Bangla News Dunia , পল্লব চক্রবর্তী : এক জাতির পুজোর ইতিহাসটা হুবহু বদলে দিল। তা না হলে বাঙালির দুর্গা পুজোর দিনক্ষণ এভাবে আমূল বদলে যায়। পুরাতন ইতিহাস বলছে , চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের বাসন্তী পুজোই নাকি প্রকৃত দুর্গাপুজো। যদিও এই কালে আশ্বিন শুক্ল পক্ষের দুর্গাপুজো অন্যতম প্রধান পুজোর স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে। যা আপামোর বিশ্ববাসীর কাছে বিরাট উৎসব। পৃথিবীর সব প্রান্তে মহামায়ার আরাধনায় মেতে ওঠে মানুষ।
অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য সব কালেই মানুষ আদ্যা শক্তির আরাধনা করে। আমাদের পুরাণ অনুযায়ী, সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে অতীতে রাজ্য হারানো রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধার আশ্রমে মূর্তি গড়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। যা পরে বাসন্তী পুজো নামে প্রসিদ্ধ হয়। এবং সেটাই যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে। কিন্তু রামায়ণে রামচন্দ্র সীতা উদ্ধার কালে অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য শরৎকালে দুর্গার আরাধনা করলেন। এটি অকাল বোধন হিসাবে বিখ্যাত হল। আর তার পর থেকে এই পুজোই চলতে থাকল। যা বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাল্মীকি অকাল বোধনের ঘটনাটি তাঁর রামায়ণ রচনায় উল্লেখ করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু বাঙালি কবি কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর বঙ্গ রামায়ণে এই অংশের এমন বর্ণনা দেন যে, তা বরাবরের জন্য বাঙালি মনে গেঁথে যায়। শরৎকালের দুর্গাপুজো এই ভাবেই ধীরে ধীরে তার নিজস্ব ধর্মীয় , সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান রচনা করে গণমনে চিরস্থায়ী হয়ে ওঠে। তবুও বাঙালি আদি দুর্গাপুজোকে কোনও দিনই পুরোপুরি ভুলে যায়নি। এখনও দুর্গাপুজোর আদিরূপ বাসন্তী পুজোর আয়োজন করে। যদিও এই পুজো কোনও দিনই বারোয়ারির আকার খুব একটা নেয়নি। রমরম করে বাসন্তী পুজো হত তখনও তা আয়োজিত হত মূলত জমিদার নায়েব গোমস্তা গোষ্ঠীর লোকজনদের দ্বারা। কোনও দিনই জন সাধারণের পুজো হয়ে ওঠেনি।
এই পুজো পরিবার-তন্ত্রে আটকে, বারোয়ারি হয়নি খোঁজ করলে দেখা যাবে, আজও শহরের কিছু ভুঁইফোঁড় উঠতি বড়লোকের বাড়ির হঠাৎ শুরু হওয়া বাসন্তী পুজো ছাড়া মূলত হয় বনেদি বড়লোকদের বাড়িতে। বড়লোকের বাড়িতে হলেও পুজোর সঙ্গে ধন-তন্ত্রের যোগ প্রবলই। এক সময় রমরম করে বাসন্তী পুজো হত, তার কারণও কেউ কেউ বলে থাকে। বসন্ত ঋতুর শেষে গ্রীষ্মের শুরুর সময় সেকালে বসন্ত রোগের খুব প্রকোপ ছিল। রোগকে প্রশমিত করার জন্যও তাই বাসন্তী দেবীর পুজোর চল হয়েছিল বলে ধরে নেওয়া যেতেই পারে।
আরও খবর পেতে ফলো করুন আমাদের চ্যানেল