কেন্দ্র GST কমালে বিমা প্রিমিয়ামে ছাড় মিলবে কি? জেনে নিন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- জিএসটি বিষয়টা কী, তা নিয়ে আমজনতার কোনও কালেই তেমন আগ্রহ এবং মাথাব্যথা নেই। জ্ঞানও তাই সীমিত। এটা এমন একটা কেন্দ্রীয় কর, যা কেনাকাটার পর বিলে আলাদা সিজিএসটি এবং এসজিএসটি দু’টো ভাগে ভেঙে যোগ হওয়ায় পণ্যের দামটা আরও কিছুটা বেড়ে যায়, ধারণা এই অবধি। তবে একটা ক্ষেত্রে দেশে কার্যকর জিএসটি হার নিয়ে আমজনতা কিন্তু অত্যন্ত সংবেদনশীল। তা হলো, জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমায় কার্যকর হওয়া জিএসটি নিয়ে। যে হার কমবে এমন একটা সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় দেশবাসী অত্যন্ত আশায়, জীবনবিমা এবং মেডিক্লেমে বছর-বছর পকেটে ছেঁকা দেওয়া প্রিমিয়াম দেওয়া থেকে রেহাই মিলবে। কিন্তু বিষয়টা কি এরকমই?

পরিস্থিতি এখন কী?

বিশেষজ্ঞমহলের দাবি, প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে দেওয়া ভাষণে দেশে জিএসটি পরিকাঠামো ঢেলে সাজার যে বার্তা দিয়েছেন, তা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, বিমা ক্ষেত্রে (জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমা) কার্যকর জিএসটি হার বর্তমানের ১৮% থেকে ৫% বা একেবারে শূন্যতেও নামাতে পারে কেন্দ্র। যা নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী দেশের বেশ কয়েক কোটি সাধারণ নাগরিক।

আমজনতা কী ভাবছে?

খাতায়কলমে জিএসটি হার কমলে বা একেবারেই উঠে গেলে প্রিমিয়াম সঙ্গে সঙ্গে ধপাস করে নেমে যাবে তলানিতে, এমনটা ভাবলে ভুল হবে, দাবি বিশেষজ্ঞদের গরিষ্ঠ অংশের। তাঁদের দাবি, শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি যে, জিএসটি কমলে, প্রিমিয়াম উল্টে বেড়ে যেতে পারে।

কোন অঙ্কে উলটপুরাণ?

বাজার বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিষয়টির পিছনে আসল কারিগর ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট-এর অঙ্ক। জিএসটি’র গাঠনিক নিয়ম বলছে, যে যে সেক্টরে করের হার ৫% বা তার কম, সেইসব সেক্টরে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট ক্রেম করা সম্ভব নয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষে। আর এখানেই আপত্তি তুলেছে বিমা সংস্থাগুলি।

তাদের দাবি, জিএসটি কমায় কেন্দ্রের আয় কমার পাশাপাশি ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট-এর সুবিধা চলে যাওয়ায়, আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তাদেরও। যা সংস্থার মার্জিনে বড়সড় প্রভাব ফেলতে চলেছে। এমতাবস্থায় নিজেদের পেটে ধাক্কা মেরে কোটি কোটি গ্রাহককে ‘সুবিধা’ দেওয়া সম্ভব নয়।

বরং নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিমা সংস্থা কর্তৃপক্ষের অভিমত, মার্জিন বজায় রাখতে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট ক্রেম না করতে পারায় যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তা প্রিমিয়াম বাড়িয়ে তুলে নেওয়া। যে সম্ভাবনায় জনমানসে সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমতাবস্থায় তারা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছেন, জিএসটি’তে যাতে কর-হার কমানো না হয়। এবং যদি বা কমানো হয়, সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হিসেবে, ওই কর-হারের পরেও তাদের কাছে যাতে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট ক্লেম করার সুযোগ দেওয়া হয়।

কোন পথে ভাবছে কেন্দ্র?

সরকারি ভাবে এখনও কোনও বক্তব্য রাখা হয়নি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। যদিও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকের দাবি, এ ভাবে জিএসটি হার কমিয়ে দিলে কেন্দ্রের বার্ষিক রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ পৌঁছে যেতে চলেছে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকায়। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে জীবন এবং স্বাস্থ্যবিমায় বলবৎ জিএসটি থেকে ১৬,০০০ কোটি টাকা ঢুকেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের রাজকোষে।

এ বার স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটি তুলে দিলে, ক্ষতির অঙ্ক পৌঁছবে ২,৪০০ কোটি টাকায়। কিন্তু দেশের আমজনতার কথা মাথায় রাখার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য এই ক্ষতি সহ্য করতে রাজি কেন্দ্র। একই ভাবে সংস্থাগুলিরও উচিত, লাভের অঙ্ক ‘একটু’ কমলেও, বৃহত্তর প্রেক্ষিতে দেশবাসীর কথা ভাবা। পাশাপাশি বিমার প্রিমিয়াম কমলে, বিমার ছাতার তলায় আসতে পারেন আরও অসংখ্য দেশবাসী।

সেক্ষেত্রে একটু দীর্ঘমেয়াদে হরেদরে ‘ক্ষতি’ পুষিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শতকরা সাড়ে ষোলো আনা। জিএসটি সম্পর্কিত গ্রুপ অফ মিনিস্টার্স-এর পাশাপাশি বিমা নিয়ামক সংস্থা আইআরডিএআই কর্তৃপক্ষও জিএসটি কমানো বা তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী। তাঁদের দাবি, দেশে ৪০ শতাংশেরও কম মানুষ স্বাস্থ্যবিমার আওতায় রয়েছেন। পাশাপাশি ক্রমাগত চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাওয়ায় আউট অফ-পকেট মেডিক্যাল এক্সপেন্ডিচার-এর নিরিখে এশীয় দেশগুলির মধ্যে ভারত শীর্ষে। এই অস্বাস্থ্যকর ছবিটা পাল্টে যেতে পারে বিমায় জিএসটি কমলে বা উঠে গেলে।

বিমা সংস্থাগুলির বক্তব্য কী?

সরকারি ভাবে মুখ খুলতে রাজি নন গরিষ্ঠ বিমা সংস্থা কর্তৃপক্ষই। তবে ইন্ডিয়াফার্স্ট লাইফ ইনশিওরেন্স-এর সিএফও কেদার পাটকি, এইচডিএফসি আর্গো জেনারেল ইনশিওরেন্স-এর সিএফও সমীর শাহ বা স্টার হেলথ-এর সিএফও নীলেশ কাম্বলি’র মতো অনেকেরই দাবি, বিমায় সংস্থার তরফে কস্ট কম্পোনেন্ট থাকে ৬-৮৬।

যে জন্য গ্রাহকের থেকে ১৮% জিএসটি নেওয়ার পরেও লাভ-ক্ষতির পাটিগণিতে একটা ভারসাম্য থাকে। এখন কর-হার ১২% করলেও, তা মানার একটা জায়গা ছিল। কিন্তু কর-হার তার কমে নামলে চাপ সংস্থার পকেটে। কেন্দ্রের কাছে আমাদের আর্জি, হয় ১২% হারে করের আওতায় রাখা হোক বিমাকে। আর না হলে, ৫% কর হলেও পুরো ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট-এর সুবিধা দেওয়া হোক সংস্থাগুলিকে।

আরও পড়ুন:- GST রিফর্মের আবহে নজর থাকবে এই ২৬ স্টকে, পজ়িটিভ প্রভাব পড়তে পারে এই সমস্ত স্টকে

আরও পড়ুন:- বিনামূল্যে পরিষেবা দিয়েও Google Pay এবং PhonePe কীভাবে কোটিপতি হচ্ছে? জানুন রহস্য

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন