Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ঘোলায় ট্রলিতে দেহ-কাণ্ডে নয়া মোড় ! তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাপড় ব্যবসায়ী ভাগারাম দেওয়াসিকে খুনের আগে ইউটিউবে নিয়মিত ক্রাইম সিরিয়াল দেখে নিজেদের প্রস্তুত করেছিল ধৃত কৃশপাল এবং করণ সিং। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সংবাদপত্রে অপরাধমূলক খবরও খুঁটিয়ে দেখা শুরু করেছিল দু’জনে। তা থেকে খুনের বিষয়ে সম্যক ধারণা তৈরি হয়েছিল তাদের। যা ব্যবসায়ীকে খুনের পরিকল্পনায় কাজে লাগে বলে ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এসিপি তনয় চট্টোপাধ্যায় বলেন,”তদন্তে উঠে আসা যাবতীয় তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে । এখনও কিছু তথ্য মিসিং রয়েছে । সেগুলো লিঙ্ক-আপ করার চেষ্টা চলছে।”
তদন্তে উঠে এসেছে, ঘটনার দিন অথ্যাৎ মঙ্গলবার প্রথমে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ব্যবসায়ী ভাগারামকে খাইয়ে নিস্তেজ করে কৃশপাল ও করণ। এর পরে ছুরি দিয়ে গলার নলি কাটার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে নাইলনের দড়ি দিয়ে গলার দু’দিক থেকে টেনে ধরে দু’জনে। যদিও, খুনের ঘটনার সময় ধৃত করণ সিং ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না বলে তদন্তকারীদের জেরায় দাবি করেছে সে । পুলিশের জেরায় করণ সিং দাবি করে, গিরিশ পার্ক থানা এলাকার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের ভাড়া ঘরে যা ঘটেছে সবটাই একা ঘটিয়েছে 19 বছরের কৃশপাল সিং। পুলিশ তার এই বক্তব্য খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:- Mutual Fund থাকলেই এই বিরাট সুবিধা আপনিও পাবেন। এক ক্লিকে জেনে নিন
ঘোলা ট্রলি-কাণ্ডে ইতিমধ্যে ধৃত দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে খুনের ঘটনাস্থল মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেছে পুলিশ।পুনর্নির্মাণের সময় গিরিশ পার্ক থানার পাশাপাশি ছিলেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের তদন্তকারীরাও। ছিলেন ঘোলা থানার কয়েকজন পুলিশকর্মীও। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুনর্নির্মাণ পর্বে কৃশপালকেই বেশি সক্রিয় দেখিয়েছে। সে-ই দেখিয়েছে, মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের কোন ঘরে ভাগারামকে খুন করা হয়েছে ৷ সে পুলিশকে জানিয়েছে, কিছু দিন ধরেই সে এই খুনের পরিকল্পনা করছিল। সেই কারণে ইউটিউবে একাধিক ক্রাইম সিরিয়াল ইউটিউবে দেখা শুরু করেন কৃশপাল। বিভিন্ন সংবাদ পড়ে সেখানে কীভাবে খুন করা হয়েছে, তাও খুঁটিয়ে দেখা শুরু করে সে।
ঘটনার পুনর্নির্মাণের সময়ে কৃশপাল পুলিশকে আরও জানিয়েছে, সে কিছু দিন ধরে ঘুমের ওষুধ ব্যবহার করত। ভাগারাম ঘটনার দিন অর্থাৎ, মঙ্গলবার কিছু টাকা শোধ করতে আসেন। সেই সময়ে চায়ের সঙ্গে কৃশপাল ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ায় ভাগারামকে ৷ তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়লে ছুরি দিয়ে গলার নলি কেটে দেয় ৷ রক্ত বন্ধ করতে বিক্রির জন্য রাখা পোশাক দিয়ে গলা চেপে দেয়। তারও পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে নাইলনের দড়ি দিয়ে গলায় দু’দিক থেকে টেনে দেয়। এর পরে আগে থেকেই এনে রাখা ট্রলি ব্যাগের মধ্যে ভাগারামের দেহ ঢোকানোর আগে টেপ দিয়ে হাত-পা এবং মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে দেয় ৷ এক সময়ে বাড়ির কাছে মুক্তারামবাবু স্ট্রিটেই রক্তমাখা পোশাক ফেলে আসে।
এরপর, দেহ ট্রলি ব্যাগে ভরে ঘোলা থানা এলাকার কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে খেপলির বিলের কাছে ফেলতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় অভিযুক্তেরা। সেই কারণে মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে খেপলির বিল পর্যন্ত একাধিক জায়গা ঘুরে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেন তদন্তকারীরা। এর মধ্যেই জানা গিয়েছে, ভাগারাম দেওয়াসির আসল বাড়ি রাজস্থানের জোড়ওয়াল গ্রামে। বছর তিন-চার আগে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। মেছুয়া বাজারের কাছে থাকতেন। দুই অভিযুক্তের কাছ থেকে পোশাক কিনে নিয়ে বিক্রি করতেন। সেই সূত্রে মালপত্রের আট লক্ষ টাকা তাঁর বাকি পড়ে যায়। সেই টাকা নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত ৷ আর তার জেরেই খুন হতে হয় ভাগারামকে ৷
কিন্তু, খুনের সময়ে ধৃত করণ সিং কোথায় ছিল ? এ নিয়ে প্রশ্ন ধন্দে পুলিশ ৷ কারণ জেরায় ধৃত করণ জানিয়েছে, ভাগারাম মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাড়িতে আসার আগেই সে ব্যবসার কাজে বেরিয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যায় কৃশপাল তাকে ফোন করে জানায়, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কিছু পোশাক পৌঁছে দেওয়ার আছে। সেই কারণে করণকে নাগেরবাজারে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলে কৃশপাল। যদিও করণের এই দাবি মানতে নারাজ তদন্তকারীরা।তাঁরা সব দিক খতিয়ে দেখছেন। তদন্তকারীদের ধারণা, নিজেকে বাঁচাতেই করণ এমনটা দাবি করছে।
তদন্তে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে দুপুরের মধ্যে কোনও এক সময়ে এই খুনের ঘটনাটি ঘটে। এর পরে সেদিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাড়ি থেকে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে একটি হলুদ ট্যাক্সিতে নাগেরবাজারে গিয়েছিল কৃশপাল। এখানেই সময় নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশায় রয়েছেন তদন্তকারীরা। কারণ, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে ওই ট্যাক্সি নাগেরবাজারে পৌঁছয় রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ। এইটুকু দূরত্ব পেরোতে আড়াই ঘণ্টা লাগার কথা তো নয় ! তা হলে এতটা সময় কী করছিল কৃশপাল ? জেরায় কৃশপাল দাবি করেছে, রাস্তায় যানজট ছিল। পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে ৷
তবে আরও একটি সূত্র ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। তা হল, এখনও ভাগারামের ফোন ঘটনাস্থল কিংবা তার আশপাশের এলাকা থেকে উদ্ধার করা যায়নি।অথচ খুনের ঘটনার পরে তাঁর মোবাইল ফোনের টাওয়ারের অবস্থান দেখাচ্ছে, বাবুঘাটের কাছে ফেয়ারলি প্লেস। তাহলে কী ওই আড়াই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে কৃশপাল অন্য কোথাও দেহ ফেলার চেষ্টা করেছিল? তাই কি এতটা সময় লেগেছিল মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে নাগেরবাজার পৌঁছতে? তার উত্তর পেতে মরিয়া ঘোলা থানার তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন:- ভবিষ্যতের জন্য শিশুদের এটা শেখান। জানুন কি মত হার্ভার্ড অধ্যাপকের ?
আরও পড়ুন:- এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম জায়গা, যেখানে মানুষ পৌঁছলে আর ফিরতে পারবে না, বিস্তারিত জেনে নিন