বর্ষায় ছড়াচ্ছে স্নায়ুর এই বিরল রোগ, কেন হচ্ছে ? কী উপসর্গ ? জেনে নিন বৃত্তান্ত

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Updated on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বিরল এক স্নায়ুর রোগ নিউরোসিস্টিসারকোসিস । সঠিক সময়ে ধরা না-পড়লে ও এর চিকিৎসা শুরু না-হলে, এই রোগ মস্তিষ্কে বড়সড় ক্ষতি করে দিতে পারে ৷ বর্ষার সময়ে বেশি করে আঘাত হানছে স্নায়ুর এই রোগ । পশ্চিমবঙ্গও এখন ভরা বর্ষায় নাকাল ৷ এই অবস্থায় এই বিরল রোগ থেকে বাঁচতে বিশেষ কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে হবে ৷ এ ব্যাপারে নিউরো সার্জেন চিকিৎসক রথীজিৎ মিত্র এবং নিউরো মেডিসিন চিকিৎসক অম্লান মণ্ডলের পরামর্শ ৷ তাঁরাই জানালেন, এই রোগের বিশদ বৃত্তান্ত ৷

কোথায় এই রোগের প্রকোপ বেশি ?

মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চিন-সহ এশিয়ার কিছু অংশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নিউরোসিস্টিসারকোসিসের প্রকোপ ৷ সম্প্রতি নাগাড়ে বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির কারণে এই রোগ ভাবাচ্ছে রাজ্যের চিকিৎসকদের ৷

রোগের মূলে শূকরের ফিতাকৃমি

চিকিৎসক রথীজিৎ মিত্র জানান, “নিউরোসিস্টিসারকোসিস একটি জটিল রোগ, এতে স্নায়ুতে হয় পরজীবী সংক্রমণ । যেখানে পরিস্রুত পানীয় জল ব্যবহার করা হয় না ও স্বাস্থ্যবিধি ঠিকভাবে মানা হয় না, সেখানেই এটা বেশি দেখা যায় । এই রোগের মূল কারণ হল শূকরের ফিতাকৃমি । এই ফিতাকৃমির ডিম শরীরে প্রবেশের পর ডিম থেকে লার্ভা বের হয়ে মস্তিষ্কে চলে যায় । এরপর সেই লার্ভা মস্তিষ্কে একটা সিস্ট তৈরি করে ।”

কিন্তু এই লার্ভার ডিম মানুষের শরীরে প্রবেশ করে কী করে ? চিকিৎসক অম্লান মণ্ডল জানান, “মূলত শূকরের মাংস থেকে এই ফিতাকৃমির লার্ভার ডিম মানুষের শরীরে প্রবেশ করে । বর্ষাকালে মাটিতে এই ধরনের কৃমি প্রচুর দেখা যায় । ফলে সেই খাবার যখন শূকর খাচ্ছে, তখন তার শরীরের মধ্যে এই ফিতাকৃমি প্রবেশ করে । এরপর সেই শূকরের মাংস খেলে, সেখান থেকেই মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে ফিতাকৃমি । তবে অনেক সময় যাঁরা ভেজ খান, তাঁদের মধ্যেও এই রোগ দেখা যায় । কারণ স্যালাড । স্যালাড জাতীয় খাবার যদি ভালো করে ধোওয়া না-হয়, তাহলে সেটাও মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ।”

কোন বয়সিরা আক্রান্ত হয় ?

এই রোগ হওয়ার কি নির্দিষ্ট কোনও বয়স থাকে ? এই প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক জানান, “সদ্যোজাত শিশু, যারা মাংস খায় না, তারা ছাড়া মোটামুটি তিন থেকে চার বছর বয়স থেকে 90 বছর বয়সের সকলের মধ্যেই এই রোগ দেখা যায় ।”

এই রোগের উপসর্গ কী ?

চিকিৎসক অম্লান মণ্ডল জানালেন, “মাথার যন্ত্রণা এই রোগের অন্যতম উপসর্গ । এই মাথার যন্ত্রণা মাইগ্রেনের থেকে পুরোটাই আলাদা । এর পাশাপাশি রয়েছে স্মৃতি হারিয়ে ফেলা, প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি অথবা সিজার হওয়া, তার সঙ্গে বমি হওয়া । একটা চোখে না-দেখতে পাওয়াও এই রোগের অন্যতম উপসর্গ । তবে মাথা যন্ত্রণাটা সবথেকে বড় উপসর্গ । মাথা যন্ত্রণা উপসর্গ নিয়ে কেউ এলেই আমরা তখন তার এই পার্শ্ববর্তী উপসর্গগুলো আছে কি না সেগুলোর উপর নজর রাখি ।”

কিন্তু সেক্ষেত্রে কী করা হয় ? চিকিৎসক রথীজিৎ মিত্র জানান, “যখনই মাথার যন্ত্রণার পাশাপাশি এই সমস্ত উপসর্গ থাকে, তখন আমরা সবার প্রথমে রোগীর সিটি স্ক্যান করতে বলি । সেই সিটি স্ক্যানটা করার পর রিপোর্ট দেখে আমরা তার এমআরআই করতে বলি । সেখানেই মাথার ভিতরে পুরো চিত্রটি আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায় ।”

এই রোগ কতটা ভয়ের ?

চিকিৎসকরা বলছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই । চিকিৎসক অম্লান মণ্ডল বলেন, “এক্ষেত্রে ছয় মাসের একটি কোর্স থাকে । যথাযথ সময়ে যদি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেই ওষুধের কোর্স চালু করা যায়, তাহলে নিউরোসিস্টিসারকোসিস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব ।”

কীভাবে এই রোগ এড়াবেন ?

চিকিৎসক রথীজিৎ মিত্রের পরামর্শ অনুযায়ী, “হাত ভালো করে ধোওয়ার অভ্যাস করতে হবে । খাবার তৈরি বা খাবার আগে ও শৌচালয় ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে । বিশুদ্ধ পানীয় জল দিয়ে শূকরের মাংস ভালোভাবে রান্না করতে হবে । কমপক্ষে 63 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে মাংস রান্না করা উচিত । এছাড়াও রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো । কাঁচা ফল ও সবজি ধুয়ে খান ৷ পাশাপাশি বাড়ির নিকাশির ব্যবস্থা ভালো করতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে ।” এই নিয়ে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিও গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক ৷

আরও পড়ুন:- পুজো কমিটিগুলোর জন্য ইলেকট্রিক বিলে কত টাকা ছাড় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ? জেনে নিন

আরও পড়ুন:- বাংলায় ৭১ টি মেডিক্যাল কলেজকে নোটিশ ধরাল কেন্দ্র, কারণ কি ? জেনে নিন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন