এবার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করবে সত্যান্বেষী নীলাভ-সবুজ মাছি ! নতুন গবেষণা সম্পর্কে জেনে নিন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- অন্ধকার কিংবা গভীর জঙ্গলে মরে পচতে শুরু করা একটি দেহ ৷ কিংবা আমার-আপনার বাড়ির আশেপাশে পড়ে থাকা প্রাণীর দেহ ৷ যার চারপাশে ভনভন করে একঝাঁক নীলাভ-সবুজ মাছি ৷ যখন কোনও প্রাণীর মৃত্যু হয়, তখন সবচেয়ে আগে যে প্রাণীটি সেখানে পৌঁছায়, তা হল নীলচে ধাতব রঙের এই মাছি ৷ যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ব্লো ফ্লাই।

সেই মাছিগুলিই এবার হতে পারে খুন, রহস্যমৃত্যু বা অবৈধ প্রাণিহত্যার সত্য উন্মোচনের মাধ্যম ৷ অন্তত বিজ্ঞান তাই বলছে ৷ এই মাছিগুলি মৃতদেহে ডিম পাড়ে, তার থেকে লার্ভা উৎপন্ন হয় ৷ এই পুরো প্রক্রিয়ার সময়কাল থেকে বোঝা যায় প্রাণীটির মৃত্যুর আনুমানিক সময় ৷ যেটিকে ফরেন্সিকের ভাষায় বলা হয় পোস্টমর্টেম ইন্টারভ্যাল ৷

FLIES DNA UNLOCK MURDER MYSTERIES

এভাবেই মৃত, পচাগলা দেহের উপরে বসে ডিম পাড়ে ব্লো ফ্লাই ৷ (ছবি- ZSI)

তবে, এতদিন পর্যন্ত এই মাছিগুলির সঠিক পরিচয় নির্ধারণ করা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ ৷ বিশেষ করে যখন এগুলি প্রাপ্তবয়স্ক না-হয়ে, ডিম বা পিউপা অবস্থায় পাওয়া যেত ৷ এবার সেই রহস্যের পর্দাফাঁস করলেন পশ্চিমবঙ্গের জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার একদল গবেষক ৷ প্রাণীর পচাগলা দেহ থেকে মাছি নিয়ে, তা DNA পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে 24-48 ঘণ্টার মধ্যে এর শ্রেণি নির্ধারণ করা যাবে ৷

গবেষণার সময়ে পশ্চিমবঙ্গের চারটি আলাদা ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত অঞ্চলের মোট 2977টি ব্লো ফ্লাইয়ের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা ৷ এরপর ‘COI’ বা মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁরা 17টি মাছির স্বতন্ত্র প্রজাতি শনাক্ত করেছেন ৷ যা চারটি শ্রেণির অন্তর্গত – ক্যালিফোরা, ক্রিসোমিয়া, লুসিলিয়া ও হেমিপিরেলিয়া ৷

গবেষণায় দেখা গেছে, একই প্রজাতির মাছির মধ্যে জেনেটিক পার্থক্য প্রায় নেই বললেই চলে (0%–1%) ৷ অথচ আলাদা প্রজাতির মধ্যে সেই পার্থক্য হতে পারে 12.29 শতাংশ পর্যন্ত ৷ যা স্পষ্টভাবে আলাদা করে দেয় এক একটি প্রজাতিকে ৷ শুধু তাই নয়, BIN, ASAP, PTP ও GMYC—এই চারটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রজাতি ৷ ভৌগোলিক সীমা নির্ধারণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে একইরকম ফল পাওয়া গিয়েছে ৷ যা গবেষণার নির্ভরযোগ্যতাকে বাড়িয়ে তোলে ৷

Neighbour-Joining বিশ্লেষণেও প্রতিটি প্রজাতির আলাদা আলাদা ক্লাস্টার রয়েছে ৷ যার মাধ্যমে গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, প্রতিটি মাছির আলাদা-আলাদা জেনেটিক পরিচয় রয়েছে ৷ যা অনায়াসে শনাক্ত করা সম্ভব ৷ গবেষণা বলছে, COI বারকোডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোনও পর্যায়ের ব্লো ফ্লাই, তা সে ডিম, লার্ভা বা প্রাপ্তবয়স্ক যে পর্যায়ে হোক না-কেন, খুব দ্রুত ও নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা যায় ৷ এর ফলে ফরেনসিক তদন্তেও সময় বাঁচবে ৷ এতে সঠিক তথ্য যেমন পাওয়া যাবে ৷ তেমনই অপরাধের তদন্তের গতি ও স্বচ্ছতা বজায় থাকবে ৷

শুধু তাই নয়, এই গবেষণার তথ্য ভবিষ্যতে BOLD ও NCBI-এর মতো আন্তর্জাতিক ডিএনএ ডেটাবেসে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ যাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা ভারতের এই মাছিগুলির পরিচয় সহজেই বুঝতে পারেন এবং নিজেদের গবেষণায় তা ব্যবহার করতে পারেন ৷

জুওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর ড. ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন গবেষক দলে ছিলেন ঐশিক কর, অর্ক মুখোপাধ্যায়, কৌস্তভ মুখোপাধ্যায়, দেবদীপ প্রামাণিক এবং অতনু নস্কর ৷ তাঁদের যুগান্তকারী গবেষণা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের PLOS ONE সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে ৷ যেখানে তাঁরা প্রমাণ করেছেন—মাছির ডিএনএ বারকোডই হতে পারে একটি প্রাণীর মৃত্যুর সময় ও স্থান নির্ধারণের নির্ভুল হাতিয়ার ৷

তাঁদের এই গবেষণার ফলে একদিকে যেমন ভারতীয় ফরেনসিক বিজ্ঞান একটি শক্তিশালী হাতিয়ার পেল, অন্যদিকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত গবেষণাতেও এক নতুন দিশা খুলে গেল ৷ মাছির মতো এক ছোট্ট প্রাণী যে এত বড় তথ্যের বাহক হতে পারে, তা হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি ৷

অতনু নস্কর, ঐশিক কর ও তাঁদের সহ-গবেষকদের এই কাজ গোটা দেশের সামনে ফরেনসিক বিজ্ঞানের এক নতুন চেহারা তুলে ধরেছে ৷ কারণ, মাছি এবার কথা বলছে ৷ বৈজ্ঞানিক ভাষায়, জেনেটিক প্রমাণে কথা বলছে ! এই গবেষণা প্রমাণ করে দিয়েছে যেখানে দেহ নীরব, সেখানে প্রকৃতির নিজের হাতে তৈরি শার্লক হোমসের দল বলে দেবে মৃত্যুর আসল গল্প ৷

জুওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর ডা. ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফরেন্সিক বিজ্ঞান এতদিন শুধু মানুষের দেহ পরীক্ষা করে সত্য খোঁজার চেষ্টা করত ৷ কিন্তু, আমরা দেখালাম প্রকৃতি নিজেই সাক্ষী রেখে দেয় ৷ মাছির ডিএনএ এমন এক ভাষা, যা আমরা এখন বুঝতে শিখেছি ৷ এটা শুধু ভারত নয়, বিশ্বব্যাপী ফরেন্সিক সায়েন্সকে এক নতুন দিশা দেখাবে ৷ ডিএনএ বারকোডিং-এ যেভাবে স্পষ্ট পার্থক্য ধরা পড়েছে, তাতে মৃত্যুর সময় নির্ধারণে এই পদ্ধতি একেবারে নির্ভুল প্রমাণ হতে পারে ৷”

এই গবেষণার অন্যতম গবেষক ডা. অতনু নস্কর বলেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল মাছির কার্যকর ও দ্রুত শনাক্তকরণ পদ্ধতি আবিষ্কার করা ৷ যা সারা ভারতে প্রয়োগ যোগ্য হবে ৷ আমরা সফলভাবে দেখাতে পেরেছি, COI বারকোডিং পদ্ধতি দিয়ে মাছির যে কোনও পর্যায়—ডিম, লার্ভা বা অ্যাডাল্ট—শনাক্ত করা সম্ভব ৷ প্রাণীর পচাগলা দেহের থেকে মাছি নিয়ে DNA পরীক্ষাগারে পাঠানো হলে 24-48 ঘণ্টার মধ্যে তাঁর শ্রেণি নির্ধারণ করা যাবে ৷ বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।”

গবেষক ঐশিক কর বলেন, “এই গবেষণায় একটা বিষয় স্পষ্ট যে, প্রতিটি মাছির ডিএনএ তার প্রজাতির ‘পরিচয়পত্র’ ৷ আমরা যেমন আধার কার্ড দিয়ে শনাক্ত হই, মাছিও ঠিক তেমনভাবেই শনাক্ত হয় তার COI বারকোড দিয়ে ৷ এই ডেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডেটাবেসে আপলোড হলে, তা ভবিষ্যতের বহু অপরাধের তদন্তে ব্যবহৃত হতে পারবে ৷”

আরও পড়ুন:- পুতিন বিদেশ গেলে তার মল, মূত্র সুটকেসে ভরে নেন দেহরক্ষীরা! আজব নিয়মের কারণ জানলে অবাক হবেন

আরও পড়ুন:- দারুন খবর। জিও গ্রাহকরা পাবেন ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পার্সোনাল লোন। কিভাবে আবেদন করবেন ? জানুন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন