বঙ্গে মহামারীর সেকাল ও একাল

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

Bangla News Dunia , পল্লব চক্রবর্তী :- বাংলায় মহামারী বা অতিমারীর ঘটনা নতুন নয় । কিছু মহামারী বিশেষজ্ঞ এবং ঐতিহাসিকরা মনে করেন কুম্ভমেলার পুণ্যার্থীদের থেকে সারা বিশ্বে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, মধ্য প্রাচ্য, পূর্ব আফ্রিকা, মেডিটারেনিয়ান সমুদ্র সন্নিহিত অঞ্চলে। ১৮২৬ থেকে ১৮৩৭ সালের মধ্যে এর বিস্তার ঘটে চিন, জাপান, পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ, এবং আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত সর্বমোট সাত বার বিশ্বে অতিমারী কলেরা তাণ্ডব চালায়। ১৯৪৩ সালে কলেরাতে মারা যায় ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৪২৮ জন মানুষ। ১৮১৭ থেকে ১৮২৪ সালের মধ্যে কলকাতা সন্নিহিত নিম্ন গাঙ্গেয় অঞ্চল থেকে ছড়িয়ে পড়ে এশিয়াটিক কলেরা।

এরপর ১৮৯৬ সালে ভারতে প্লেগের সংক্রামণ শুরু হলেও বাংলায় ১৮৯৮ এর দিকে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতা, হুগলী, বর্ধমান, মেদিনীপুর, ২৪ পরগণা, ভয়ঙ্কর ভাবে সংক্রামিত হয়। কলকাতার বেনিয়াপুকুর, বড়বাজার, কুমোরটুলি, শ্যামপুকুরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন প্লেগ স্যানিটাইজেসন কমিশনার ক্লেমাসো লিখেছেন – প্লেগ গ্রামবাংলার খুব বেশি ক্ষতি করেনি। সংক্রামিত জনসংখ্যার নব্বই শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়।১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু ভারতে ‘বোম্বে ফিভার’নামে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের সংক্রমণ বোম্বেতে প্রথম পরিলক্ষিত হয় বলে এরূপ নামকরণ। ২০০০সালে ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল’ এর এক প্রবন্ধে প্রায় ১২ বিলিয়ন লোকের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। যা ছিল তৎকালীন সমগ্র জনসংখ্যার নিরিখে ৫ শতাংশ।

করোনা

ব্রিটিশ শাসনে ম্যালেরিয়াতে ভারতে মৃত্যুর হার লাগাম ছাড়া ছিল। ১৯২১ সালে ৭ লক্ষ ৩৭ হাজার ২২৩ জন। ১৯২৯ এ ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ৪১৪ জন। ১৯৩৮ সালে ৪ লক্ষ ১৬ হাজার ৫২১ জন। ১৯৪৪ সালে ৭ লক্ষ ৬৩ হাজার ২২০ জন। ১৯৭৪ সালে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ‘স্মল পক্সে’ মার যায় প্রায় ১৫০০ জন। মূলত বিহার, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের। ভারত সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সংক্রামিতের সংখ্যা জানায় ৬১,৪৮২ জন। এই রোগে সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে ভারতে সবচেয়ে বেশি সংক্রামিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে এই রোগকে নির্মূল করতে টার্গেট জিরো মিশন চালু করে ভারত সরকার।

মহামারী কখনই সমাজের নিম্নস্তরের কম অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন লোক বা গোঁড়া অন্ধ বিশ্বাসী মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। পৌঁছে গিয়েছে সমাজের প্রতিটি স্তরে, তা সে সেকালেই হোক বা একালে। সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে প্রশাসন, চিকিৎসা, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি জন শিক্ষার প্রসার ঘটেছে তা সত্ত্বেও খামতি রয়ে যাচ্ছে করোনা মোকাবিলায়। তার প্রথম কারণ দারিদ্রতা, দ্বিতীয় কারণ গোঁড়ামি ও কুসংস্কার। যদিও এই সমস্যার রাতারাতি পরিবর্তন অসম্ভব। তাহলে কি এই সংক্রমণ থেকে আমরা রেহাই পাব না? আমাদের বাচাঁতে পারে এক মাত্র বিজ্ঞান। দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই কিন্তু তার জন্য জনসাধারণকেই বিশ্বাস করতে হবে বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্য বিধির উপর। গোঁড়ামি বর্জন করতে হবেএবং প্রশাসনকে সর্বত ভাবে সহযোগীতা করতে হবে।

আশা রাখি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি সদিচ্ছা ও মানবিকতার সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভারতবর্ষ থেকে মারণ করোনাকে বিদায় জানাতে বাধ্য করবে।

Highlights

1. জনসাধারণকেই বিশ্বাস করতে হবে বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্য বিধির উপর

2. আমাদের বাচাঁতে পারে এক মাত্র বিজ্ঞান

#মহামারী #Corona

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন