Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বাতের ব্যথা বা সহজ বাংলা ভাষায় বললে হাঁটু ও কোমরে যেই ব্যাথা হয় সেটাকে বোঝায়। জীবন ধারার পরিবর্তন, অনিয়মিত খাদ্যাভাস এছাড়া অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে মানুষের দীর্ঘমেয়াদী রোগ বাসা বাধছে শরীরে। এই রোগ গুলি মানুষের জীবনে এমন ভাবে আক্রান্ত করছে, যার ফলে সারা জীবন ভর ওষুধের মধ্যেই কাটিয়ে দিতে হচ্ছে। সুস্থ জীবন যাপন যেন বর্তমান সময়ে থমকে গিয়েছে।
বাতের ব্যথা থেকে বাঁচার সহজ উপায়
বর্তমান সময়ে এমন একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগের মধ্যে রয়েছে আর্থ্রাইটিস। আর্থ্রাইটিস রোগকে সহজ সরল কথায় বাত বলা হয়। এই বাতের সমস্যায় মাঝ বয়সী ব্যক্তিরা বিশেষ করে মহিলারা খুবই কষ্ট পেয়ে থাকেন। কোন কোন খাদ্য গুলি আথ্রাইটিস রোগের জন্য উপযোগী? রোগ উপশমের জন্য ঘরোয়া কোন উপায় আছে কি? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আজকে পেয়ে যাবেন এই প্রতিবেদনে। আপনি যদি এমন কোন সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে প্রতিবেদনটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে ফেলুন।
How to Get Rid of Arthritis by Using Home Remedy
যে কোনো রোগ শরীরের জন্য খুবই অস্বস্তিকর হয়ে থাকে। বাতের সমস্যায় যারা ভুক্ত ভোগী তারাও জানেন এই ব্যথা নিয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম করা কতটা কষ্টকর। দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হয়ে ওঠে না এই রোগ। কিছু ঘরোয়া টিপস দেওয়া হবে যেই গুলি ফলো করলে আপনি অনায়াসেই এই রোগ থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন। সঠিক খাদ্যাভাস, নিয়ম মাফিক ব্যায়াম ও আরো কিছু জিনিস মেনে চললে আর্থ্রাইটিসকে আপনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ১ লাখ টাকার স্কলারশিপ পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। যোগ্যতা ও আবেদন পদ্ধতি জেনে নিন
আর্থ্রাইটিক নিয়ন্ত্রণ করার ঘরোয়া উপায়
জলজ ব্যায়াম :- জলভিত্তিক ব্যায়াম আর্থ্রাইটিক নিরাময়ের জন্য খুবই উপকারী। একটি গবেষণা দেখা গিয়েছে যে সমস্ত আর্থ্রাইটিস রোগীরা জলজ ব্যায়ামে অংশ নিয়েছেন অর্থাৎ ৪০ থেকে ৬০ মিনিট জলজ ব্যায়াম করেছেন, তারা অনেকটাই উপশম পেয়েছেন এই রোগ থেকে।
বর্ধিত ওজন দেওয়া :- হাঁটুতে 3 পাউন্ড এবং নিতম্বের জয়েন্ট গুলিতে 6 পাউন্ড চাপ দেওয়া হয়। এই বর্ধিত চাপ জয়েন্ট গুলির মধ্যে দ্রুত তরুণাস্থি ভাঙ্গন, অস্টিও আর্থারাইটিসকে কমাতে সাহায্য করে। ওজন হ্রাস এই চাপ কমাতে পারে, ব্যথা এবং পেশীর কঠোরতা হ্রাস করতে পারে।
তাই চি :- এটি একটি ব্যায়াম যেটি শরীরের পেশী শক্ত হতে এবং ভারসাম্য বাড়াতে সাহায্য করে। ১২ সপ্তাহ এই ব্যায়াম করলে শরীরের পেশীর কঠোরতা অনেকটাই কমবে এবং শারীরিক কার্য ক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।
যোগ ব্যায়াম :- যোগ ব্যায়াম শরীরের সাথে সাথে মনের একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে এই ব্যায়ামে অংশ গ্রহণকারীরা যারা ছয় সপ্তাহের জন্য দুটি 1.5 ঘন্টার যোগ ক্লাসে অংশ নিয়েছিল তাদের স্বাস্থ্য, মেজাজ, জীবন যাত্রার মান এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা মোকাবিলা করার ক্ষমতার উন্নতি হয়েছে।
তাপ ও ঠান্ডা চিকিৎসা :- গরম জল এবং ঠান্ডা জল কিংবা গরম তাপ ও ঠান্ডা তার যে কোনো ব্যাথাকে উপশম করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাপ ও ঠান্ডা উভয় থেরাপিই বাতের ব্যথা কমাতে একই ভাবে কার্যকর। গরম থেরাপি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শক্ত জয়েন্ট এবং ব্যথা পেশীকে প্রশমিত করে। অন্য দিকে, ঠান্ডা তাপ রক্তনালী গুলিকে সীমাবদ্ধ করে ফোলাভাব এবং অসাড় ব্যথা কমায়।
নিয়মিত ম্যাসাজ :- পেশী এবং জয়েন্ট গুলির নিয়মিত ম্যাসেজ আর্থ্রাইটিস ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত মেসেজ করলে শরীরের ট্রেস হরমোন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই গুলো শরীরের প্রদান একটা সাহায্য করে এবং শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে।
হলুদ :- হলুদ যেমন খাদ্যের একটি উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এটি আর্থ্রাইটিস রোগের জন্য একটি উপকারী পদার্থ। প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ম্যাসাজ শরীরের স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল এবং ব্যথা সম্পর্কিত নিউরো ট্রান্স মিটার পদার্থ পি এর উৎপাদন হ্রাস করে।
আর্থ্রাইটিস রোগ নিরাময়ে খাদ্য তালিকা
চর্বি যুক্ত মাছ, বাদাম, ব্রকলি, পালং শাক, গোটা শস্য, এবং জলপাই তেল এই খাবার গুলি আর্থ্রাইটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী। স্যামন, টুনা, সার্ডিন, হেরিং এর মতো মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আখরোট, পেস্তা, কাঠ বাদাম, ইত্যাদি বাদামে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, ভিটামিন ই ও ফাইবার থাকে যা আর্থ্রাইটিস রোগের জন্য উপকারী।
ব্রকলিতে ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা হাড়কে শক্তিশালী করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। পালং শাক, কেল এবং অন্যান্য সবজিতে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা প্রদাহ কমাতে এবং হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। ব্রাউন রাইস, কুইনো এবং ওটস ফাইবারের ভালো উৎস, যা প্রদাহের এর মাত্রা কমাতে পারে।জলপাই তেলে ওলিওক্যানথাল নামক একটি যৌগ রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
কমলা লেবু, পাতি লেবু, মুসম্বি ও আঙুরে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মটর শুঁটিতে ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন এবং প্রোটিন থাকে, যা আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী। আদা এবং রসুনে প্রদাহ বিরোধী উপাদান থাকে, যা আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে। স্ট্রবেরি, ব্ল্যাক বেরি এবং ব্লুবেরিতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
উপরে দেওয়া খাদ্য তালিকা মতন খাদ্য গুলি যদি আপনার প্রত্যেকদিনকার ডায়েট চার্টে রাখেন এবং আর্থ্রাইটিস এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম গুলি ফলো করেন তাহলে কয়েক মাসের মধ্যে আপনার আর্থ্রাইটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এছাড়া আপনি যদি আর্থ্রাইটিস নিয়ে খুবই সমস্যার মধ্যে থাকেন, প্রদাহ অনেকটাই আপনাকে কষ্ট দেয় তাহলে দুটো একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের থেকে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- ওয়াকফ অশান্তিতে থাকতে পারে বিজেপির এজেন্সির হাত, আশঙ্কা কুণাল ঘোষের