Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:-পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর সেনার পোশাক পরে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা ৷ সেনাবাহিনীর পোশাক পরে থাকায় কোনও পর্যটকই জঙ্গিদের উদ্দেশ্য প্রথমে বুঝতে পারেননি ৷ আর তাই দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় প্রাণ গিয়েছে 26 জনের ৷ এরপরই সেনার পোশাক পরা নিয়ে পুরনো নিয়মকে আরও কঠোরভাবে ফিরিয়ে আনা হল ৷ এই নিয়ম যাতে কোনওভাবেই অমান্য না-হয় তা নিশ্চিত করা হয়েছে সরকারি তরফে ৷
উল্লেখ্য, সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, সেনা জওয়ানরা আহত পর্যটকদের উদ্ধার করতে যাচ্ছেন। কিন্তু, তাঁদেরকেও ভয় পাচ্ছেন বৈসরনের পর্যটকরা। কারণ, খানিকক্ষণ এই ধরনের পোশাক পরা লোকেরাই হামলা চালায় ৷ এরপর যোগীরাজ্যেের প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে ৷ 2022 সালের সেনাবাহিনীর পোশাক পরা নিয়ে একটি নিয়ম চালু হয় ৷ সেই নিয়ম অনুসারে সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর পোশাক কিনতে পারবেন না ৷ এমনকী দোকানদাররাও সেনা বাহিনীর মতো দেখতে পোশাক বিক্রি করতে পারবেন না ৷
আরও পড়ুন:- গরমে ভিতর থেকে শরীর ঠান্ডা রাখে এই ৭ খাবার, জন্ডিস-ডায়রিয়া হয় না
উত্তরপ্রদেশের দোকানে দোকানে সাধারণ মানুষের জন্য জওয়ানের পোশাক বিক্রিও তাই বন্ধ ৷ পাশাপাশি, সেলাইয়ের জন্য দর্জির কাছে সেনা বাহিনীর ইউনিফর্মের মতো দেখতে পোশাক দেওয়ায় বন্ধ করা গিয়েছে ৷ পহেলগাঁও হামলার পর এই নিয়ম আরও কঠোর হল ৷ কেউ যদি এই নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তার জেল পর্যন্ত হতে পারে ৷
সেনাবাহিনীর পোশাকের কোড পরিবর্তন
উত্তরপ্রদেশের ক্যান্টনমেন্ট এলাকার দোকানদাররা জানিয়েছেন, আগে দোকানগুলিতে সেনাবাহিনীর পোশাক তৈরি করতে কাপড় বিক্রি হত। সেলাইয়ের জন্য ইউনিফর্মও দেওয়া হত ৷ কিন্তু এখন সরকার সেনাবাহিনীর পোশাকবিধি পরিবর্তন করেছে। বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে ইউনিফর্ম তৈরির কাপড়ের বিক্রিও বন্ধ ৷ এখন সেনাবাহিনীর তরফেই সরাসরি পোশাক সরবরাহ করা হয়। কিন্তু, যদি কেউ পুলিশ বা সেনাবাহিনীর পোশাক পরে আর অবৈধভাবে ঘোরাফেরা করে তাহলে তাকে জেলে যেতে হবে ৷
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পোশাক বিক্রি নিষিদ্ধ
এনিয়ে, দোকানদার জগদীশ রাঠোর বলেন, “কোনও ব্যক্তি সেনাবাহিনীর পোশাক পরতে পারবেন না ৷ বিক্রিও বারণ। ইউনিফর্মের কাপড় শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর দোকানেই পাওয়া যায়। আগে, মাত্র কয়েকজন দোকানদারকে সেনার পোশাক বিক্রির অনুমতি দেওয়া হত। শুধু তাই নয়, পোশাক বানাতে গেলে জওয়ানদেরও পরিচয়পত্র দেখাতে হত।”
