্ষে একাধিক ভাষণ শোনা গিয়েছে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের গলায় । তবে তাঁর কলকাতা পুরনিগমই একের পর এক বড় গাছ কেটে ফেলছে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে ৷ তাতে তাজ্জব সাধারণ মানুষ ।
106 নম্বর ওয়ার্ডে তৈরি হবে পানীয় জল সংকট সমাধানের লক্ষ্যে বস্টিং পাম্পিং স্টেশন । সেই টাকা ও পরিকল্পনা অনুমোদন হয়েছে পুরনিগমের জল সরবরাহ বিভাগের তরফে । সেই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে এলাকায় স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অরিজিৎ দাস ঠাকুরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টাঙানো হয়েছে বড় বড় হোর্ডিং । আর সেই উন্নয়নের বলি হয়েছে এই বিরাট সংখ্যক বড় গাছ ।
এই গাছ কাটা প্রসঙ্গে অবশ্য কোনোরকম রাখঢাক না করেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এলাকার কাউন্সিলর অরিজিৎ দাস ঠাকুর । তিনি সাফ বলেন, “এলাকায় দীর্ঘদিনের পানীয় জলের কষ্ট আছে ৷ সেই কষ্ট সমাধানের জন্য লাগাতার লড়াই করে শেষমেষ কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের তরফে এই এলাকার মানুষজনের জন্য একটি বুস্টিং পাম্পিং সেন্টার তৈরির অনুমোদন মিলেছে । মেয়র পরিষদ বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পরেই এলাকা পরিদর্শন করে যান কলকাতা পুরনিগমের আধিকারিকরা । এই গাছগুলি কাটা হলেও তার পরিবর্তে আরও বহু গাছ লাগানো হচ্ছে, যাতে কোনও ধরনের পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে ।”
আরও পড়ুন:- কমার্স নিয়ে পড়লে আপনার জন্য রইল ৫ দুর্দান্ত কেরিয়ার অপশন,
তাঁর কথায়, “এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড যারা আটকাতে চাইছে, তারা গুটিকতক বাম ও বিজেপি মনোভাবাপন্ন লোকজন ৷ তাদেরকে আমি ধিক্কার জানাই । এটা আমি কোনও ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ করছি না ৷ এটা এলাকার বৃহত্তর মানুষজনের স্বার্থেই কাজ হচ্ছে ৷ ফলে ইচ্ছাকৃতভাবেই কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে আমাকে ।
পরিবেশ বাঁচাও সংগঠন সবুজ মঞ্চের নেতৃত্ব নব দত্ত এই গাছ কাটার তীব্র বিরোধিতা করে মেয়রের কাছে চিঠি দিয়ে সময় চেয়েছেন । শুধু সময় নয়, এই গাছ কাটা নিয়ে যাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেই দাবিও করেছেন তিনি ।
বড় গাছ কাটার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামিল পরিবেশ কর্মীরা
পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী দেবাশিস চক্রবর্তীর কথায়, “যেভাবে বড় গাছগুলি কাটা হয়েছে এই গাছগুলি রীতিমতো বাতাসকে পরিশোধিত করে । সেই গাছ কেটে ফেলায় অক্সিজেন তৈরি বা বাতাসের ধূলিকণাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে অনেকটাই বেগ পেতে হবে সেই এলাকায় । খুব স্বাভাবিকভাবেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এলাকার জনগণের স্বাস্থ্যের উপর ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কাউন্সিলর যে বিকল্প চারা গাছের কথা বলেছে বৃক্ষরোপণ করা হবে বলে পোস্টার হোডিং লাগাচ্ছে, এটা অনেকটা বাবার একাধিক সন্তান হওয়ার পর বাবাকে মেরে ফেলার মতো ঘটনা । যে গাছগুলি কেটে ফেলা হয়েছে পরিবেশে তাদের যে কন্ট্রিবিউশন ছিল, তা শিশু গাছ দীর্ঘ বছর বাদে গিয়ে দিতে পারবে । সেই কার্যকারিতায় পৌঁছতে পারবে ।” রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক তারকনাথ সরকার বলেন, “আমি এই ঘটনায় ব্যথিত হয়েছি । তাই আজ আমি এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছি ।”
আরও পড়ুন:- কৃষক বন্ধুদের ডিজিটাল কৃষক আইডি কার্ড চালু হলো। কার্ড করলেই পাবেন ৬০০০ টাকা। কিভাবে আবেদন করবেন?
আরও পড়ুন:- নয়া করোনাভাইরাসের হদিশ, কতটা বিপজ্জনক? জানতে বিস্তারিত দেখুন