Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বলিউড হোক কিংবা টলিউড। ভারতীয় সিনেমার গল্প কিন্তু শুধুমাত্র ভারতেই সিমাবদ্ধ থেকেছে এমনটা নয়। কারণ ভারতীয় সিনেমায় এমন কিছু অসাধারণ কাজ রয়েছে যে গল্প নিয়ে ছবি তৈরি হয়েছে বিদেশেও। যার মধ্যে রয়েছে পরিচালক সত্যজিৎ রায়েরও সিনেমাও। কোন কোন ভারতীয় সিনেমার গল্প নিয়ে হলিউডে কাজ হয়েছে জানেন? রইল তালিকা।
ভিকি ডোনার
২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া বলিউড ছবি ভিকি ডোনার। ইয়ামি গৌতম ও আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত এই ছবিটি বেশ সাড়া ফেলেছিল। এই ছবিতে স্পার্ম ডোনর ছিলেন ভিকি। এই ছবিতে মূলত যৌন শিক্ষা, সমাজের পুরনো ধারণা এবং একাধিক বাবা হওয়ার বিষয়টি হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ঠিক এক বছর পর, ২০১৩ সালে, চলিউডের এই গল্প নিয়ে সিনেমা হয় হলিউডে। ছবির নাম ডেলিভারি ম্যান। এই গল্পের মূল বিষয়টি একেবারে একই ছিল। গল্পে একজন ব্যক্তি, যিনি পেশায় স্পার্ম ডোনার। পরে তিনি জানতে পারেন যে ৫০০টিরও বেশি শিশুর বাবা তিনি। যদিও ছবিটি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে তৈরি। ফলে গল্পে কিছু বদল আনা হয়েছিল।
দেবদাস
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দেবদাস বাংলা সাহিত্যের একটি কালজয়ী উপন্যাস। যে গল্প নিয়ে বারবার সিনেমা তৈরি করা হয়েছে। এই গল্পটি দেবদাস এবং দুটি নারী চরিত্রের মধ্যে এক অবর্ণনীয় প্রেম এবং ট্র্যাজেডি নিয়ে তৈরি। বাংলা এবং হিন্দি ভাষায় একাধিকবার এই গল্প নিয়ে ছবি তৈরি হয়েছে। এই গল্পের প্রভাব পড়েছিল বিশ্ব চলচ্চিত্রেও। হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা মুলন রুশ তৈরি হয়েছিল একই রকম আবেগঘন ত্রিকোণ প্রেম এবং ট্র্যাজেডি নিয়ে।
আলাবন্ধন
২০০১ সালে কমল হাসান অভিনীত আলাবন্ধন ছবিটি মুক্তি পায়। ২০০৩ সালে অর্থাৎ ঠিক দু বছর পর মুক্তিপাই হলিউড সিনেমা কিল বিল ভলিউম। কমল হাসানের সিনেমার রিমেক হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল ওই সিনেমাটি। আলাবন্ধন একটি তামিল অ্যাকশন থ্রিলার ছবি। অন্যদিকে, ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কিল বিল ভলিউম ১ একটি একটি অ্যাকশন থ্রিলার। দুটি সিনেমাই একজন নারী এবং পুরুষের প্রতিশোধ নেওয়ার গল্প রয়েছে। দুটি সিনেমার চরিত্র, গল্পের ধরণ এবং প্রতিশোধের থিম অনেকটা একই রকম। তাই অনেকেই মনে করেন যে কিল বিলের গল্প কমল হাসানের আলাবন্ধন থেকে নেওয়া।
ডর
১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ডর একটি বলিউড থ্রিলার ছবি। এই ছবিতে শাহরুখ খান খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গল্পে একজন নারী এবং তাঁর স্বামীকে হত্যার ভয়াবহ পরকল্পনা দেখে গা শিউরে উঠেছিল দর্শকদের। ছবিটি মূলত মানুষের সাইকোলজি, ভয়, সন্দেহ এবং খুন নিয়ে তৈরি। তিন বছর পর হলিউডে একই গল্প নিয়ে একটি ছবি তৈরি হয়। সিনেমাটির নাম ফিয়ার। এই ছবিতেও এক তরুণীর প্রেমিকের প্রতি আকর্ষণ এবং পড়ে প্রতিশোধের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। তবে,ডর ভারতের সামাজিক দৃষ্টিকোণ এবং সম্পর্কের মধ্যে থাকা ভয় নিয়ে তৈরি হয়েছে। কিন্তু ফিয়ার পশ্চিমি দর্শকদের বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
যাব উই মেট
যাব উই মেট মুক্তি পেয়েছিল ২০০৭ সালে। এটি একটি রোমান্টিক কমেডি ছবি। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন করিনা কাপুর এবং শাহিদ কাপুর। সিনেমাটি বক্স অফিসে দুর্দান্ত সফল্য পেয়েছিল। এটি আধুনিক ভারতীয় রোমান্টিক সিনেমাগুলির মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা। ঠিক তিন বছর পর, ২০১০ সালে হলিউডে যাব উই মেট-এর মতোই একটি রোমান্টিক কমেডি সিনেমা তৈরি হয়। নাম লিপ ইয়ার। এটিও একই রকম মজাদার প্রেমের গল্প। ছবিতে নায়িকা বিয়ে করতে চান, কিন্তু জটিল পরিস্থিতির কারণে প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর তাঁর আলাপ হয় অন্য একজনের সঙ্গে ঠিক যাব উই মেট-এর মতোই এগিয়ে যায় গল্প। তবে গল্প একই থাকলেও ভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের কারণে কিন্তু পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে।
চারুলতা
পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের একটি কাল্ট ছবি চারুলতা। ১৯৬৪ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প নষ্টনীড় থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ছবি তৈরি করেছিলেন মানিকবাবু। চলচ্চিত্রটির মূল চরিত্র চারুলতা একটি উচ্চবিত্ত পরিবারের আদরের মেয়ে। যিনি ব্যক্তিগত জীবনে অবহেলিত। চারুলতা তার একাকীত্ব কাটাতে সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। এরপর চারু স্বামীর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে শ্বশুর বাড়ির এক আত্মীয় সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত, চারুলতা নিজের রচিত সাহিত্য এবং প্রেমের মাধ্যমে এক নতুন জীবনের খোঁজ পেয়েছিলেন। এই গল্প নিয়েই ২০০৫ সালে হলিউডে তৈরি হয় ফরটি শেডস অফ ব্লু। এই রিমেকের প্রেক্ষাপট অবশ্য বেশ আধুনিক। তবে গল্পটির সঙ্গে চারুলতা ছবির বেশ মিল রয়েছে। তবে কিছু পরিবর্তনও আনা হয়েছে। দেখানো হয়েছে এক আধুনিক মহিলার ব্যক্তিগত জীবন এবং সম্পর্কের জটিলতা। তবে, গল্প খানিকটা পশ্চিমি ভাবনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন:- AC লাগবে না! মাত্র 500 টাকাতেই ঘর ঠান্ডা হবে। সিক্রেট জেনে নিন
রঙ্গিলা
১৯৯৫ সালে তৈরি আমির খান এবং ঊর্মিলা মাতন্ডকর অভিনীত রঙ্গিলা একটি রোমান্টিক ড্রামা। ছবিতে একটি সাধারণ মেয়ে চলচ্চিত্র জগতের একজন নায়ক দ্বারা প্রভাবিত হন এবং এক ধরণের প্রেমের জটিলতায় জড়িয়ে পড়েন। এই গল্প নিয়ে ২০০৪ সালে কাজ হয় হলিউডে। ছবির নাম উইন এ ডেট উইথ ট্যাড হ্যামিল্টন। ছবিতে একটি সাধারণ মেয়ে, যে এক টেলিভিশন শোতে একটি বিখ্যাত অভিনেতার সঙ্গে একটি ডেটের সুযোগ পায়। ক্রমেই তা একটি জটিল প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়। এই দুটি ছবির প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও থিম একই।
দৃশ্যম
২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া দৃশ্যম একটি থ্রিলার ছবি। যেখানে একজন সাধারণ মানুষ নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে এক চরম পরিস্থিতিতে বুদ্ধি ও কৌশলের সাহায্যে পুলিশ ও সমাজের চোখেকে ফাঁকি দেয়। এটি মূলত মালায়ালাম চলচ্চিত্র দৃশ্যম- এর হিন্দি রিমেক। এই ছবির গল্প নিয়েই তৈরি হলিউডের দ্য ইনভিসিবেল গেস্ট। গল্প সরাসরি একই না হলেও দুটি সিনেমায় মধ্যে বেশ কিছু মিল দেখা যায়। দুটি সিনেমাই মূলত এক ব্যক্তি বুদ্ধির মাধ্যমে অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।
ডন
১৯৭৮ সালে তৈরিএকটি ক্লাসিক বলিউড থ্রিলার সিনেমা ডন। মুখ্যচরিত্র অমিতাভ বচ্চন অর্থাৎ ডন একজন অপরাধী। যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। পরে হিন্দিতেও এই ছবির আধুনিক রিমেক তৈরি হয়। এই গল্প নিয়েই হলিউডে তৈরি হয় দ্য চেস। এটি একটি অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা, যা ২০০৬ সালে মুক্তি পায়। যদিও এই সিনেমার গল্প সরাসরি ডন- এর কাহিনী থেকে নেওয়া হয়নি, তবে এর মধ্যে কিছু মিল রয়েছে, বিশেষ করে অপরাধী এবং পুলিশের মধ্যে ছকবাঁধা নাটকীয়তা।
কুইন
২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া বলিউড রোমান্টিক ড্রামা কুইন। গল্পে একটি সাধারণ মেয়ে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর হানিমুনের টিকিটে একাই ইউরোপ সফরে চলে যায়। কঙ্গনা রানওয়াত অভিনীত সিনেমাটি সমালোচকদের কাছে যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছিল। এটি মূলত নারী স্বাধীনতা এবং নিজের অস্তিত্ব খোঁজার একটি চমৎকার গল্প। এই গল্পেই হলিউডে তৈরি হয়েছে দ্য হানিমুন। এই গল্পেও একটি সাধারণ মেয়ে নিজের সঙ্গীকে ছেড়ে একাই এক নতুন শহরে গিয়ে নিজের পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
চুপকে চুপকে
চুপকে চুপকে একটি বলিউড রোমান্টিক কমেডি সিনেমা যা ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায়। গল্পে এক দম্পতি শ্বশুরবাড়িতে মজা করতে গিয়ে এক সৃজনশীল কৌশল ব্যবহার করে যা গোটা পরিবারকে বিভ্রান্ত করে। এই গল্প নিয়ে ছবি তৈরি হয় হলিউডে। ছবির নাম দ্য ট্রুথ আব্যাউট ক্যাট অ্যান্ড ডগ। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে। দুই সিনেমার মধ্যে কিছু মিল রয়েছে, বিশেষ করে গল্পের কাঠামো এবং চরিত্রদের মধ্যে গোপনীয়তার তৈরি হওয়া মজাদার পরিস্থিতি।
কাভি আলভিদা না ক্যাহেনা
২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া রোম্যান্টিক ড্রামা কাভি আলভিদা না ক্যাহেনা। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান, প্রীতি জিন্টা, রানি মুখার্জি এবং অভিষেক বচ্চন। এই গল্প দুই দম্পতির সম্পর্ক নিয়ে। যারা একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এই সিনেমাটি সম্পর্কের জটিলতা, প্রেম এবং বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছে। ২০১৪ সালে হলিউডে এই গল্প নিয়েই একটি সিনেমা তৈরি হয়। ছবির নাম দ্য আদার ওম্যান। এই গল্পেও রোমান্স, প্রতিশোধ এবং কমেডি রয়েছে। দুই গল্পেই সম্পর্কের জটিলতা এবং সম্পর্কের বাইরে এক নতুন প্রেম রয়েছে। তবে, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট আলাদা রয়েছে।
আরও পড়ুন:- আপনার কি চোখের সমস্যা আছে? কি কি লক্ষণ থাকলে সতর্ক হবেন? জানুন