ফাঁসির পরও স্নায়ু সচল কিশোর-কিশোরীর খুনীর, সেই কুখ্যাত দুষ্কৃতী রঙ্গা-বিল্লাকে নিয়ে নতুন সিরিজ

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- লাইমলাইটে নেটফ্লিক্সের নতুন সিরিজ়, পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানির ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’। সিরিজ়ের একটি গোটা এপিসোড তৈরি হয়েছে রঙ্গা-বিল্লা মামলা নিয়ে, যাদের বিরুদ্ধে অপহরণ-খুন-এর অভিযোগ উঠেছিল। পরে তারা দোষী সাব্যস্ত হয়, হয় ফাঁসির সাজাও। কিন্তু সিরিজ়ে দেখানো সবটাই কি সত্যি? কী ঘটেছিল সে দিন? কেন আজও অপরাধীদের নাম শুনলে অনেকে চমকে ওঠেন,

১৯৭৮ সালের ২৬ অগস্ট, শনিবার ছিল বৃষ্টির দিন। অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর ‘যুববাণী’ কেন্দ্রে শো করতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ভাই-বোন: গীতা আর সঞ্জয়। প্রথমে ভাই-বোনকে অপহরণ, তার পর খুন। নয়াদিল্লির এই হত্যাকাণ্ড সেই সময়ে দেশ জুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। গীতা আর সঞ্জয়, দু’জনের বয়সই তখন ১৮-র নীচে। ১৪ বছরের সঞ্জয় চোপড়া সে সময়ে দশম শ্রেণির ছাত্র। দিদি গীতা চোপড়ার বয়স তখন ১৬। পড়ছে নয়াদিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজে। গীতা আর সঞ্জয়কে অপহরণ করে খুন করা হয়েছিল। যারা এই কাজ করেছিল, তাদের এক জনের নাম রঙ্গা ওরফে কুলজিৎ সিং। অন্য জনের নাম বিল্লা ওরফে জসবীর সিং। এই ঘটনা দেশজুড়ে গীতা-সঞ্জয় হত্যাকাণ্ড বা রঙ্গা-বিল্লা কাণ্ড নামেও পরিচিত। দিল্লির রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছিল এই ঘটনা। আন্দোলন চলেছিল বেশ কিছুদিন।

আরও পড়ুন:– পুনেতে বিরল রোগের প্রাদুর্ভাব, আক্রান্ত ৭৩ জন, কী এই GB সিনড্রোম?

গীতা-সঞ্জয়ের বাবা মদনমোহন চোপড়া সে সময়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন। নৌবাহিনীর আধিকারিকদের সরকারি বাসভবনে পরিবার নিয়ে থাকতেন। ১৯৭৮ সালের ২৬ অগস্ট রেডিয়োয় অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার জন্য ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছিল গীতা। বাড়ি থেকে বেরোনোর পর রেডিয়ো স্টেশনে যাওয়ার পথেই অঘটন ঘটে যায়। গীতা এবং সঞ্জয়কে অপহরণ করা হয়। ঘটনার অন্য়তম প্রত্য়ক্ষদর্শী ভগবান দাস নামে এক ব্যক্তি।

পথে ভগবান দাস-সহ আরও কয়েকজন একটি সর্ষে হলুদ রঙের গাড়ি দেখতে পান। চলন্ত ওই গাড়ির ভিতর থেকে ভেসে আসে আর্ত চিৎকার: এক নাবালক এবং নাবালিকার। গাড়ির কাছে গিয়ে ভগবান দেখতে পান, এক নাবালিকা চালকের চুল ধরে টানাটানি করছে। গাড়ির অন্য এক আরোহীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে এক নাবালক। গাড়ির ওই নাবালিকাই গীতা। নাবালক সঞ্জয়। গাড়িটিকে থামানোর চেষ্টা করলেও ভগবান এবং অন্য়রা ব্যর্থ হন। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করেও লাভ হয়নি। চলন্ত গাড়ি হারিয়ে যায় চোখের পলকে।

বৃষ্টির দিনে লিফট চাওয়া ভাই-বোন দুই কিডন্য়াপারদের খপ্পরে পড়েছিল। তখন দিল্লিতে এ ভাবে লিফট নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর রেওয়াজ ছিল। বৃষ্টির কারণেই তারা লিফট নিয়েছিল বলে তদন্তে জানতে পারে পুলিশ। সে দিন রাত হয়ে গেলেও ভাই-বোন বাড়ি না ফেরায় পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়। রাত ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ পুলিশকে বিষয়টি জানান গীতার বাবা। ঘটনার ২ দিন পর, অর্থাৎ ২৮ অগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় দিল্লি সংলগ্ন একটি জঙ্গল থেকে গীতা-সঞ্জয়ের দেহ উদ্ধার করেন এক গো-পালক। খবর দেন পুলিশে। তার পরই ঘটনাস্থলে গিয়ে গীতা এবং সঞ্জয়ের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কয়েক সপ্তাহ বাদে গ্রেপ্তার করা হয় দুই অপহরণকারী রঙ্গা এবং বিল্লাকে। ৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের।

আরও পড়ুন:– রাজ্যের অ্যাথলিটদের জন্য ‘কল্পতরু’ মমতা, বিস্তারিত জানুন

তদন্তে জানা যায়, মুক্তিপণের জন্যই সঞ্জয় এবং গীতাকে অপহরণ করেছিল রঙ্গা-বিল্লা। কিন্তু অপহরণের পর তাদের মনে হয় যে, সঞ্জয়-গীতার পরিবারের সামর্থ্য তেমন নেই।
এর পর শুরু হয় বিচারপর্ব। রঙ্গা-বিল্লাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় দিল্লির আদালত। যাকে চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্তরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে হাইকোর্ট। এর পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় তারা। ১৯৮১ সালের ২১ এপ্রিল তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখে শীর্ষ আদালত। যদিও দু’জনেই এর আগে থেকে বিবিধ কুকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল।

এর পর ডাকা হয় এই কাজে সিদ্ধহস্ত কালু ফকিরাকে। সিরিজ়ে তাঁরও উল্লেখ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রথমবার জেলে ঢুকে রঙ্গা-বিল্লার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ পান কয়েকজন সাংবাদিক। ১৯৮২-র ৩০ জানুয়ারি বিল্লার সাক্ষাৎকার নেন ৫ সাংবাদিক। তবে সাক্ষাৎকার দিতে চায়নি রঙ্গা। সিরিজ়ে যদিও একজনেই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে—যা আদতে ঠিক নয়। ১৯৮২ সালের ৩১ জানুয়ারি তাদের ফাঁসি হয়।

এই ঘটনা কভার করা সাংবাদিকরা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে যেমন দিল্লির নির্ভয়ার গণধর্ষণ-খুনের ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা হয়, সেই সময়ে এই ঘটনাও তেমন ভাবে বর্ণিত হতো। তখন দিল্লিতে অপরাধের হার এত বেশি ছিল না। তাঁরাই দাবি করেছেন, ফাঁসির অব্যবহিত পর বিল্লার মৃত্যু হলেও রঙ্গার স্নায়ু সচল ছিল। তার পর পা ধরে টেনে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছিল।
সিরিজ়ে এই ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে। তিহাড় জেলের প্রাক্তন এএসপি সুনীলকুমার গুপ্ত একটি ইন্টারভিউয়ে সে কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন। অর্থাৎ এই সিরিজ়ের সিংহভাগই সত্যি।

আরও পড়ুন:– বড় খবর! কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজার নিয়োগ হতে চলেছে রাজ্যে

 

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন