Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পুরসভা থেকে কতই আর বেতন পান কাউন্সিলার! মেরেকেটে হাজার দশেক। পুরপ্রধানের বেতন কিছুটা বেশি।
গোটা মাসের সেই বেতনই এ বার একরত্তি মেয়ের চিকিৎসার জন্য বাবা–মায়ের হাতে তুলে দিলেন বৈদ্যবাটি পুরসভার সমস্ত দলের কাউন্সিলাররা। রাজনৈতিক তিক্ততার পরিচিত গণ্ডি ছাড়িয়ে নিঃশব্দে লেখা হয়ে গেল মানবিকতার নতুন এক গল্প।
কাউন্সিলারদের বেতন থেকে ওঠে ২ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। তাঁদের এই উদ্যোগ দেখে এগিয়ে আসেন বৈদ্যবাটির আরও কিছু ব্যবসায়ী এবং বেশ কিছু চাকরিজীবী মানুষ। সবমলিয়ে সংগ্রহ হয় ৬ লক্ষ টাকা। সেই টাকা প্রায় ৭২ কিলোমিটার দূরে নদিয়ার রানাঘাটের দাসপাড়ার বাসিন্দা, জটিল রোগে আক্রান্ত ছোট্ট মেয়ে অস্মিকা দাসের চিকিৎসার জন্য তুলে দেওয়া হলো শুক্রবার।
রাজনৈতিক নামাবলি গা থেকে নামিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে কাউন্সিলাররা দাঁড়ালেন অসহায় পরিবারের পাশে। তাঁঁদের অঙ্গীকার — খুদে প্রাণকে সুস্থ জীবনে ফেরাতে যে কোনও সহায়তায় তাঁরা পাশে থাকবেন। বৈদ্যবাটি পুরসভার ২৩ জন কাউন্সিলারের এই উদ্যোগে আপ্লুত অস্মিকার পরিবার। সে অর্থে বৈদ্যবাটির সঙ্গে কোনও যোগই নেই অস্মিকাদের। তারা থাকে অন্য পুর–এলাকায়।
সমাজমাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপে শুভঙ্কর দাস অনুরোধ করেছিলেন তাঁর মেয়ের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১৭ কোটি টাকা। কোথা থেকে আসবে এই বিপুল পরিমাণ টাকা? শুভঙ্কর লিখেছিলেন তাঁর অসহায়তার কথা। এমন কি কেউ আছেন, যিনি বাড়িয়ে দিতে পারেন সহায়তার হাত? সেই খবর পৌঁছয় বৈদ্যবাটি পুরসভাতেও। তারপরেই রাজনীতি এবং দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে বৈদ্যবাটি পুরসভার কাউন্সিলাররা সেই অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুরপ্রধান, উপ–পুরপ্রধান ছাড়াও তৃণমূল, ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেস, সিপিএমের কাউন্সিলাররা জোট বেঁধে এগিয়ে এসেছেন অস্মিকা–কে নতুন জীবন ফিরিয়ে দিতে।
পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো ও উপ–পুরপ্রধান শান্তনু কুমার দত্তের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল শুক্রবারেই শুভঙ্করের বাড়িতে যান। ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রত্না দত্ত, কংগ্রেসের কবিতা ঘোষ, বিশ্বজিৎ সিংহ, তৃণমূলের মহুয়া ভট্টাচার্য, সমর বাগচিরা। তাঁরা অস্মিকার বাবা–মার সঙ্গে কথা বলে ওই ৬ লক্ষ টাকা তুলে দেন। অভাবনীয় এই সহায়তায় আবেগে মুখের ভাষা হারিয়েছে দুশ্চিন্তার অতলে ডুবে থাকা পরিবার।
ছোট্ট মেয়ে অস্মিকা পরিবারের একমাত্র সন্তান। মেয়ের জটিল রোগ ধরা পড়ার পরে চিকিৎসার জন্য নানা জায়গায় ছুটে বেড়িয়েছেন শুভঙ্কর। তার ফল? চাকরি খুইয়েছেন। কার্যত নিঃস্ব শুভঙ্কর সমাজমাধ্যমে কাতর অনুরোধ করেছিলেন, মেয়ের চিকিৎসার জন্য যদি কোনও আর্থিক সহায়তা মেলে। অসহায় বাবার সেই কাতর আর্তির কথা পৌঁছয় বৈদ্যবাটির পুরসভায়।
প্রাথমিক আলোচনার পরে জানুয়ারিতে বোর্ড অফ কাউন্সিলারদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২৩ জন কাউন্সিলার তাঁদের এক মাসের বেতন তুলে দেবেন ওই পরিবারের হাতে। সেই সিদ্ধান্তের পরে পুরপ্রধান, উপ–পুরপ্রধান, পুরপরিষদের সদস্য ও কাউন্সিলাররা মাসিক বেতন দান করে টাকা। পুরপ্রধান পিন্টু বলেন, ‘আমাদের রাজ্যে ১২৮টি পুরসভা এবং যে ক’টি পুরনিগম রয়েছে, সমস্ত জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ করব, ছোট্ট এই মেয়ের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসুন। রাজনৈতিক ব্যবধান দূরে সরিয়ে এই মেয়েটার পাশে সকলকে দাঁড়াতেই হবে। যাঁর যা ক্ষমতা, তা নিয়ে এগিয়ে আসুন সকলে। আমি নিশ্চিত, সুস্থ হয়ে অস্মিকা নতুন জীবন শুরু করবেই।’
মুূলত পিন্টুর উদ্যোগেই বৈদ্যবাটিতে শুরু হয় টাকা তোলা। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিতে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করেননি কাউন্সিলাররা। ফরওয়ার্ড ব্লকের কাউন্সিলার রত্না দত্ত বলছিলেন, ‘মানুষের ভোটে পুরপ্রতিনিধি হয়েছি। তাঁদের পাশেই থাকতে হবে। পুরপ্রধান যে মানবিক বার্তা দিয়েছেন, সেখানে রাজনৈতিক মতানৈক্য আঁকড়ে ধরে রাখা অর্থহীন। ওই ছোট্ট মেয়ের মুখে হাসি দেখতে চাই। ভবিষ্যতেও একজোট হয়ে এগিয়ে আসব।’ কংগ্রেসের কাউন্সিলার কবিতা ঘোষের কথায়, ‘মানবিকতার থেকে রাজনীতি কখনও বড় হতে পারে না। আজ এখানে এসে পুরপ্রধান সম্পর্কেও ধারণা আমূল পাল্টে গেল।’
বৈদ্যবাটি পুরসভার জনপ্রতিনিধিদের সহমর্মিতায় মুখের ভাষা হারিয়েছেন শুভঙ্কর। তর্জনী দিয়ে চোখের কোনের জল সরিয়ে বললেন, ‘আশা হারিয়ে ফেলছিলাম। আজ মনে হচ্ছে, লড়াইটা শেষ হয়নি। হয়তো মেয়েটা নতুন জীবন ফিরে পাবে।’
আরও পড়ুন:- ATM-এ টাকা তুলতে গিয়ে ‘সর্বস্ব’ খোয়ালেন একাধিক গ্রাহক, কিভাবে ?