ডাইনি প্রথার বিরুদ্ধে মিমি-র বেঁচে থাকার লড়াই, জেনে নিন কেমন হল ওয়েব সিরিজটি ?

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ‘মানুষ দেখিলেই তার অনিষ্ট-স্পৃহা জাগিয়া ওঠে । ওই সর্বনাশী লোলুপশক্তিটা সাপের মতো লকলকে জিভ বাহির করিয়া ফণা তুলিয়া নাচিয়া ওঠে…’

সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গল্পে ‘ডাইনি’-কে এমনভাবেই বর্ণনা করেছিলেন । আসলে কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের চোখে ‘ডাইনি’-র সংজ্ঞাটা এমনই । ডাইনি মানেই অভিশপ্ত, কারও উপর যার নজর পড়লেই নাকি তার মৃত্যু অনিবার্য । সমাজের সেই রূঢ় বাস্তবকে তাঁর গল্পে তুলে ধরেছিলেন সাহিত্যিক । ‘ডাইনি’ কিন্তু একেবারেই কল্পনা জগতের নয় । সমাজের এই কুসংস্কারের তলায় চাপা পড়ে বিশ্বজুড়ে কত রক্তমাংসের মানুষ বলি হয়েছেন । সাধারণ গৃহবধূ বা বাড়ির মেয়ে থেকে মুহূর্তে হয়ে উঠেছেন ‘ডাইনি’ । তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গল্পের শেষ পাতায় জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া ‘ডাইনি’-কে আঁকলেন তাঁর সাহিত্যিক মননে । তবে,পরিচালক নির্ঝর মিত্র বললেন জীবনযুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প । কেমন হল হইচই-এ সদ্য
মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব সিরিজ ‘ডাইনি’। ট্রেলার দেখে তো দর্শকদের প্রত্যাশা দ্বিগুণ হয়েছিল । মিমি চক্রবর্তী কি পারলেন প্রত্যাশা পূরণ করতে ?

ডাইনি । মানুষের মনের অন্ধকার থেকে তৈরি হওয়া একটা অসুখ, রোগ । যে অসুখ মধ্যযুগ থেকে চলছে । আজ ২০২৫ । সভ্যতা নাকি এগিয়ে গিয়েছে, মর্ডান যুগ । কিন্তু, মানসিকতা সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতার । এখনও খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায়, ‘ডাইনি’ সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে । কখনও লোহার রড, লাঠি, বাঁশ দিয়ে, কখনও জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে ।

আরও পড়ুন:- আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পান। কিভাবে ? জানতে বিস্তারিত পড়ুন

সেই ‘ডাইনি’ আবার ধর্ষণের শিকার হচ্ছে । সবটাই জীবন্ত দলিল হয়ে উঠেছে ডাইনি ওয়েব সিরিজে ।

নির্ঝর মিত্রের সিরিজটি আসলে তৈরি হয়েছে দুই বোনের গল্পকে কেন্দ্র করে । প্রেক্ষাপট উত্তরবঙ্গ । সিরিজ শুরুই হচ্ছে পাতা-র লন্ডন থেকে শহরে ফেরার ঘটনা দেখিয়ে । মাঝে মাঝে পাতা-র স্মৃতিতে ফিরে এসেছে পুরনো ঘটনা । বাবার সঙ্গে তাঁর ঝামেলা, বাড়ি থেকে তাঁর লন্ডনে পালিয়ে যাওয়া…বহু বছর পর দেশে ফিরেছেন বাবার সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার জন্য । কিন্তু সমস্যা একটাই । বোন লতা-কে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সম্পত্তির ভাগ পাবে না সে । তারপরই শুরু হয় লতা-র খোঁজ । কিন্তু, এখানে ছোট থেকেই দুই বোনের সম্পর্ক বেশ তিক্ত । তবে, নিজের স্বার্থেই লতার খোঁজ শুরু করে সে । পৌঁছে যায় খুনিয়াবাড়ি গ্রামে । সেখানেই পাতা দেখে, লতা-কে ডাইনি সন্দেহে মেরে ফেলা হচ্ছে । তারপরই শুরু হয় বোনু-কে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনার লড়াই ।

পাতা-র চরিত্রে অনবদ্য মিমি চক্রবর্তী । সিরিজে এক অন্য মিমি-কে দেখা গিয়েছে । কখনও কাটারি হাতে বা ছুরি নিয়ে শত্রুদের দমন করেছেন । রক্তাক্ত মুখে বলা মিমি-র সংলাপ বেশ প্রশংসনীয় । পাতা চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছেন তিনি । অন্যদিকে লতা-র ভূমিকায় নজর কেড়েছেন কৌশানী মুখোপাধ্যায় । সিরিজে আরেকজনের কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন বিশ্বজিত্‍ দাস । সিরিজের খলনায়ক । জানগুরু-র চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন । যাঁর সঙ্গে লড়াই মিমি চক্রবর্তীর । জিভ বের করে অঙ্গভঙ্গি করা, তাঁর নিষ্ঠুর, শয়তান রূপ তাঁর শরীরী ভাষায় সমাজের হিংস্র দিককে ফুটিয়ে তুলেছেন । শুধু এই তিনটি চরিত্র নয়, নার্স, ডাক্তার থেকে ডাক্তারের বউ হোক বা জানগুরুর ছেলে মাইঠ্যাল…প্রত্যেকের অভিনয় প্রশংসনীয় ।

৬ পর্বের সিরিজের গল্পের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা রয়েছে । গতি কোথাও এতটুকু শ্লথ হয়নি । শেষেও একটা টুইস্ট রয়েছে । গল্পের বুনন থেকে চরিত্রায়ণ, সংলাপ থেকে প্রোজেকশন, হাড়হিম করা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক…প্রশংসনীয় । বলা ভাল, অনেকদিন পর বাংলা ওয়েব সিরিজে এমন কাজ দেখলেন দর্শকরা । একইসঙ্গে হইচই-এর সিরিজের তালিকায় অন্যতম সেরার তালিকায় জুড়ে গেল ‘ডাইনি’। তবে, কোথাও যেন মনে হয়েছে শেষে যেন কোথাও একটা অতৃপ্তি থেকে গিয়েছে । আরও একটা পর্ব এই সিরিজে যোগ হলে মন্দ হত না ।

আরও পড়ুন:- কাকভোরে সমুদ্রে সুনিতাদের সফল অবতরণ, দেখুন গায়ে কাঁটা দেওয়া VIDEO

আরও পড়ুন:- বোনাস নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য সুখবর, বিস্তারিত জেনে নিন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন