এই বাংলাদেশি সুন্দরীকে ঘিরে এত বিতর্ক কেন? কে এই মেঘনা? জানুন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

 

 

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বাংলাদেশের আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার করে ৩০ দিনের কারাদণ্ডে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বুধবার গভীর রাতে তাঁর ঢাকার বাড়িতে হানা দেয় এবং তাঁকে গ্রেফতার করে। সেই সময় তিনি ফেসবুক লাইভে ছিলেন এবং নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করছিলেন।

ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, পুলিশ পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি ঘরে ঢোকার সময় মেঘনা ক্যামেরার সামনে বারবার বলেন, ‘আমি নির্দোষ, আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে!’ কিন্তু মাত্র ১২ মিনিটের মাথায় সেই ভিডিও আচমকাই শেষ হয়ে যায়। এই ঘটনার পরপরই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং জনমনে প্রবল প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলি সূত্রে জানা যাচ্ছে, মেঘনা আলমকে কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও পুলিশ সূত্র বলছে, তাঁর কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু রাষ্ট্র—সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সে কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ প্রয়োগ করা হয়েছে।
এই ঘটনার মূল সূত্রপাত হয় মেঘনার একাধিক ফেসবুক পোস্ট ঘিরে, যেখানে তিনি দাবি করেছিলেন, তিনি একজন বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলেন। ‘ডেলি স্টার’-এর বরাতে জানা গেছে, ওই কূটনীতিক সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। মেঘনার বাবা বদরুল আলম বলেন, “আমার মেয়ে ও ওই রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পরে মেঘনা জানতে পারে, তিনি বিবাহিত এবং তাঁর সন্তানও রয়েছে। এরপর সে সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।”
বদরুল আলম আরও দাবি করেন, ‘আমার মেয়ে ওই কূটনীতিকের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিল, এবং এরপরই রাষ্ট্রদূত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার পরের দিনই আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।’
শুরুতে অনেকেই দাবি করেন, মেঘনাকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে। তবে ডিবি পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা পরে জানিয়েছেন, ‘এটি গ্রেফতার ছিল, অপহরণ নয়। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে।’

তবে বিতর্ক থেমে থাকেনি। মেঘনার গ্রেফতার ঘিরে তীব্র সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক মাধ্যমে। মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করেন, শুধুমাত্র একজন নারীর ব্যক্তিগত সম্পর্কের জন্য তাঁকে এমনভাবে আটকানো নিছক ক্ষমতার অপব্যবহার। চাপের মুখে সেই ডিবি কর্মকর্তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

গ্রেফতারের পরদিনই মেঘনাকে ঢাকার একটি আদালতে তোলা হয়। আদালত তাঁকে ৩০ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। যদিও তাঁর আইনজীবীরা বলেছেন, তাঁরা এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আইনি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বিশিষ্ট আইনজীবী আসিফ নজরুলও সাংবাদিক সম্মেলনে স্বীকার করেন, ‘মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার করাটা ভুল ছিল।’ তাঁর এই বক্তব্য নতুন করে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বাংলাদেশের এই ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ বহুদিন ধরেই বিতর্কিত। এই আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রবিরোধী কাজের আশঙ্কা থাকলেই কাউকে বিনা অভিযোগে গ্রেফতার করে দীর্ঘ সময় জেল হেফাজতে রাখা যায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলি বহু বছর ধরে এই আইনের অপব্যবহার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে।

ঘটনার পরপরই বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় #FreeMeghna ট্রেন্ড করতে থাকে। একাধিক নেটিজেন ও তারকারা মেঘনার পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হন। অনেকে বলেন, ‘মেঘনার একটাই অপরাধ—সে একজন নারী এবং সে একজন প্রভাবশালী বিদেশি ব্যক্তিকে না বলেছিল।’

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন