সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে নিযুক্ত প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিলের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন চাকরি হারানো প্রার্থীরা। তাদের লড়াইয়ের শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে ‘কিউরেটিভ পিটিশন’। আসুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক এই বিশেষ আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে।
কিউরেটিভ পিটিশন কী ?
কিউরেটিভ পিটিশন হলো ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার একটি বিশেষ ধারণা, যা মূলত ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত সুযোগ হিসেবে কাজ করে। যখন সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন খারিজ হয়ে যায়, তখনও এই পিটিশনের মাধ্যমে বিচার পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যায়। ২০০২ সালে ‘রূপা অশোক হুররা বনাম অশোক হুররা’ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এই ধারণাটির প্রবর্তন করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, যদি বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো গুরুতর ত্রুটি বা স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের লঙ্ঘন (miscarriage of justice) হয়ে থাকে, তবে তা সংশোধন করা।
কখন এবং কীভাবে দাখিল করা হয়?
কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠোর এবং এটি শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রেই গৃহীত হয়। এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়:
- ভিত্তি: আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে, রায় ঘোষণার সময় আদালতের কোনো পক্ষপাতিত্ব ছিল অথবা স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের নীতিগুলি লঙ্ঘিত হয়েছে।
- সার্টিফিকেট: আবেদনপত্রের সঙ্গে একজন সিনিয়র আইনজীবীর সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়, যেখানে তিনি উল্লেখ করবেন যে পিটিশনটি দাখিলের জন্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
- বিচার প্রক্রিয়া: এই পিটিশনটি সরাসরি আদালতে শুনানি হয় না। প্রথমে এটি সুপ্রিম কোর্টের তিনজন সিনিয়র বিচারপতি এবং যে বিচারপতিরা মূল রায় দিয়েছিলেন, তাদের বেঞ্চে পাঠানো হয়। যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি মনে করেন যে মামলাটির পুনরায় শুনানি প্রয়োজন, তবেই এটি ওপেন কোর্টে শুনানির জন্য গৃহীত হয়।
এসএসসি চাকরিহারাদের জন্য কিউরেটিভ পিটিশনের গুরুত্ব
২০১৬ সালের এসএসসি চাকরিহারাদের জন্য কিউরেটিভ পিটিশন এক নতুন আশার আলো। এই পিটিশনের মাধ্যমে তারা সুপ্রিম কোর্টের কাছে তাদের বক্তব্য নতুন করে তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। আবেদনকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা করা অত্যন্ত জরুরি। তাদের মতে, চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য এটিই তাদের শেষ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী পদক্ষেপ।
এই লড়াইয়ে সফল হতে পারবেন কিনা, তা সময়ই বলবে। তবে, নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য তাদের এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রেখে, তারা তাদের চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।