হরষিত সিংহ ও পরাগ মজুমদার, মালদা ও বহরমপুর: প্রবল বৃষ্টি আর ধসে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে যখন বিপর্যয়, তখন বন্যা আর ভাঙনের আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে মালদা ও মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। মালদায় ফুঁসছে গঙ্গা ও ফুলহরও। ফরাক্কায় গঙ্গার জলস্তর বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। তবে মূলত বিহার ও ঝাড়খণ্ডের নদীগুলো থেকে জল নামতে থাকায় মালদা ও মুর্শিদাবাদে গঙ্গা-ফুলহরে ফের জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে, সোমবার ধনদেবীর আরাধনার দিনেই গঙ্গার ভয়াবহ ভাঙনে ঘরছাড়া হতে হল সামশেরগঞ্জের বহু মানুষকে। যে কোনও সময়ে নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে সামশেরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রক্ষাকালী মন্দির। পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ ধরা পড়েছে এলাকার বাসিন্দাদের কথায়। স্থানীয় বাসিন্দা রাখি দাসের কথায়, ‘কোনও কাজই হচ্ছে না। মাঝরাত থেকে এখানে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অথচ প্রশাসন নির্বিকার।’ এদিকে, সামশেরগঞ্জে বাঁধে ফাটল ধরার বিষয় প্রকাশ্যে আসতেই প্রশাসনের তরফে প্রচুর বালির বস্তা পাঠানো শুরু হয় নৌকায় করে। তবে সেই বালির বস্তা ভর্তি নৌকা ঘুরিয়ে দেন ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, এই বালির বস্তা দিয়ে স্থায়ী সমাধান হবে না। তাই তাঁরা বালির বস্তা ভর্তি নৌকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। এলাকার মানুষজন চান স্থায়ী সমাধান। মায়া সিংহ নামে এক বৃদ্ধা বলেন, ‘এভাবে লোক দেখিয়ে কয়েকটা বালির বস্তা ফেলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এখানে। দু’-একদিনের মধ্যে পুরো গ্রাম ধসের কবলে পড়ে গঙ্গায় হয়তো বিলীন হয়ে যাবে। পাকাপাকি কাজ প্রয়োজন।’
নিম্নচাপের বৃষ্টির ফলে নদীতে জল বাড়ায় আরও ভয়ানক চেহারা নিয়ে ধস নামতে শুরু করেছে গঙ্গাপাড়ে। এদিন বেলা বাড়তেই গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে যায় নদীর ধারে থাকা বাঁধের একটি রাস্তার একাংশ। মন্দিরের বিশালাকার ফাটল ধরে নীচের অংশের মাটি গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে পুরোপুরি। প্রায় ৯০ মিটার জমিও তলিয়ে গিয়েছে।
সোমবার থেকে ফের গঙ্গা ও ফুলহরে জলস্তর বাড়তে থাকায় চরম দূর্ভোগে পড়েছেন মালদার মানিকচক, রতুয়া-১ ও বৈষ্ণবনগরের নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গ সহ নেপালে ভারী বৃষ্টি হয়। সোমবার থেকেই জল বাড়ছে গঙ্গা ও ফুলহরের।
যদিও রবিবার পর্যন্ত ফুলহরের জলস্তর স্থির ছিল। সোমবার থেকে আবার জল বাড়তে থাকায় আতঙ্কে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। যদিও এখনও মহানন্দা নদীর জলস্তর বাড়েনি। তবে আগামীতে মহানন্দার জলস্তর বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে এমনটাই দাবি সেচ দপ্তরের। কারণ উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির জল মালদার নদীগুলিতে না পৌঁছালেও নেপালের বৃষ্টির জল গঙ্গা, ফুলহর ও মহানন্দা দিয়ে নামে। মূলত নেপাল ও বিহারে ভারী বৃষ্টি হলে আতঙ্ক বাড়ে মালদায়।
মালদা জেলা সেচ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার মালদার মানিকচক ঘাটে গঙ্গার জলস্তর ছিল ২৩.৬২ মিটার। ফুলহর নদীর জলস্তর ছিল ২৫.৩৫ মিটার। সোমবার গঙ্গার জলস্তর বেড়ে হয় ২৩.৭৮ মিটার। বিপদসীমা থেকে মাত্র ০.৯১ মিটার নীচে। ফুলহর নদীর জলস্তর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.৪৭ মিটার। বিপদসীমা থেকে ১.৯৫ মিটার নীচে। তবে মহানন্দা নদীর জলস্তর দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৭.৭২ মিটারে।
গঙ্গা ও ফুলহরের ভাঙনে বিপর্যস্ত মালদার মানিকচক ব্লকের একাধিক এলাকা। ভূতনির একাধিক গ্রাম এখনও জলবন্দি রয়েছে।