Bangla News Dunia, Pallab : একদিকে দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে ভোটার সংশোধন কর্মসূচি অন্যদিকে এবার নতুন এক কাজ সম্পর্কে খবর ছড়াচ্ছে। এই নতুন কার্ডটির নাম হলো সিনিয়র সিটিজেন কার্ড। এই কার্ড কি আদৌ নাগরিকত্ব ভ্রমণের কাজে লাগবে নাকি অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে? আপনি যদি রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে থাকেম এবং এই কাজ সম্পর্কের বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত করতে পারেন।
জানা গিয়েছে, বাংলার বয়স্ক নাগরিকদের জন্য আসছে একটি নতুন কার্ড— নাম হল সিনিয়র সিটিজেন কার্ড। যাঁরা সরকারি সুবিধায় নাম নথিভুক্ত করেও এখনও পর্যন্ত কোনো পরিষেবা পাইনি, তাঁদের জন্য এই কার্ড একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। এই কার্ড শুধুমাত্র একটি পরিচয়পত্র নয়, বরং প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সমস্ত সরকারি সুবিধা পাওয়ার চাবিকাঠি হতে চলেছে।
এই বিশেষ কার্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রবীণরা আর লাইনে না দাড়িয়ে বা বারবার সরকারি অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার না হয়ে সুবিধা পাবেন। এমনকি একাধিক রাজ্যে এটি ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। এবার পশ্চিমবঙ্গেও এই কার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার বলে জানা গিয়েছে।
সিনিয়র সিটিজেন কার্ড কী?
জানা যায়, সিনিয়র সিটিজেন কার্ড হচ্ছে এমন একটি সরকার স্বীকৃত পরিচয়পত্র, যা মূলত বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য নির্দিষ্ট করা হবে। পরিচয় পত্রের পাশার এটি প্রবীণদের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে অগ্রাধিকার সুবিধা দেওয়ার একটি উপায় হবে বটে। স্বাস্থ্য, পরিবহণ, ব্যাংকিং, করছাড়, সামাজিক সুরক্ষা—সব ক্ষেত্রেই এই কার্ড বিশাল গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানা যায়
সাধারণত দেশের বা রাজ্যের প্রবীণ নাগরিকদের জীবনযাত্রা সহজ ও সম্মানজনক করার লক্ষ্যেই এই কার্ড চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যের নানা ব্লক ও জেলা স্তরে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কিছু জায়গায় এটি চালু করাও হয়েছে।
এই কার্ড চালুর প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে দেখা যায়, অনেক প্রবীণ নাগরিক সরকারি প্রকল্পের নানা সুবিধা সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখেনা আবার অনেকে আবেদন করেও সঠিকভাবে সুবিধা পাচ্ছে না তারা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সিনিয়র সিটিজেন কার্ড চালু হলে একাধিক দিক থেকে সুবিধা পেতে পারেন তারা।
প্রথমত, এটি প্রবীণদের জন্য একটি ইউনিফায়েড ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ করবে যা সকল প্রকল্পে পরিচয়পত্র হিসাবে গণ্য করা হবে। দ্বিতীয়ত, সরকারি কর্মীরা সহজেই বুঝতে পারবেন, কে প্রকৃতই প্রবীণ নাগরিক এবং কে আগে সুবিধা পাওয়ার যোগ্য ।
পশ্চিমবঙ্গে কারা এই কার্ড পেতে পারেন?
পশ্চিমবঙ্গে সিনিয়র সিটিজেন কার্ড পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা দরকার যেমন:
- পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
- আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ৬০ বছর বা তার বেশি হওয়া উচিত
- কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারি কর্মচারী না হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুযোগ পেতে পারেন
- শারীরিকভাবে অসুস্থ বা নির্ভরশীল ব্যক্তিরা বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন
এর কারন হল বর্তমানে সরকার চাইছে, এমন প্রবীণ ব্যক্তিদের আগে চিহ্নিত করে তাঁদের বিশেষভাবে সহায়তা করা দরকার।
এই কার্ডের মাধ্যমে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে?
সিনিয়র সিটিজেন কার্ড শুধুমাত্র একটি আইডি কার্ড হবে না, বরং এটি বহুমুখী সুবিধার বাহকপ হবে। নিচে এই কার্ডের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা তুলে ধরা হ’য়েছে।
সরকারি প্রকল্পে অগ্রাধিকার
যে কোনও সরকারি প্রকল্পে আবেদন করলে সিনিয়র সিটিজেন কার্ডধারীরা আগে পরিষেবা প্রদান করা হবে। যেমন,স্বাস্থ্য সাথী, কৃষক বন্ধু বা বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পে আবেদন করলে অন্যদের আগে তাঁদের সুবিধা দিতে হবে।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুবিধা
সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বা মোবাইল হেলথ ক্যাম্পে প্রবীণদের জন্য বিশেষ ছাড়ের সুবিধা, বিনামূল্যে ওষুধ, ফ্রি চেকআপ, ও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। কিছু ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও ফ্রিতে করা হতে পারে।
পরিবহণে ছাড়
ট্রেন হোক কিংবা বাস এবং অন্যান্য সরকার অনুমোদিত যানবাহনে ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হবে। IRCTC-র ট্রেনে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় বর্তমানে কেন্দ্রীয়ভাবে দেওয়া হয়ে থাকে, রাজ্যও নিজের পরিসরে তা বাস্তবায়নের চিন্তা করছে বলে জানা যায়।
ব্যাঙ্ক এবং বিনিয়োগে অতিরিক্ত সুবিধা
সিনিয়র সিটিজেন কার্ডধারীরা ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট করলে সাধারণ গ্রাহকের থেকে বেশি সুদের হার পেতে পারেন। সরকারি আর্থিক প্রকল্পে ইনভেস্ট করলে তাঁদের জন্য থাকবে অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগও।
আয়কর ছাড়
আয়কর আইনে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য রয়েছে ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা। এই কার্ড দেখালেই তাঁরা সেই সুবিধা নিতে পারবেন সহজেই , কোনও অতিরিক্ত প্রমাণপত্র ছাড়াই সুবিধা পাবেন।
বৃদ্ধাশ্রমে সুযোগ
এমনকি অর্থনৈতিক বা পারিবারিক সমস্যার কারণে যারা বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চাই, তাঁদের সিনিয়র সিটিজেন কার্ড থাকলে সহজে ভর্তি হওয়া যাবে সরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হোম গুলিতে।