এনটিপিসি কীভাবে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে সাহায্য করতে পারে ? জানতে বিস্তারিত পড়ুন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পরিবেশকে রক্ষা করতে নয়া উদ্যোগ নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। ঠিক হয়েছে, এখন থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলি কাঠ বা ওই ধরনের পদার্থ থেকে নিগর্ত তেল ব্যবহার করবে। আপাতত 5 শতাংশ হলেও 2025-2026 অর্থবর্ষের মধ্যেই এই পরিমাণ বাড়িয়ে 7 শতাংশ করা হবে। এখন ভারতে সক্রিয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা 53 । এই সংখ্য়া আরও বাড়ছে।

আর এখান থেকেই পরিবেশ বান্ধব শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আবার এই পদক্ষেপ থেকেই কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ হওয়ার রাস্তাও খুলতে পারে। কাঠ বা ওই ধরনের পদার্থ থেকে নিগর্ত থেকে পরিভাষায় বলা হয় বায়োমাস পেলেটস। আর শুধু কাঠ নয়, কৃষিজ বর্জ্য থেকেও এই ধরনের তেল তৈরি হতে পারে।

Doubling Farmers Income Mission

ফসলের অংশ পোড়ানোর কাজে কৃষক

বর্তমানে দেশে এই প্রবণতা বাড়তে শুরু করেছে। শুধু দাদরিতে এনটিপিসি 219,000 টন বায়োম্যাস পেলেটস তৈরির বরাত দিয়েছে। আর এটাও মাথায় রাখতে হবে এই বিরাট পরিমাণ বায়োমাস পেলেটস শুধুমাত্র একটি কেন্দ্রের প্রয়োজনে লাগবে। উত্তরপ্রদেশে মেজা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র 2024 সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এক লক্ষ টন বায়োমাস পেলেটসের বরাত দিয়েছে। 53টি তাপবিদ্যুৎয়ের হাত ধরে এই চাহিদা শুধু বাড়বে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বায়োমাস পেলেটসের ব্যবহার আরও বাড়িয়ে 15 শতাংশ করতে চায় সরকার। তার অবশ্য একটা বিশেষ কারণ আছে। সারা পৃথিবীতে পরিবেশ নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা অনেক দিন ধরেই ভারতের উপর চাপ বাড়িয়ে আসছেন। তাঁদের বক্তব্য ভারতকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপর তৈরি হওয়া নির্ভরতা কমাতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্য উপায় খুঁজতে হবে। বায়োমাস নির্ভর বিদ্যৎ ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। বিশ্বের উন্নততম দেশগুলিও হাঁটছে এই পথেই। তারা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে বায়োমাসকে ব্য়বহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়েছে। এমনিতেই 2070 সালের মধ্যে গ্রিন হাউসের গ্যাসের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই এই ঘোষণা করেছেন।

আরও পড়ুন:- কালো জল: কেন ক্রমে বাড়ছে এর জনপ্রিয়তা ? জানতে বিস্তারিত পড়ুন

বায়োমাসের ব্যবহার শুধুই পরিবেশের দিক থেকে ভালো এমনটা ভাবার কারণ নেই। বায়োমাসের সঠিক ব্যবহার আমাদের কয়লা আমদানির পরিমাণও কমিয়ে দিতে পারে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজে আমাদের এই কয়লা বিদেশ থেকে আনাতে হয়। বায়োমাস সেদিক থেকে রেহাই দেবে তা বলাই যায়। তাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় হবে। যা অর্থনীতিকে অক্সিজেন দেবে। এই পদক্ষেপে শুধু যে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় হবে তাও নয়। বায়োমাসের ব্যবহারের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও জোয়ার আসবে। কর্মসংস্থান বাড়ানো বা অর্থনীতিকে মজবুত করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এনটিপিসি সেদিকেও নিজেদের ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। যেমন মেজা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোনও বিদেশি সংস্থাকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। সবটাই হয়েছে আঞ্চলিকভাবে। শুধু তাই নয়, এনটিপিসি এমনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাঁরা আগামিদিনে এই ধরনের কাজে করবেন বলে মনস্থির করেছেন তাঁরাও চাইলে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন। তার মানে এখনকার বাস্তবতা বলছে, বায়োমাস পেলেটসকে ঘিরে আগামিদিনে আরও বহু সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

কৃষকদের রোজগার দ্বিগুন করার লক্ষ্য

এনটিপিসি এখনও পর্যন্ত খুবই ভালো কাজ করেছে। তবে কৃষকদের দাবি-দাওয়াকে আরও বেশি করে প্রাধান্য দিয়ে নিজেদের নীতিতে পরিবর্তন ঘটাতে পারে তারা। এনটিপিসির আরও 53টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আরও বেশি পরিমাণে বায়োমাস পেলেটের প্রয়োজন হবে। তাছাড়া এই বিশেষ বিষয়টি মাথায় রেখেই ফিডার জোন তৈরি করতে হবে এনটিপিসিকে। একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল রসদ যেখান থেকে আসে তাকেই বলে ফিডার জোন। 50 থেকে 70 কিলোমিটার এলাকাডুড়ে এই জোন তৈরি হবে। ওই সমস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সামগ্রিকভাবে পরিবেশও এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে বায়োমাস পেলেট তৈরি করা সম্ভব হয়। তাছাড়া কোনও কোনও ক্ষেত্রে বায়োমাস পেলেটস তৈরির জন্য বেশ কিছু পরিবর্তনও করতে হয়।

একটি উদাহরণ দিয়ে সামগ্রিক বিষয়টি বোঝানো সম্ভব। ধরা যাক পঞ্জাবের সরকার সেখানে এই ধরনের কোনও একটি উদ্যোগ নিল। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ধানের অবশেষ দিয়ে তৈরি পেলেটসের উপর বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু এটাই যদি রাজস্থানে হয় তাহলে স্বভাবতই ধানের উপর নির্ভর করে থাকার কোনও কারণ নেই। তখন অন্য কোনও ফসলের কথা ভাবতে হবে। সেই বিকল্পের উপর ভিত্তি করেই পেলেটস উৎপাদন করতে হবে। এরপরের ধাপে বেশ কিছু কৃষককে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে হবে।

এভাবে এফপিও বা ফার্মার প্রডিউসার অর্গানাইজেশনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যেখানে এটা সম্ভব নয় সেখানে কৃষকদের নিয়ে ক্লাস্টার বা সমবায় তৈরি করতে হবে। এই ধরনের এফপিও তৈরিরর জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করেছে । সেই টাকা যাতে ঘুরপথে এনটিপিসি-কে নিজের কাজে সাহায্য করে তা নিশ্চিত করতে হবে। এনটিপিসি এই সমস্ত ক্লাস্টার থেকেই ধান থেকে শুরু করে বাঁশের মতো কাঁচামাল দেবে।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে বায়োমাস পেলেটস তৈরি সংক্রান্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে কয়েকটি জিনিস করতে হবে এনটিপিসিকে। তার মধ্যে একটি হল নিজেদের উৎপাদিত কাঁচামাল নিয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কৃষকদের আসতে দিতে হবে। তাছাড়া বায়োমাস উৎপাদন করতে যে কাঁচামাল লাগবে তার কমপক্ষে দশ শতাংশ কিনতে হবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে থাকা স্পেশাল ফিডার জোন থেকেই। ধীরে ধীরে এই পরিমাণ কমপক্ষে 50 শতাংশে নিয়ে যেতে হবে এনটিপিসিকে। আর তার জন্য স্থানীয় কৃষক থেকে শুরু করে কৃষি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে এনটিপিসিকে। তাতে কাঁচামালের জোগান কখনও বন্ধ হবে না।

কৃষিজাত পণ্য যেমন ধান সংরক্ষণ খুব সোজা কথা নয়। তার জন্য এফপিও মডেল খুব কার্যকর হতে পারে। এফপিও এবং কৃষকদেরও বায়োমাস পেলেটস উৎপাদনের জন্য ডাকা টেন্ডারের অংশ হতে দেওয়া উচিত। আগেই বলা হয়েছে, দশ শতাংশ কাঁচামাল স্থানীয়দের থেকেই সংগ্রহ করা দরকার। এটা এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ হতে চলেছে। নিজেদের 53টি কেন্দ্রে এই কাজ করতে পারলে আরও বেশ কিছু কাজের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারবে এনটিপিসি । তা হল ধান থেকে শুরু করে নেপিয়ার ঘাষের ক্ষেত্রে নূন্যতম সহায়ক মূল্যের ঘোষণা তারা করতে পারে । সেটা অবশ্য বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধির উপর নির্ভর করবে। তার উপর নির্ভর করে বছর বছর এই মূল্য বদলাবে। সরকার এবং এনটিপিসির এই সমস্ত পরামর্শ মন দিয়ে অনুধাবন করা উচিত। তাহলে বেশ কয়েকটি দিক থেকে উপকার হবে। এক, ভারতের কৃষিকাজের ধরনে বদল আসবে। কয়লার আধিক্য থাকা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অল্প সময়ের মধ্যেই এক অন্য পরিবেশ তৈরি হবে। তার চেয়েও বড় কথা কৃষকদের হাত ধরে ভারত এক পরিবেশ বান্ধব দেশ হওয়ার দিকে আরও খানিকটা এগিয়ে যেতে পারবে ।

আরও পড়ুন:- ক্রমশ মুখ ঢেকে যাচ্ছে নেকড়ার মত লোমে, কোন রোগের শিকার কিশোর ললিত ?

আরও পড়ুন:- বিদ্যুৎ দপ্তরে নতুন করে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! আবেদন পদ্ধতি সহ বিস্তারিত দেখেনিন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন