Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- কান বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে এক প্রবাদ বাক্য আছে – “কানে তালা লেগে যাওয়া”। এই কথাটির সঙ্গে আমরা খুবই পরিচিত। অনেকের মুখে শোনা যায় কান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও কথাটি শুনতে অতটা সমস্যা দায়ক না মনে হলেও এই ব্যাপারটি খুবই অস্বস্তিকর এবং হতাশা জনক। কারণ কান আমাদের শুনতে সাহায্য করে। যখন কোন একটি কান বা দুটি কান কোন অনিবার্য কারণ বশত বন্ধ হয়ে যায় বা আটকে থাকে তাহলে কোন কিছু শুনতে ঠিক করে পাওয়া যায় না এছাড়া একটা অস্বস্তিজনক ব্যাপার হতে থাকে।
কান বন্ধ খুলুন সহজেই বাড়িতে বসে
কেন এই কান বন্ধ হয়ে যায় বা কানের তালা লেগে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়? এই অবস্থা হলে কিভাবে তৎক্ষণাৎ পরিত্রাণ পাওয়া যাবে? এই সকল বিষয়ে আলোচনা করা হবে এই প্রতিবেদনে। সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন, অনেক অজানা তথ্য জানাতে চলেছি এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে। সবার আগে জেনে নেওয়া দরকার, কানে তালা লেগে যাওয়া বা কান আটকে থাকার মতন অবস্থা হওয়ার কারণ কি।
কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ
১) ইউস্টাচিয়ান টিউবের কর্মহীনতা যখন টিউব মধ্য কানের সাথে সংযোগ করে।
২) অবরুদ্ধ ইউস্টাচিয়ান টিউবের লক্ষণ গুলির মধ্যে একটি সর্দি, কাশি, হাঁচি এবং গলা ব্যথা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
৩) গলা ব্লক হয়ে যায় এবং তরল এবং শ্লেষ্মা সঠিক ভাবে প্রবাহিত হতে পারে না।
৪) সাধারণ সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সাইনোসাইটিস বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতো অ্যালার্জির মতো সংক্রমণ।
৫) জোরে গাড়ি চালানো, কোন উচ্চতর স্থানে ভ্রমণ এই কারণেও কান সাময়িক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৬) অবরুদ্ধ কানের আরেকটি কারণ হল কানের সংক্রমণ।
৭) এই সংক্রমণ বাইরের কানে (ওটিটিস এক্সটার্না) বা মধ্যকর্ণে (ওটিটিস মিডিয়া) হতে পারে।
৮) বাহ্যিক কানের সংক্রমণ দেখা যায়, যদি কোনো ব্যক্তি সাতার কাটতে গিয়ে বা উপরে বা নদীতে স্নান করতে গিয়ে যদি কানের মধ্যে জল ঢুকে গিয়ে থাকে।
৯) এর ফলে সেখানে সংক্রমণের সৃষ্টি হয় যার ফলে জ্বর ব্যথা ও কান বন্ধ হওয়ার মতন উপসর্গ সৃষ্টি হয়।
১০) অনেক সময় কানের খোল বা মোম অনেকটা জমে গেলে, তা ঠিক মতন পরিষ্কার না করা গেলে কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতন অবস্থা হতে পারে।
১১) কোলেস্টিয়াটোমা যেটি কানের পর্দার পিছনে ত্বকের একটি অক্যান্সারবিহীন বৃদ্ধি ঘটে।
১২) এর ফলে কানে চাপ এবং শ্রবণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, তীব্র গন্ধ সহ স্রাব হতে পারে এবং ধীরে ধীরে শ্রবণ শক্তি হ্রাস পেতে পারে।
আরও পড়ুন:- ডকুমেন্ট আপনার, সিমকার্ড তুলেছে অন্য কেউ। কী ভাবে বুঝবেন? জেনে নিন
বন্ধ হয়ে থাকা কান কিভাবে খুলবে?
অনুনাসিক ডিকনজেস্ট্যান্ট :- যদি কোন কারণে আপনার কান আটকে থাকে, নাকের ডিকনজেস্ট্যান্ট এমন একটি ওষুধ যেটি, প্রদাহ কমাতে এবং ইউস্টাচিয়ান টিউব খোলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এই গুলো ডাক্তারের নির্দেশ অনুসারে খাওয়া উচিত। যদি কোন ডাক্তারের কাউন্টারে এই গুলো পাওয়া যায়।
উষ্ণ জলে ধুয়ে নিন :- বন্ধ হয়ে থাকা কান খোলার জন্য উষ্ণ জল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই কৌশলটি আপনার কান থেকে শ্লেষ্মা বের করে দিতে সাহায্য করবে। এছাড়াও যদি আপনি সাইনাসের ব্যথায় ভুগে থাকেন তাহলেও উষ্ণ গরম জল অনেক আরাম দেবে। আপনার মাথাটি পাশে কাত করুন এবং আপনার আঙুল দিয়ে অন্যটি বন্ধ রেখে একটি নাকের মধ্যে আলতো করে জল ঢালুন। আপনার অনুনাসিক উত্তরণ দিয়ে এবং অন্য নাকের ছিদ্র থেকে জল প্রবাহিত হতে দিন।
ইয়ার প্লাগ এড়িয়ে চলুন :- বর্তমান সময়ে কানে ইয়ার প্লাগ লাগিয়ে রাখতে দেখা যায় বেশির ভাগ ব্যক্তিকে। দীর্ঘ সময় ধরে কানের মধ্যে লাগিয়ে রাখা হেডফোন বা ইয়ার প্লাগ আপনার শ্রবণ শক্তিকে কমিয়ে দিতে পারে, এছাড়া কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
চোয়ালের ব্যায়াম :- চোয়ালের ব্যায়াম সাইনাস সম্পর্কিত কানের কনজেশন উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। এই ব্যায়াম সাইনাসের চারপাশের পেশী গুলিকে উদ্দীপিত করে এবং শ্লেষ্মা চলাচলকে সহজ করে। আপনার আঙ্গুলের ডগা দিয়ে আপনার চোয়ালের জয়েন্ট গুলিতে মৃদু চাপ প্রয়োগ করার সময় আপনার মুখ খোলা এবং বন্ধ করা। আরেকটি ব্যায়াম হল আপনার নিচের চোয়ালকে এক পাশে সরানো, যেভাবে আপনি চুইংগাম চিবিয়ে থাকেন।
পেশাদারী কান পরিষ্কার :- যদি কোন ঘরোয়া উপায় আপনার কান বন্ধ খুলতে না পারে তাহলে পেশাদারী কান পরিষ্কার এর কাছে আপনার কান পরিষ্কার করতে পারেন কিংবা ইএনটি (ENT) বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েও আপনি আপনার কান দেখিয়ে নিতে পারেন।
হাইড্রেটেড থাকুন :- প্রতিদিন বেশি করে জল পান করুন কারণ এই জল আপনার শরীরকে সতেজ অসুস্থ রাখবে তার পাশাপাশি কানে উৎপন্ন হওয়া শ্লেষ্মা পাতলা হবে এছাড়া সাইনাসের প্রবলেম দূর হবে। আর সব সময় কান টানা বা আঙুল দেওয়া ভেতরে এই সকল জিনিস এড়িয়ে চলা ভালো। নইলে কান বন্ধ হওয়ার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আপনার যখন কানে ব্যাথা সৃষ্টি হবে কিংবা কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হবে, উপরে দেওয়া এই ঘরোয়া উপায় গুলি আপনার কান বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে পরিত্রান দেবে। যদি ঘরোয়া উপায়গুলি ফলো করেও আপনার কানের প্রদাহ না কমে এছাড়া কান বন্ধ হয়ে যাওয়া অবস্থা দূর না হয়, তাহলে একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞর কাছে যাওয়াটা উচিত।
তিনি কানের বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করে আপনার শ্রবণ শক্তির মূল্যায়ন করবেন এছাড়া আরো অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর আপনার রোগ নির্ণয় করবেন। চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব ইয়ার প্লাগ ব্যবহার কমানোর এছাড়া কানে ব্যথা হলে বা অতিরিক্ত মোম জমলে কখনোই কোন কিছু দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন না, তাহলে অনেক সময় সেই গুলি আরো কানের ভিতরে চলে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উত্তম কাজ।
আরও পড়ুন:- টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় কর্মচারীকে কুকুরের মতো হাঁটানো হল, কোথায় ঘটলো এমন ঘটনা ?