বই পুড়িয়ে দিয়েছে বাবা, পড়ার দাবিতে থানায় 2 শিশুকন্যা

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ওরে, এবার পড়তে বস ! দিনভর খেলাপাগল কচিকাঁচাদের পড়াতে গিয়ে কালঘাম ছোটে বাবা-মায়েদের ৷ স্কুলের ইঁদুর-দৌড় থেকে যাতে সন্তান পিছিয়ে না-পড়ে, সেজন্য নিতে হয় নানা অছিলা, দিতে হয় চকোলেট-আইসক্রিমের মতো ‘ঘুষ’ ৷ তবে এর বিপরীত ছবিও রয়েছে ৷ আলিপুরদুয়ারের দুই খুদে বাবার বিরুদ্ধে সটান হাজির হয়েছে থানায় ৷ পুলিশ-কাকুর কাছে নালিশ ঠুকে তারা জানিয়েছে যে, তাদের পড়াশোনা করতে দিচ্ছেন না বাবা ৷ তিনি নাকি দুই মেয়ের বই পুড়িয়ে দিয়েছেন ৷

আলিপুরদুয়ারের শামুকতলা থানা এলাকার এই ঘটনা হতবাক করেছে পুলিশ ও প্রশাসনকে ৷ তবে স্কুল ড্রপ-আউট ও ছোটদের মোবাইল আসক্তির যুগে দুই খুদের পড়ার প্রতি এমন আগ্রহ আশা জাগিয়েছে শিক্ষামহলে ৷

আলিপুরদুয়ার জেলার দুই নং ব্লকের শামুকতলা থানা এলাকায় ধর কলোনির বাসিন্দা দুই শিশুকন্যা পড়াশোনার দাবি নিয়ে থানার দ্বারস্থ হয় ৷ দুই বোনের ছোটটি প্রথম শ্রেণি এবং অন্যজন তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া । দুজনেই পড়াশোনা করতে ভালোবাসে ৷ তবে তাদের বাবা নাকি একেবারেই পড়তে দেন না ৷ দুই শিশুকন্যার অভিযোগ, পড়াশোনা করতে বসলেই বকা দেন বাবা । ঠিকমতো স্কুলে যেতে দেন না । আর বেশিরভাগ সময়ই ঝগড়া করেন তাদের মায়ের সঙ্গে । থানার গিয়ে এসবই জানিয়েছে দুই বোন ।

এই সব ঘটনা শুনে তাদের মা ও বাবাকে ডেকে পাঠায় পুলিশ । দুই শিশুর বাবা প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে মেয়েদের আনা সব অভিযোগ মেনে নিয়েছেন ৷ এমন ভুল ভবিষ্যতে আর কখনও করবেন না বলে হাতজোড় করে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি ৷

আরও পড়ুন:- গরমে ভিতর থেকে শরীর ঠান্ডা রাখে এই ৭ খাবার, জন্ডিস-ডায়রিয়া হয় না

আলিপুরদুয়ারের শামুকতলা থানার প্রাক্তন ওসি জগদীশ রায় বলেন, “আমি ক’দিন হল শামুকতলা থানা থেকে বদলি হয়েছি । হঠাৎ দেখি দুই খুদে শিশুকন্যা থানায় আসে । তাদের দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । তাদের মুখ থেকে বাবার অত্যাচারের কথা শুনে আরও অবাক হয়েছি । পরবর্তীতে ওদের মা এবং বাবাকে ডেকে পাঠাই । ওদের বাবা বিষয়টি প্রথমে মানতে চাননি, পরে অবশ্য মেনে নেন । আর কখনও দুই সন্তান ও স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । যদিও এই বিষয়ে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি ।”

জানা যায়, ওই দুই খুদে শিশুকন্যার বাবা খাবারের হোটেলে কাজ করেন এবং মা পরিচারিকার কাজ করেন । স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে বর্তমানে দুই সন্তানকে নিয়ে তাদের মা অন্য বাড়িতে ভাড়া থাকেন । তিনি বলেন, “স্বামী আমাদের উপর অত্যাচারের করে । মারধর করে ৷ বাচ্চাদের পড়াশোনা করতে দেয় না । খেতে দেয় না ৷ শুধু তাই নয়, বাচ্চাদের বইও জ্বালিয়ে দিয়েছে । বাচ্চাদের নিয়ে আমি ভাড়া বাড়িতে থাকি । প্রতিবেশীর বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাই । আমিও চাই আমার মেয়েরা পড়াশোনা করুক । ওরা থানায় গিয়েছিল পুলিশের সাহায্য চাইতে ।”

এই দুই শিশুকন্যার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহের কথা জানতে পেরে তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রামের বিধায়ক মনোজ কুমার ওঁরাও । তিনি দুই শিশুকন্যার পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন ৷ বিধায়ক বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা । যেখানে আমরা বাচ্চাদের পড়তে বসতে বাধ্য করি, জোড় করে পড়তে বসতে বললেও তারা বসে না, সেখানে একদম ছোট ছোট দুটো বাচ্চা পড়তে চেয়েও পড়াশোনা করতে পারছে না । সেজন্য তারা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে । এটা সত্যি খারাপ ব্যাপার । তাদের বাবা নাকি পড়াশোনা করতে দেয় না । বইপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছে ৷ এই খবর পেয়ে আমরা দেখা করতে এসেছি । আমরা তাদের দায়িত্ব নিয়েছি ৷ তাদের পড়াশোনা করতে যা যা লাগবে আমরা সব দেব ।”

জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান লক্ষ্যমোহন রায় বলেন, “জলপাইগুড়ি জেলায় এমন ঘটনার খবর পাইনি । তবে অনেক অভিভাবক আছেন, যাঁরা ছাত্রছাত্রীদের বই বিক্রি করে দেন কেজি দরে । আমরা জেলার প্রত্যেক পার্শ্বশিক্ষক, শিক্ষিক শিক্ষিকাদের বলেছি, প্রত্যেক ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে । কোনওভাবেই যাতে তারা স্কুলবিমুখ না-হয়, তার খোঁজ নিতে বলা হয়েছে । আমাদের জেলায় ড্রপ আউট খুব কম রয়েছে ৷ জেলায় 1209টি স্কুল রয়েছে । প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা এই স্কুলগুলোর দায়িত্বে রয়েছেন । তবে এই বাচ্চাদের আমি স্যালুট করি যারা নিজেদের পড়ার জন্য পুলিশের কাছে গিয়েছিল ।”

শামুকতলা থানার ওসি বিশ্বজিৎ দে বলেন, “আমি সদ্য থানার দায়িত্ব নিয়েছি ৷ ব্যক্তিগত ভাবে এই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বাচ্চাদের পড়াশোনার সব রকমের সুবিধার ব্যবস্থা করব ।”

আরও পড়ুন:- ম্যালেরিয়া থেকে শিশুদের কীভাবে রক্ষা করবেন ? জেনে নিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন