বিমানবন্দরে ৫টি দারুণ ব্যবসা, শুরু করলে লক্ষ লক্ষ আয়

By Bangla News Dunia Dinesh

Published on:

এয়ারপোর্ট এখন শুধু যাতায়াতের জায়গা নয়; বরং একে বলা যায় একটি ছোট শহর যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভীড় থাকে, প্রচুর মানুষ অপেক্ষা করছেন, খাচ্ছেন, শপিং করছেন — অর্থাৎ আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি যেখানেই মানুষের চলমানতা বেশি, ব্যবসা করার সুযোগও বেশি থাকে। ঠিক এই কারণে বিমানবন্দরগুলো নানা ব্যবসার জন্য অত্যন্ত লাভজনক স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই প্রতিবেদনে আমরা দেখেনি বিমানবন্দরে কোন কোন ধরনের ব্যবসায়িক সুযোগ আছে, কীভাবে তারা কাজ করে থাকে, এক্ষেত্রে কী কী বাধা থাকতে পারে, এবং যারা শুরু করতে চান তাদের জন্য কি কি তথ্য জানা জরুরি।

রিটেইল ও খাদ্য-পরিষেবা

বিমানবন্দরের ভেতরের সবচেয়ে দৃশ্যমান এবং সাধারণ ব্যবসাগুলোর একটি রিটেইল ও ফুড সার্ভিস ব্যবসা।

  • Duty-Free শপ: যাত্রীরা বিদেশ যাত্রার আগে করবিহীন দামে লাক্সারি পণ্য, পারফিউম, কসমেটিক্স, সিগারেট-আলকোহল ইত্যাদির দিকেই বেশি ঝুকে। তাই এই ধরনের দোকান ভালো লাভের সুযোগ তৈরি করে থাকে।
  • স্পেশালিটি স্টোর: ট্রাভেল এসেনশিয়ালস, বই, ইলেকট্রনিক্স, প্রয়োজনীয় পোশাক — এসব পণ্য যারা পছন্দ করে থাকেন তারা অপেক্ষার সময় কিনেও থাকেন।
  • খাবার ও পানীয় দোকান: কফি শপ, ফাস্ট ফুড, রেস্তোরাঁ — যাত্রীদের খিদে ও সময়মত খাওয়ার প্রয়োজন বিশেষ দরকারি, তাই ভালো খাবার এবং দ্রুত সার্ভিস এক্ষেত্রে আদর্শ হতে পারে।

আতিথেয়তা ও আরামদায়ক পরিষেবা

বিমানবন্দরে সময় খুবই মূল্যবান হয়ে থাকে; অনেক সময়ে উড়ান বিলম্ব হয়, লেআউট থেকে থাকে এবং যাত্রীরা বিশ্রাম বা সুবিধামতো সময় কাটানোর জায়গা খুজে থাকেন।

  • এয়ারপোর্ট হোটেল: বিমানবন্দরের পাশে বা এমন জায়গায় যেখানে যাত্রীরা খুব দ্রুত পৌঁছতে পারেন সেখানে হোটেল দিতে পারেন।
  • VIP লাউঞ্জ বা প্রিমিয়াম লাউঞ্জ সার্ভিস: যারা বিলাসবহুল আরাম পেতে চাই — উন্নত চেয়ার, দ্রুত Wi-Fi, ফ্রি খাবার ও পানীয় দ্রব্য, একটি শান্ত জায়গা যেখানে কাজ করা যায় বা বিশ্রামও করা যায়।

পরিবহন ও যাতায়াত পরিষেবা

বিমানবন্দরের আরেকটি বড় ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হচ্ছে যাত্রী-যাতায়াত এবং মালপত্রের সমস্যা সম্পর্কে।

  • ট্যাক্সি ও রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস: যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে শহরের দিকে যায় বা হোটেলে যেতে চান; দ্রুত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য ভাড়া সার্ভিস থাকলে বড় চাহিদা তৈরি হবে।
  • গাড়ি ভাড়া (Car Rentals): যারা বিলাসবহুল পছন্দ করেন, তারা গাড়ি ভাড়া দিয়ে ভ্রমণ করে থাকে।
  • শাটল সার্ভিস: বিমানবন্দর থেকে শহর, হোটেল, পর্যটন স্পট ইত্যাদিতে শাটল চালানো যেতে পারে।

স্বাস্থ্য ও ওয়েলনেস পরিষেবা

শুধু খাদ্য ও আরাম নয়; যাত্রীদের অনেক সময় স্বাস্থ্যগত বা বিশ্রামেরও প্রয়োজন হয়ে থাকে ।

  • স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও ফার্মেসি: জরুরি ওষুধ, ভ্রমণ সংক্রান্ত টিকা, স্বাস্থ্য পরামর্শ ইত্যাদির চাহিদা ভালোই রয়েছে।
  • স্পা ও ম্যাসাজ সেন্টার: ফ্লাইট দেরিতে বা লে-অফারের সময়ে বিশ্রাম ও আরাম চান যাত্রীরা তাদের জন্য এই পরিষেবা।
  • ফিটনেস জিম বা ইয়োগা স্টুডিও: কিছু বিমানবন্দরে দ্রুত ফিটনেস সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে যারা স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন।

বিজ্ঞাপন, মিডিয়া ও অনুরোধ

বিমানবন্দর হচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে একটি দারুন জায়গা। যে জায়গায় লোকের জমজমাট থাকে, যেখানে সবাই অপেক্ষায় থাকে — এমন জায়গার বিজ্ঞাপন বেশি দেখা যায়।

  • বিলবোর্ড ও ডিজিটাল ডিসপ্লে: ভিতরে কিংবা গেট এলাকায় বড় স্ক্রিন বা ব্যানার দিয়ে প্রচার করা সম্ভব।
  • ইন্টারেক্টিভ কিয়স্ক: যাত্রীদের তথ্য, নির্দেশিকা, স্থানীয় আকর্ষণ, দোকান বা খাদ্য বিক্রেতারা বিজ্ঞাপন দিতে পারেন এই গুলিতে।
  • স্পন্সরশিপ: এখানে বাকিং কাউন্টার, চার্জিং স্টেশন বা ওয়েটিং লাউঞ্জ স্পন্সর করা যায় বিশেষ প্রতিষ্ঠান দ্বারা।

চার্জিং স্টেশন ও টেকসই উদ্ভাবন

বিমানবন্দর নির্মাণ ও পরিচালনায় পরিবেশ সচেতনতার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়ে থাকে ।

  • গ্রিন ট্রান্সপোর্ট: বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জিং স্টেশন, ইভি শাটল সার্ভিস দিতে পারেন।
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: রিসাইক্লিং, অপচয় কমিয়ে আনার পরিকল্পনা ব্যবসা করা যায়।
  • নবায়নযোগ্য শক্তি: সৌরশক্তি প্যানেল, হাওয়া শক্তি, এনার্জি ইফিসিয়েন্ট লাইটিং ও কনডিশনার ব্যবস্থা করা সম্ভব ।

চ্যালেঞ্জ ও বিবেচ্য বিষয়

এই সুযোগগুলো থাকার সত্ত্বেও বিমানবন্দর ব্যবসা করা সব সময়ই সহজ নয়; কিছু বাধা ও ঝুঁকিও থাকে :

  • অধিক বিনিয়োগ ও উচ্চ ভাড়া: বিমানবন্দর–আকাশসীমার জায়গা সাধারণভাবে ব্যয়বহুল হয়ে থাকে ।
  • নিয়ম-কানুন ও সিকিউরিটি চেক: নিরাপত্তা মানদণ্ড কঠোর হয়ে থাকে, অনেক সময় লাইসেন্স, অনুমতি ও পরীক্ষার প্রয়োজন হয়ে থাকে ।
  • কাস্টমার পরিবর্তনশীলতা: ফ্লাইট বিলম্ব, বিমানবন্দরের ধরণ, যাত্রী প্রবণতা — সব কিছু ব্যবসার উপর প্রভাব ফেলে থাকে।
  • প্রবেশদ্বার ও অনুমোদন প্রক্রিয়া: বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়, কিরায়ার প্রক্ষেপণ, নিরাপত্তা প্রোতোকল সমর্থন সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে হয়ে থাকে এখানে ।

বাস্তবে শুরু করার ধাপ

বিমানবন্দরে ব্যবসা শুরু করার আগে নিচের ধাপগুলো অবশ্যই মেনে চলা ভালো হবে:

  • বাজার বিশ্লেষণ: যাত্রীর সংখ্যা, তাদের চাহিদা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, পরিবহন সংযোগ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করা দরকার।
  • সঠিক লাইসেন্স ও অনুমোদন সংগ্রহ: বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি, কাস্টমস ও অন্যান্য বিভাগগুলোর অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে।
  • চালু সাপ্লায়ার ও লজিস্টিক সেটআপ: খাদ্য, খুচরা পণ্য বা যেকোনো পণ্য পরিবহনের জন্য প্রত্যক্ষ ও বিকল্প সাপ্লায়ার থাকতে হয়
  • গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নয়ন: পরিষ্কার, দ্রুত সার্ভিস প্রদান; একটি আকর্ষণীয় লাউঞ্জ বা দোকান ডিজাইন করা; উচ্চ মানের পরিষেবা দেওয়া।
  • বিপণন ও ব্র্যান্ডিং: বিজ্ঞাপন, অফার, ডিজিটাল উপস্থিতি তথা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ব্যবহার করতে হবে।

বিমানবন্দর এমন এক জায়গা যেখানে এক দিকে মানুষ যাতায়াত করতে থাকে, অন্য দিকে বহু ব্যবসার সুযোগ তৈরি তৈরিও হচ্ছে — যেখানে উদ্যোগী ব্যবসায়ী ও স্টার্টআপ তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করে নিতে পারে, সেখানেই রয়েছে সবার আগে লাভের সম্ভাবনাও।

Bangla News Dunia Dinesh

মন্তব্য করুন