কলকাতা হাইকোর্ট মুর্শিদাবাদ হিংসার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে বিলম্ব হওয়ায় রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। আদালত রাজ্যের এই গড়িমসি মনোভাবের সঙ্গে দুর্গাপূজার অনুদান দেওয়ার তড়িঘড়ির তুলনা করে প্রশ্ন তুলেছে, যা রাজ্য সরকারের অগ্রাধিকার নিয়ে গভীর প্রশ্ন তৈরি করেছে। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় রাজ্যের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
বিস্তারিত ঘটনা এবং আদালতের পর্যবেক্ষণ
ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বহু মানুষের সম্পত্তি নষ্ট হয় এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও পর্যন্ত কোনো সরকারি সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ পাননি। এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছে।
আদালতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো:
- ক্ষতিপূরণে বিলম্ব কেন?: আদালত প্রশ্ন তুলেছে, কেন হিংসার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে এত দেরি হচ্ছে? রাজ্যের আইনজীবী জানান যে, ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। উত্তরে বিচারপতিরা বলেন, “দুর্গাপূজার জন্য ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার সময় তো এত দেরি হয় না, তাহলে হিংসার শিকার মানুষদের সাহায্য করতে এত গড়িমসি কেন?”
- রাজ্যের অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন: হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, উৎসবের জন্য অনুদান দেওয়া যদি সম্ভব হয়, তবে হিংসায় সর্বস্বান্ত হওয়া মানুষদের পুনর্বাসন দেওয়া আরও বেশি জরুরি।
- NIA-এর ভূমিকা: আদালত এই ঘটনায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA)-এর নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। পূর্ববর্তী নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও NIA কেন সক্রিয়ভাবে তদন্ত চালাচ্ছে না, তা নিয়েও আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে।
রাজ্যের জবাব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছে এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের পরেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে আদালত এই উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। হাইকোর্ট তার অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ বজায় রেখেছে এবং রাজ্যকে এই বিষয়ে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২০ নভেম্বর।
এই ঘটনাটি রাজ্যের প্রশাসনিক দক্ষতা এবং হিংসার ঘটনা মোকাবেলায় তার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি এখনও বিচারের আশায় দিন গুনছে এবং আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।