ব্যবসায়ী বিনোদ কুমারেরও একইকথা ৷ তিনি বলেন, “এখন মোদি সরকার কাপড়ের একটি নতুন প্যাটার্ন এনেছে। বাজারে যেসব পোশাক দেখা যাচ্ছে, সেগুলো সাধারণ পোশাক। প্যাটার্নে পার্থক্য আছে। আগে বেল্ট উপরে থাকত। এখন বেল্ট পাতলা হতে শুরু করেছে। আগে শার্ট ভিতরে গুটিয়ে পরা হত, এখন তা উপরেই পরা হয় । পুরো কাঠামোটাই বদলে গিয়েছে। যে কোনও জায়গা থেকে নকল পোশাক তৈরি হতে পারে। পাকিস্তানেও হতে পারে। সে কথা মাথায় রেখেই এই পরিবর্তন ৷”
2022 সালে পোশাকের ধরন পরিবর্তন
2008 সালে সেনাবাহিনীর পোশাকে পরিবর্তন আসে। তারপরও বাহিনীর পোশাক গায়ে চাপিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছিল। এই বিষয়টি মাথায় রেখে, 2022 সালে মোদি সরকার সেনা বাহিনীর পোশাকের কোড পরিবর্তন করে। পাশাপাশি, বাজারে বিক্রিও নিষিদ্ধ করে। নতুন ইউনিফর্মে আরও অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্ন এবং নতুন ফ্যাব্রিকও ব্যবহার করা হয়েছে।
এরপর থেকে সেনাবাহিনীর তরফে দোকানদার ও দর্জিদের জন্য বিভিন্ন সময়ে একাধিক নির্দেশ জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে কেউ সেনাবাহিনীর নতুন প্যাটার্নের এই পোশাক বিক্রি করতে পারবেন না। যদি কেউ এই প্যাটার্নের মতো দেখতে পোশাক বিক্রি করার চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে ৷ তাই দোকানদাররা আর সেনাবাহিনীর ড্রেস কোডের অনুরূপ পোশাক বিক্রি করেন না।
নিয়ম লঙ্ঘনে শাস্তি
সেনাদের পোশাক সাধারণ মানুষের কাছে ফ্যাশনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে বলেই মনে করেন অনেকে। কিন্তু মানুষ বোঝে না যে, এই ধরনের পোশাক পরলে সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। ঠিক যেমনটা হয়েছিল বৈসরনে ৷ আর তাই যে এমনটা করবে তার 500 টাকা জরিমানা এবং সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। এবিষয়ে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যোগী রাজ্যের সচিবদের কাছে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল ৷ বাহিনীর (সেনা, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী) ইউনিফর্ম নকল করলে আইপিসির 140 এবং 171 ধারায় মামলা হবে বলেও জানানো হয়েছিল ৷ সাম্প্রতিক হামলার পর এই নিয়ম কঠোরভাবে ফিরিয়ে আনা হল ৷
জনসংযোগ বিভাগের বক্তব্য
সরকারি জনসংযোগ কর্মকর্তা শান্তনু প্রতাপ সিং বলেন, “আগে অনুমোদিত দোকানগুলিকে সেনাবাহিনীর পোশাক তৈরির কাপড় বিক্রির অধিকার দেওয়া হত। শুধু তাই নয়, সেনা জওয়ানদের পোশাক কিনতে এবং সেলাই করানোর সময় তাঁর আইডি কার্ড দেখাতে হত ৷ পোশাক বানানোর জন্য অনুমতি পাওয়া দোকানদারকেও তাঁর রেকর্ডে সেনার পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপি রাখতে হত ৷ কিন্তু যখন সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর পোশাকের মতো দেখতে পোশাক পরতে শুরু করার পর এ সংক্রান্ত অভিযোগ আসতে শুরু করে ৷ এরপরই সেনাবাহিনীর পোশাকের কোড পরিবর্তন করা হয়।
আরও পড়ুন:- ম্যালেরিয়া থেকে শিশুদের কীভাবে রক্ষা করবেন ? জেনে নিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস