Bangla News Dunia, Pallab : ২০১৬ সালের এসএসসি’তে (SSC Recruitment Case Verdict) নিয়োগের পুরো প্যানেল বৃহস্পতিবার বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। গোটা প্যানেল বাতিল হওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার জন। শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের পাশাপাশি এই বাতিলের কোপে পড়েছেন অশিক্ষক কর্মীরাও। বাংলার অন্য সব জেলার সঙ্গে পশ্চিম বর্ধমান (Paschim Bardhaman) জেলার একাধিক স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীরা আছেন এই তালিকায়। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষা সেল, জেলা শিক্ষা দপ্তর ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় চাকরি যাওয়ার সংখ্যাটা প্রায় ৫১৭ জন।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া , বারাবনি বিধানসভার সালানপুর, বারাবনি ও রেল শহর চিত্তরঞ্জনের বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকদের নাম এই তালিকায় আছে।
আরও পড়ুন : এবার পশ্চিমবঙ্গে কেমন গরম সহ্য করতে হবে ? পূর্বাভাস দিলো আবহাওয়া দপ্তর
বাতিলের তালিকায় সবার উপরে আছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জের বাসন্তীদেবী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম। এই স্কুলের ২৭ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকার মধ্যে ১২ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মাথায় হাত স্কুল কর্তৃপক্ষের। এই স্কুলের পড়ুয়াদের সংখ্যা ১,৪২৯ জন। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘বুঝতে পারছি না কি করব? ২৭ জনের মধ্যে যদি ১২ জন না থাকেন, তাহলে স্কুল চালাবো কি করে?’ বারাবনির গৌরান্ডি আর কে এস ইনস্টিটিউট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, সালানপুর ব্লকের কস্তুরবা গান্ধি হিন্দি মিডিয়াম স্কুলের একজন, চিত্তরঞ্জন বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষকের নাম বাতিলের তালিকায় আছে বলে জানা গিয়েছে।
আসানসোলের (Asansol) এসবি গরাই রোডের চেলিডাঙ্গা হাইস্কুলের দু’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও এক অশিক্ষক কর্মীর নাম এই তালিকায় আছে। এদিন এই তিনজনই স্কুলে গরহাজির ছিলেন। এই স্কুলের টিচার ইনচার্জ পূর্ণচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘স্কুল শিক্ষা দপ্তর ও জেলা প্রশাসন থেকে কিছু জানানো হয়নি। আমার স্কুলের তিনজন ছিলেন। একজন শিক্ষক তো একটা বিষয়ের ছিলেন। কি করব বুঝতে পারছি না।’ আসানসোল শহরের উমারানি গড়াই মহিলা কল্যাণ হাইস্কুলের দুই শিক্ষিকা ও একজন অশিক্ষক কর্মীর নাম এই তালিকায় আছে। স্বাভাবিকভাবেই চাকরি হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। চাকরি হারানো গৌরান্ডি আর কে এস ইনস্টিটিউট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা অনামিকা চাকি বলেন, ‘আমাদের ভুলটা কোথায় ছিল? সমস্ত কিছু যাচাই করে তবেই চাকরিতে আমাদের নিয়োগ করা হয়েছিল। আমাদের যে চাকরি চলে গেল এবার আমরা কি করব?।’
এই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক তুষার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘স্কুলের উপরে অনেকটা চাপ পড়ল। যেখানে ২,৬০০-এর বেশি ছাত্র ছাত্রী রয়েছে, আর শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন ৩৯ জন। এর মধ্যে চারজন শিক্ষক ও শিক্ষিকা চলে গেল। যার ফলে স্কুলের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। বিশেষ করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক শিক্ষিকার একটা অভাব তৈরি হল। অষ্টম পিরিয়ড পর্যন্ত ক্লাস চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ল। পরীক্ষা চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল।’ তিনি জানান, ‘উচ্চ মাধ্যমিকের অনেকে খাতা দেখছেন। আমাদের মতো যাঁরা এই হেড এগজামিনার ছিলাম, তাঁদের খুব অসুবিধা হয়ে গেল। সর্বোপরি ছাত্র-ছাত্রীরা যাঁদের এতদিন ধরে পেল, আজ থেকে তাঁরা চাকরিতে নেই। এতে ছাত্র-ছাত্রীরাও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল।’
এই প্রসঙ্গে পশ্চিম বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) সঞ্জয় পাল বলেন, ‘এখনও পুরো তালিকা পাইনি। আশা করছি, তাড়াতাড়ি তা পাব। তারপরই কিছু বলতে পারব।’