Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ভাঙা হচ্ছে ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি। এই খবর সামনে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল সমাজ মাধ্যমে। ভারত সরকারের হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছিলেন খোদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠাতেই স্থগিত হয় বাড়িটি ভাঙার কাজ।
বাংলাদেশ সরকারের মত বদল
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক আর্জি জানিয়েছিল, সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়িটি যাতে না ভাঙা হয়। বরং এটি পুনর্নির্মাণ ও সংরক্ষণে পাশে থাকবে ভারত সরকার। এই চিঠির পরেই বাংলাদেশের প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হল, ময়মনসিংহে ওই বাড়িটি ভাঙার কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির কাজ হল, একশো বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি কীভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, তা খতিয়ে দেখা। পাশাপাশি বাংলাদেশের তরফে জানানো হয়েছে, সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়িটি ভাঙার নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে, তা নেহাত ভুল বোঝাবুঝি। প্রশাসনের তরফে বিবৃতি দিয়ে আরও জানানো হয়েছে, বাড়িটি মেরামত করে, কীভাবে ওই বাড়িতেই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়, তা খতিয়ে দেখবে বিশেষ কমিটি। তারা জানিয়েছে, ভারত সরকার প্রকল্পের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পায়নি। প্রকল্পের বিষয়ে না জেনেই বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়েছিল।
বাড়িটি রায় পরিবারের নয়
এদিকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় যে বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে তা চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের নয় , বুধবার একজন ঊর্ধ্বতন জেলা আধিকারিক ইন্ডিয়া টুডেকে জানিয়েছেন । তিনি সম্পত্তিটি কিংবদন্তি পরিচালকের বংশের সঙ্গে যুক্ত নয় বলে স্পষ্ট করেছেন। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মফিদুল আলম নিশ্চিত করেছেন যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে ভেঙে ফেলা ভবনটির সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের কোনও সম্পর্ক নেই। আলম বলেছেন, ‘আমরা বুধবার উক্ত সম্পত্তির সরকারি রেকর্ড যাচাই করার জন্য একটি মিটিং করেছি। আমরা স্থানীয় প্রবীণদের সঙ্গেও কথা বলেছি এবং ঐতিহাসিক নথিপত্র পরীক্ষা করেছি। যে বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছিল সেটি ময়মনসিংহ শিশু অ্যাকাডেমির অফিস ছিল। সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে এর কোনও যোগসূত্র আছে কিনা তা প্রমাণ করার জন্য কোনও রেকর্ড নেই।’
জেলা প্রশাসন আরও স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি, যা স্থানীয়ভাবে ডারলভ হাউস নামে পরিচি, এখনও অক্ষত রয়েছে। ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে রায়ের পৈতৃক সম্পত্তি এখনও অক্ষত আছে। আমরা এর বর্তমান মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি, যিনি নিশ্চিত করেছেন যে তিনি রায়ের পরিবারের কাছ থেকে সরাসরি সম্পত্তিটি কিনেছিলেন এবং এর প্রমাণের জন্য তার কাছে নথি রয়েছে। পাশের যে ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে তা ভুল করে রায়ের পৈতৃক বাড়ি হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে,’ আলম আরও বলেন।
সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটের ইতিহাস
বাংলাদেশের ময়মনসিংহে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি রয়েছে। জানা যাচ্ছে, হরিকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের মসূয়ার জমিদার। তিনি সত্যজিৎ রায়ের দাদু ও সুকুমার রায়ের বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পালক পিতা ছিলেন। তদানীন্তন ময়মনসিংহে এই পরিবারের, বিশেষ করে জমিদার হরিকিশোররের শৈল্পিক কারুকার্য খচিত দু’খানা বাড়ি ছিল। একটি কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। এটি ছিল তাঁর মূল বাড়ি। অন্যটি তাঁদের শহুরে বাড়ি ময়মনসিংহে। দু’টি বাড়িই দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। এর মধ্যে, ২০১২ সালে শেখ হাসিনার শাসনকালে কটিয়াদীর বাড়িটি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। সেখানে একটি বহুতল রেস্ট হাউস নির্মাণ-সহ বাড়ির সীমানা প্রাচীর, পুকুর ও রাস্তাঘাট সংস্কার করা হলেও ময়মনসিংহের বাড়িটি পড়েছিল অনাদরে। । ১৮৬০ সালের ১২ মে কটিয়াদীর জমিদার বাড়িতে উপেন্দ্রকিশোর জন্মগ্রহণ করলেও ময়মনসিংহের বাড়িতেই কেটেছে তাঁর বাল্য ও কিশোরবেলা।
বাড়িটি কাদের?
২০০৮ সালে এই জমি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনে বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমির নামে বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু যে বাড়িটি ভাঙা নিয়ে এতো আলোচনা সেটি কি আসলেই সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের বাড়ি? কবে এটি পরিত্যক্ত হয়েছে? কখন থেকে কার অধীনে ছিল? এমন নানা প্রশ্ন উঠেছে। জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেছেন, এই ভবনটি সত্যজিৎ রায়ের ভবন নয়। বাড়িটির মালিকানা নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক স্বপন ধর বলেন, বাড়িটি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দানবীর রায় বাহাদুর রনদা প্রসাদ সাহার অস্থায়ী বাসভবন। ২০১৬-১৭ সালে জার্মান সরকারের প্রকল্পের আওতায় গবেষণা ও প্রদর্শনী হয়। ময়মনসিংহের নগর ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রকল্পে ফ্রান্সের প্রত্নতত্ত্ববিদ রুমেন লার্চার সঙ্গে তিনিও কাজ করেন। গবেষণায় ৩২০টি বাড়ি চিহ্নিত করা হয়। তখন তিন ক্যাটাগরিতে ভবনগুলো ভাগ করা হয়েছিল। যে বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে, সেটি ছিল দ্বিতীয় ক্যাটাগরির বাড়ি। প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে এই বাড়ি ভাঙার অধিকার কারও নেই, উচিতও হয়নি। স্বপন ধরের বক্তব্য, ‘বাড়িটি ছিল রনদা প্রসাদের অস্থায়ী বাসভবন। এর মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। আমাদের কাছে সব ধরনের গবেষণা কাগজ রয়েছে। যে কথাটি বলা হচ্ছে, এটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি, সেটি হচ্ছে দুর্লভ ভবন। সেই বাড়িটি এখান থেকে কিছুটা দূরে। এই রোডটি সত্যজিৎ রায়ের পরিবার হরিকিশোরের নামে এতে কোনও সন্দেহ নেই’।
আরও পড়ুন:- ভয়ঙ্কর! নিজের ৫ বছরের শিশুকে খুন করে বয়ফ্রেন্ডের সাথে চলল উদ্দাম মদ-যৌনতা
আরও পড়ুন:- কৃষকদের জন্য নতুন প্রকল্প চালু করল কেন্দ্র, প্রায় ২ কোটি কৃষক উপকৃত হবেন