Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ভারতে বিবাহ নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রি ম্যারেজ কেন দরকারি? এইটা করলে স্বামী বাকি স্ত্রী কার বেশি সুবিধা হয়? আর না করলেই বা কি ক্ষতি হবে? এই সকল প্রশ্ন মানুষের মধ্যে থাকলেও তারা এই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য খুজতে নারাজ বা সবার করছে তাই আমিও করব এই মানসিকতা নিয়ে করে ফেলছে এবং ভবিষ্যতে কি সমস্যা হবে বা একটা সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য কি আদৌ এই সব কিছুর দরকার? জেনে নেওয়া যাক এই প্রতিবেদনে।
ভারতে বিবাহ নিবন্ধনের নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা
“বিবাহ” এই কথাটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে একটি শুভ ফলদায়ক সম্পর্ক, যার মাধ্যমে দুটি হৃদয় এবং দুটি পরিবার এক সুতোর বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ভারতে বিবাহ নিবন্ধন সার্টিফিকেট কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আজকের এই প্রতিবেদনে সেই সম্পর্কিত তথ্যই তুলে ধরবো। এখনো পর্যন্ত অনেক মানুষই বিবাহ সার্টিফিকেটকে গুরুত্ব সহকারে নেন না। যতই বলা হয়ে থাকে।
সুখী দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি বিবাহ নিবন্ধন?
একটা সুখী বিবাহিত জীবন কাটানোর জন্য কোন মতেই কোন কাগজের দরকার হয় না! শুধুমাত্র দরকার হয় দুই জন ভালো মানুষের এবং তাদের সৎ ইচ্ছার। অনেকের মতে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে যাতে মেয়েরা খোরপোশ পায় সেই কারণের জন্যই এই নিয়ম আনা হয়েছে এবং এই নিয়ম কাজে লাগিয়ে বর্তমানে অনেকেই মেয়ে বা মহিলারা আছেন যারা ইচ্ছা করে বিয়ে ভেঙে মোটা টাকা দাবি করে এই আইনকে এক ধরনের ব্যবসার রুপ দিয়েছেন এমনটা অনেক আদালত ও সামাজিক সংগঠনের তরফে বলা হয়।
আরও পড়ুন:- নকল ওষুধ রুখতে বড়সড় পদক্ষেপ রাজ্যের। জানতে বিস্তারিত পড়ুন
Is Marraige Registration Really Important?
কিন্তু এবারে আইনের চোখে এর গুরুত্ব কি দেখে যাক। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে সচেতনতাই বৃদ্ধি করাই মূল লক্ষ্য, যেখানে বিবাহ করলে সেই বিবাহের একটি আইনত সার্টিফিকেট করে রাখা দরকার। কারণ বিবাহ সার্টিফিকেট শুধুমাত্র একটি সম্পর্ককে আইনি স্বীকৃতি দেয় না, ভবিষ্যতের কোন সময় সম্পর্কের প্রতিকূল অবস্থাতেও অর্থাৎ বিবাহ বিচ্ছেদের সময় আইনি ব্যাপারে এই বিবাহ সার্টিফিকেট আইনি ডিভোর্স প্রক্রিয়াকে অনেকটাই ত্বরান্বিত ও সহজ করে তোলে।
শুধুমাত্র তাই নয়, বিবাহ সম্পর্কে আইনি সার্টিফিকেট নিরাপত্তা প্রদান করে। এছাড়া স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুতে বা বিবাহ বিচ্ছেদ হলে সম্পত্তির দাবি দাওয়া এছাড়া জীবন বীমার দাবিদার ক্ষেত্রে আইনি বিবাহ সার্টিফিকেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিবাহ নিবন্ধন জনিত বিভিন্ন তথ্য আপনার অবশ্যই জানা জরুরী। এর জন্য সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বিবাহ নিবন্ধন পত্র কি?
বিবাহের সনদপত্র হল একটি সরকারী নথি যা রেজিস্ট্রার কর্তৃক জারি করা হয় এবং বিবাহের তারিখ এবং স্থান সহ বিবাহ আইন প্রত্যয়িত করে। বিবাহ হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ অথবা বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪ এর অধীনে নিবন্ধিত করা যেতে পারে। উভয় ধরণের বিবাহের ক্ষেত্রেই, বিবাহ নিবন্ধন পত্র হল একটি দম্পতির বিবাহিত হওয়ার বৈধ প্রমাণ। ২০০৬ সালে, সুপ্রিম কোর্ট নারীর বিবাহের পরবর্তী অধিকার রক্ষার জন্য বিবাহ নিবন্ধন করা প্রত্যেক রাজ্যে সরকারকে নিজেদের রাজ্যে এই নিয়ম লাগু করার নির্দেশ দেয়।
বিবাহ নিবন্ধন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
১) বিয়ের কার্ড।
২) স্বামী ও স্ত্রীর বয়সের প্রমাণ পত্র।
৩) বসবাসের প্রমাণ পত্র।
৪) পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৫) স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের পক্ষে নির্ধারিত ফরম্যাটে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে পৃথক হলফনামা, যাতে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকবে।
৬) স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে যে কেউ বর্তমান বিয়ের আগে ডিভোর্স হলে বিবাহ বিচ্ছেদের সার্টিফিকেট।
৭) পূর্ববর্তী পত্নী বা স্বামী মারা গেলে মৃত্যু সনদ।
৮) যদি স্বামী বা স্ত্রীর কেউ বিদেশী নাগরিক হন, তাহলে বৈবাহিক অবস্থা সার্টিফিকেট।
ভারতে বিবাহ নিবন্ধনের কিছু উভয় পক্ষের সুবিধা
১) যদি আপনি স্বামী/স্ত্রীর ভিসায় বিদেশ ভ্রমণ করতে চান অথবা অন্য দেশে বসবাসের জন্য আবেদন করতে চান, তাহলে আপনাকে একটি বৈধ বিবাহের শংসাপত্র প্রদান করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে, যদি আপনি এক সাথে সম্পত্তি কিনতে চান, তাহলে একটি বিবাহের শংসাপত্র বাধ্যতা মূলক নথি গুলির মধ্যে একটি। যদি আপনি এক সাথে গৃহ ঋণের জন্য আবেদন করতে চান তবে আপনার একটি বিবাহের শংসাপত্রেরও প্রয়োজন হবে।
২) স্বামী/স্ত্রীর সম্পত্তি উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়াও সহজ হবে একটি বৈধ বিবাহ সার্টিফিকেট থাকলে।
৩) যদি আমানতকারী বা বীমাকারীর মৃত্যু হয় এবং কোনও মনোনীত ব্যক্তি না থাকে, তাহলে এটি স্বামী/স্ত্রীকে পারিবারিক পেনশন বা ব্যাংক আমানত বা জীবন বীমা সুবিধা দাবি করতে সক্ষম করে এই বিবাহ সার্টিফিকেট।
৪) বিয়ের পর যদি আপনার নাম পরিবর্তন করতে হয়, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হয় অথবা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয়, তাহলে বিবাহ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন দেখা দেয়।
৫) বিয়ের পর যদি কোন কারণ বশত দুই জনের মধ্যে ডিভোর্স করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলেও এই আইনি বিবাহ সার্টিফিকেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৬) আইনি বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর বা বাচ্চাদের হেফাজতের জন্য, আদালতকে পারিবারিক আদালতে বিবাহের একটি সার্টিফিকেট উপস্থাপন করতে প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই সকল কিছুর জন্য যদি বিবাহ নিবন্ধন নাও থাকে তাহলে সকলকে কোর্টে গিয়ে Affidavit করে নিলেও হবে এই সকল কাজের সময়ের ক্ষেত্রে।
বিবাহ নিবন্ধন অফলাইন পদ্ধতি
১) সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে যেতে হবে স্বামী স্ত্রী দুজনকেই। কিংবা কোন আইনি এডভোকেটের মাধ্যমে যেখানে বিয়ে হয়েছে অথবা যেখানে স্বামী স্ত্রী থাকেন সেখানেও এই কাজটি করা যায়।
২) আইনি বিবাহ আবেদনপত্র পূরণ করুন এবং স্বামী স্ত্রী উভয়কেই ফর্মটিতে স্বাক্ষর করতে হবে। জমা দেওয়া সমস্ত নথিপত্র আবেদনের একই তারিখে যাচাই করা হবে। যাচাইকরণ সম্পন্ন করার পর, অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করা হবে।
৩) একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করুন – যদি বিবাহটি বিশেষ বিবাহ আইনের আওতায় আসে, তাহলে প্রায় ৬০ দিন সময় লাগতে পারে এবং হিন্দু বিবাহ আইনের ক্ষেত্রে, অনুরোধের পর অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ প্রায় ১৫ দিন সময় লাগবে।
৪) দম্পতির উভয় পক্ষের যে কোনও ব্যক্তি, যিনি বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন, তিনি বিবাহের সাক্ষী হতে পারেন। অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিনে, উভয় পক্ষ এবং তাদের বিবাহে উপস্থিত সাক্ষীদের উপস্থিত থাকতে হবে।
বিবাহ নিবন্ধন অনলাইন পদ্ধতি:
১) আপনি যে রাজ্যের অন্তর্গত সেই রাজ্যের বিবাহ নিবন্ধন ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে ক্লিক করুন।
২) আপনার জেলা নির্বাচন করুন এবং আপনার এবং আপনার স্ত্রী বা স্বামীর বিবরণ এবং আপনার বিবাহের বিবরণ জমা দিন।
৩) নিবন্ধন ফর্ম জমা দিন এবং ফর্ম জমা দেওয়ার পরে, আপনি রেফারেন্স নম্বর এবং অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ সহ একটি স্বীকৃতি রসিদ পাবেন যেখানে আপনাকে সংশ্লিষ্ট সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে দেখা করতে হবে।
তাই ভারতে এমন কোন আইন নেই যেখানে উল্লেখ থাকে যে এই বিবাহ নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক! অর্থাৎ দেশের কেন্দ্র সরকার বা পার্লামেন্ট থেকে যেই আইন পাশ হয় সেটা সর্বজন স্বীকৃত কিন্তু এই রেজিস্ট্রি ম্যারেজ পার্লামেন্ট থেকে প্রকাশ হয়নি, তাই ছেলে ও মেয়েরা যদি চায় তাহলে তারা এই নিবন্ধন করবে নইলে কেউ তাদের জোর করতে পারবেন না এমনকি আইনও নয়! তাই হাওয়ায় না ভেসে আসল সত্যি জেনে তবেই কোন না কোন সিদ্ধান্ত নেবেন। এই নিয়ে আপনাদের মতামত নিচে কমেন্ট করে জানাবেন।
আরও পড়ুন:- মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন আছে এই ৪ খাবারে, বিস্তারিত জেনে নিন