বিনামূল্যে প্রাইভেট চিকিৎসা, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য কার্ড -দেখুন আবেদন পদ্ধতি

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্প বহুদিন ধরেই রাজ্যের মানুষের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবীমা সুরক্ষা হয়ে দাড়িয়েছে। তবে ২০২৫ সাল থেকে এই প্রকল্পের জন্য অনলাইনে আবেদন করার নিয়মে এসেছে বড় পরিবর্তন করা হয়েছে। পুরনো অফলাইন পদ্ধতি বাতিল করে চালু হয়েছে সম্পূর্ণ ডিজিটাল আবেদন প্রক্রিয়া। এই নতুন ব্যবস্থায় সহজেই ঘরে বসেই করা যাবে এর আবেদন, প্রয়োজন হবে মাত্র কিছু নথি এবং ইন্টারনেট কানেকশন মাত্র।

আজকের প্রতিবেদনটিতে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে কীভাবে আপনি সঙ্গে আপনার পরিবারের সদস্যরা নতুন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদন করবে।

স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ

আমরা সকলে জানি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প, এর মূল উদ্দেশ্য প্রত্যেক পরিবারকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা তাও আবার প্রাইভেট হাসপাতালে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি ও নির্দিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো যায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই প্রকল্পটি রাজ্যের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, কারণ এর ফলে ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচে অনেকটা সাশ্রয় হতে চলেছে। এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হলে একাধিক রোগের চিকিৎসা সঙ্গে অস্ত্রোপচার, হাসপাতাল ভর্তি ও ডায়াগনস্টিক খরচ সরকারি খাতে বহন করা সম্ভব।

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ২০২৫-এ কী পরিবর্তন এল

২০২৫ সাল থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদন করার নতুন প্রক্রিয়া আরম্ভ করা হয়েছে। আগে ব্লক অফিস বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে এর জন্য আবেদন করতে হত। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ আবেদন প্রক্রিয়া অনলাইনে করা সম্ভব হবে।

এই নতুন নিয়মে আবেদনকারীকে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে, এরপর সমস্ত তথ্য এবং নথি আপলোড করে ফর্ম জমা করতে হবে। আবেদন জমা হয়ে গেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফটো ও বায়োমেট্রিকের জন্য ব্লক অফিস বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ডাকবে ।

অনলাইনে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন করতে যা করতে হবে

নিচে ধাপে ধাপে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য নতুন অনলাইন আবেদন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হলো:

১. অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান

প্রথমে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে যেকোনো ব্রাউজার খুলে Google-এ গিয়ে সার্চ করতে হবে “Swasthya Sathi card”। এরপর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট swasthyasathi.gov.in -এ যেতে হবে।

২. অনলাইন আবেদন অপশন বেছে নিন

হোমপেজে “Apply Online” বা “Online Application for Swasthya Sathi Card” অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।

৩. পরিবারপ্রধানের নাম ব্যবহার করে নিবন্ধন শুরু করতে হবে

নতুন পদ্ধতিতে পরিবারের মহিলা সদস্যকেই প্রধান হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তাই তাঁর নামে আবেদন শুরু করতে হবে।

৪. আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে

নিচের তথ্যগুলি পূরণ করতে হবে অনলাইন ফর্মে:

  • জেলা, ব্লক/পৌরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েত ও গ্রামের নাম উল্লেখ করতে হবে
  • উপভোক্তার নাম ও সম্পর্ক (Self/Other) উল্লেখ করতে হবে
  • পরিবারের প্রধানের নাম উল্লেখ করা
  • উপভোক্তার বয়স, লিঙ্গ, জাতি, সংখ্যালঘু অবস্থা
  • রেশন কার্ড নম্বর (অবশ্যই লাগবে) থাকতে হবে
  • আধার নম্বর ও মোবাইল নম্বর থাকতে হবে
  • বৈবাহিক অবস্থা ও ঠিকানা সহ পিন কোড
  • কর্মসংস্থানের অবস্থা (Self-employed/Unemployed/Other) স্ট্যাটাস

৫. নথি আপলোড করতে হবে

  1. আবেদনকারীর আধার কার্ডের পিডিএফ আপলোড করতে হবে
  2. রেশন কার্ডের স্ক্যান কপি থাকতে হবে
  3. ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে বিদ্যুৎ বিল বা অন্য কোনো সরকার স্বীকৃত নথি থাকতে হবে

৬. পরিবারের অন্যান্য সদস্য যুক্ত করুন

“Add Member” অপশনে ক্লিক করে পরিবারের বাকি সদস্যদের নাম যুক্ত করতে হবে। প্রত্যেকের জন্য দিতে হবে:

  1. নাম, বয়স, লিঙ্গ, জাতি
  2. রেশন কার্ড নম্বর
  3. আধার নম্বর
  4. মোবাইল নম্বর
  5. বৈবাহিক অবস্থা
  6. তাঁদের আধার কার্ডের পিডিএফ কপি

৭. ভেরিফিকেশন ও ফাইনাল সাবমিশন

সব তথ্য ঠিকভাবে পূরণ করে “Verify” অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর আপনার মোবাইলে একটি OTP আসবে। সেই OTP বসিয়ে “Validate” করতে হবে

৮. আবেদন নিশ্চিতকরণ

আবেদন সফলভাবে জমা হলে আপনি একটি রেফারেন্স নম্বর পাবেন। এই নম্বরটি ভবিষ্যতে আবেদন ট্র্যাক করার জন্য দরকার থাকবে

এছাড়াও আপনার মোবাইলে একটি কনফার্মেশন এসএমএস চলে যাবে।

ফটো তোলার জন্য কবে ডাক আসবে?

সফলভাবে অনলাইন আবেদন জমা করার পর ব্লক অফিস বা পঞ্চায়েত অফিস থেকে আপনাকে ফোন করতে পারে অথবা তার SMS করে জানানো হবে। নির্দিষ্ট তারিখে সেখানে গিয়ে ছবি তুলতে হয়ে থাকে। ছবি তোলার পরই কার্ড তৈরি হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যে সুবিধাগুলি মিলবে

নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মূল সুবিধাগুলি তুলে ধরা হলো:

সুবিধা বিবরণ
চিকিৎসার খরচ বছরে সর্বোচ্চ ₹৫ লক্ষ পর্যন্ত ক্যাশলেস চিকিৎসা সুবিধা
কার্ডধারী পরিবারের মহিলা সদস্য
হাসপাতাল সরকারি ও নির্ধারিত বেসরকারি হাসপাতালে সুবিধা
রোগের পরিসর ২০০০+ রোগের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত
ডায়াগনস্টিক বিনামূল্যে এক্স-রে, ব্লাড টেস্ট, স্ক্যান
অস্ত্রোপচার হার্ট, কিডনি, ক্যানসার, গাইনো অস্ত্রোপচার অন্তর্ভুক্ত
ভর্তি খরচ কভার্ড
পোস্ট-ডিসচার্জ ওষুধ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিনামূল্যে

কোন কোন নথি আবশ্যক?

আবেদনের সময় নিচের নথিগুলি প্রস্তুত রাখুন:

  1. আধার কার্ড (PDF স্ক্যান)
  2. রেশন কার্ড (PDF স্ক্যান)
  3. মোবাইল নম্বর
  4. ঠিকানার প্রমাণ (যেমন বিদ্যুৎ বিল)
  5. জন্ম সনদ (যদি বয়স যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়)

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড কাদের জন্য?

এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন:

  • যারা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা কেবল তাদের জন্য
  • যাঁদের বার্ষিক আয় সীমিত রয়েছে
  • যাঁরা এখনও সরকারি বা প্রাইভেট হেলথ স্কিমের আওতায় পড়েননা
  • পরিবারে একজন মহিলা সদস্য আছেন যিনি প্রধান হিসেবে নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন

ভবিষ্যতে কীভাবে কার্ড ব্যবহার করবেন?

  • কার্ড হাতে পাওয়ার পর স্থানীয় স্বাস্থ্যসাথী হাসপাতালে চিকিৎসার সময় ব্যবহার করা যাবে
  • হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় কার্ড দেখালেই হবে
  • যেকোনো সমস্যায় স্বাস্থ্যসাথী হেল্পলাইনে যোগাযোগ করা হবে

স্বাস্থ্যসাথী হেল্পলাইন নম্বর ও সাপোর্ট

আবেদন করার সময় বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে, নিচের নম্বর ও ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করতে পারেন:

  • হেল্পলাইন নম্বর: 1800-345-5384 (টোল ফ্রি)
  • ওয়েবসাইট: swasthyasathi.gov.in

পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য ২০২৫ সালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল হয়ে গেছে, যা নাগরিকদের জন্য সহজ ও সময় সাশ্রয়ী হবে। এক্ষেত্রে ঘরে বসেই আবেদন করা যাচ্ছে, কেবল ইন্টারনেট ও প্রয়োজনীয় নথি থাকলেই যথেষ্ট হবে।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন