Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- তসলিমা নাসরিন আচমকাই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন বঙ্গ রাজনীতিতে ৷ তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাজ্যসভায় সরব হয়েছেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ৷ তার পর থেকেই এই ইস্যুতেই মন্তব্য করতে শুরু করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ৷ সেই তালিকায় নবতম সংযোজন নওশাদ সিদ্দিকী ৷
বাংলাদেশি এই সাহিত্যিককে কি বাংলায় ফিরিয়ে আনা উচিত, এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি নওশাদ ৷ কিন্তু ঘুরিয়ে যা বলেছেন, তা মিশে ছিল কটাক্ষের সুর ৷
মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাইরে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয় নওশাদকে ৷ উত্তরে ভাঙড়ের বিধায়ক বলেন, ‘‘কলকাতায় ফিরিয়ে দিলে দেশের জিডিপি বেড়ে যাবে ৷ কলকাতায় ফিরিয়ে দিলে, যারা ব্যাংক লুঠ করে টাকা নিয়ে গিয়েছে, তাদের টাকা ফিরে আসবে ৷ তসলিমা নাসরিনকে কলকাতা ফিরিয়ে আনলে বছরে 2 কোটি চাকরি দেওয়া হয়ে যাবে ৷ তসলিমা নাসরিনকে কলকাতা ফিরিয়ে নিয়ে এলে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমে যাবে ৷’’
এখানেই না থেমে রাজ্যসভার সাংসদ বিজেপির শমীক ভট্টাচার্যকে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি ৷ বলেছেন, ‘‘এত যখন বলছেন, শমীকবাবুকে বলব সংসদে আওয়াজ তুলুন, তসলিমা নাসরিনকে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য ৷’’
গত সোমবার রাজ্যসভায় তসলিমা নাসরিন প্রসঙ্গ তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ৷ তিনি সেদিন বলেছিলেন, তসলিমা নাসরিন কলকাতায় ফিরতে চান ৷ তসলিমা নাসরিনের কাছে কলকাতা শহর প্রাণের শহর ৷ তসলিমা নাসরিন কলকাতায় ফিরে আসতে চান, বাংলায় কথা বলতে চান, বাংলায় কবিতা লিখতে চান, বাংলায় সাহিত্য সৃষ্টি করতে চান ৷’’
সেদিন সংসদের উচ্চকক্ষে দাঁড়িয়ে শমীক আরও বলেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ মানে কাজী নজরুলের কলমে শ্যামা মায়ের বন্দনা ৷ পশ্চিমবঙ্গ মানে নারীমুক্তি ও নারী স্বাধীনতার দৃষ্টান্ত৷ কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় থেকে কবি চন্দ্রাবতী ৷’’ পাশাপাশি নাম না করে কটাক্ষ করেছিলেন বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকেও ৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাংলার ছদ্ম-প্রগতিশীলতার আড়ালে চূড়ান্ত তোষণ, নীতি ও মৌলবাদের কাছে লজ্জাজনক আত্মসমর্পণের দিন শেষ হোক ৷ তসলিমার প্রত্যাবর্তন হোক ৷’’
এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সোশাল মিডিয়ায় শমীককে ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্ট করেন তসলিমা ৷ সেই পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, 2007 সালে সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত তাঁকে কলকাতায় ফেরানো নিয়ে রাজ্যসভায় সরব হয়েছিলেন ৷ পরবর্তী 18 বছরে কেউ তাঁকে নিয়ে এমন দাবি তোলেননি ৷ তবে তিনি কলকাতায় ফিরতে চান ৷ আর শমীক তাঁর মনের কথাই কার্যত তুলে ধরেছেন সংসদে ৷
পোস্টে তসলিমা লেখেন, ‘‘মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে নিজের জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত আমি, বাংলায় লেখালেখি চালিয়ে যেতে হলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিবেশে বাস করা আমার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ, তা তিনি (শমীক ভট্টাচার্য) উপলব্ধি করেছেন বলে তাঁকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা ।”
শমীকের সুরে সুর মিলিয়ে তসলিমাকে কলকাতায় ফেরানোর দাবিতে সেদিনই সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ ৷ তবে লোকসভার প্রাক্তন দলনেতা তথা বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ কংগ্রেসের অধীররঞ্জন চৌধুরী অবশ্য জানিয়েছিলেন যে তসলিমার কলকাতায় ফেরা উচিত নয় ৷ তাঁর মতামত, এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে অশান্তি বৃদ্ধি করা উচিত নয় ৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মৌলবাদীদের হুমকির মুখে পড়েছিলেন তসলিমা নাসরিন ৷ সেই কারণে 2004 সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি ৷ তার পর তিনি কলকাতায় থাকা শুরু করেন ৷ কিন্তু তাঁর কলকাতায় থাকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় ৷ সেই কারণে তাঁকে কলকাতাও ছাড়তে হয় ৷ তার পর থেকে ভারতের অন্যত্র থাকেন ৷
সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের সরকার ৷ সিপিএমের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেই প্রসঙ্গ সোমবার উঠে আসে সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায় ৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘একটা সময় কলকাতায় থাকা তাঁর পক্ষে নিরাপদ ছিল না । তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে হয়েছিল ।’’ তবে তসলিমা চাইলেই কলকাতায় ফিরতে পারেন ৷ কিন্তু পুরোটাই রাজ্য ও কেন্দ্রের বিষয় বলে মনে করেন তিনি ৷
আরও পড়ুন:- বি.কম কোর্স করার জন্য কলকাতার সেরা কমার্স কলেজ কোনগুলো ? জেনে নিন
আরও পড়ুন:- ৯ মাস মহাকাশে কী খেয়ে কাটালেন সুনীতারা? জানতে বিস্তারিত পড়ুন