Bangla News Dunia , দীনেশ : রোজকার মতো মদ্যপান করে সবে বাড়িতে ফিরেছেন মাঝবয়সি ফ্যামিলিম্যান। অন্যদিন চুপচাপ রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় ধপাস হলেও বাংলা নববর্ষের দিন একটু ব্যতিক্রম ঘটল। ঢুলুঢুলু পায়ে স্ত্রীর সামনে এসে দাঁড়ালেন বাঙালি ভদ্রলোক। স্ত্রী কিছুটা অবাক। কী ব্যাপার? কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভদ্রলোক স্ত্রীর দিকে চেয়ে গড়গড় করে দু’লাইন কবিতা আওড়ালেন। ‘খাঁচার পাখি ছিল/সোনার খাঁচাটিতে/বনের পাখি ছিল বনে।’ ঢেকুর তুলে আবার কবিতা শুরু, ‘বনের পাখি বলে- ‘না, আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।’ স্ত্রী অবাক! স্বামীকে সটান প্রশ্ন, ‘হ্যাঁ গো, তুমি কবিতা শিখলে কোথা থেকে?’
আরও পড়ুন : তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়, এক ক্লিকে জেনে নিন
মদ খেয়ে বাঙালি স্বামীরা বাড়ি ফিরে কবিতা বলতে শুরু করলে অবাক হওয়ার আর কিছু থাকবে না। কারণ, মদের বোতলেই লেখা থাকবে কবিতা। স্বয়ং কবিগুরুর। মঙ্গলবার নববর্ষের দিন থেকে একটি স্কচ ব্র্যান্ড নিয়ে এসেছে তাদের নতুন ধাঁচের মদের বোতল। আর তাতেই একেবারে বাঙালিয়ানা মাখিয়ে লেখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘দুই পাখি’ কবিতার ওই পংক্তি। আসানসোলের (Asansol) মদের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে এই বোতল। যা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা, বিতর্কও। কেউ বলছেন, মদের সঙ্গে একটু কবিতা পাঞ্চ করা থাকলে মন্দ কী? কেউ আবার কড়া সমালোচনা করছেন এই বলে, এতে রবি ঠাকুরের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : স্কুলের মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধি কেন্দ্রের, মাথাপিছু কত বাড়ছে ? দেখে নিন
রবি ঠাকুর কিন্তু নিজেই বহু বিজ্ঞাপনী ক্যাচলাইন লিখেছেন। ‘সুলেখা কালি। এই কালি কলঙ্কের চেয়েও কালো।’ বিখ্যাত এই বিজ্ঞাপনী ভাষ্য কবিগুরুর। কিংবা কুন্তলীন কেশতেল মনে পড়ে? তারও বিজ্ঞাপনী ক্যাচলাইনটি কবিগুরুর লেখা। রবি ঠাকুরের মৃত্যুর পরেও ঘি, সাবান, স্নো-পাউডার থেকে শুরু করে নানান প্রসাধনীর বিজ্ঞাপনে কবির লেখা পংক্তি ব্যবহার হয়েছে। তবে এই প্রথম কোনও বিদেশি মদের ব্র্যান্ড বিশ্বকবির কবিতা বোতলে ছাপিয়ে বিক্রি করা শুরু করল।
আসানসোলে এদিন বাঙালিরা মেতে উঠেছিলেন বর্ষবরণের আনন্দে। রেস্তোরঁায় খাওয়াদাওয়া, মিষ্টিমুখ তো ছিলই। খানার সঙ্গে পিনাও যে হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মদের দোকানগুলোতে লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। আর লাইনে দাঁড়ানো বাঙালির চোখ টেনেছে কবিতা লেখা বোতল।
আরো পড়ুন : ৬ রুটে সরকারি লাক্সারি AC বাস ধর্মতলা থেকে, ভাড়াও কম, কীভাবে বুকিং? জেনে নিন’
এক পাখি খাঁচায় বন্দি, আর একটি জঙ্গলে মুক্ত। কবিতায় দুই পাখির কথোপকথনে স্বাধীনতা এবং বন্ধনের এক দ্বন্দ্বমূলক অর্থ উঠে এসেছে। আর এটাই অনেকের কাছে হয়ে উঠছে বেশ অর্থবহ। জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চাইছেন অনেকে। কেউ আবার বাঙালি অস্মিতাকে ব্যবহার করে ওই স্কচ ব্র্যান্ডের বিপণনী কৌশল বলে বাঁকা চোখে দেখছেন। তবে বেশিরভাগ অংশই সমালোচনায় মুখর। এই যেমন বাংলা পক্ষ। সংগঠনের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক অক্ষয় বন্দ্যোপাধ্যায় এটাকে বাঙালির সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং বিশ্বকবির ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করার প্রয়াস বলে মনে করছেন। অক্ষয় বলেন, ‘আমরা বরাবর দাবি করি বাংলার প্রতিটি দেওয়াল, দোকান এবং গাড়িতে বাংলা ভাষায় লেখা ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে, মদের কোম্পানিগুলো বাংলা ও বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপব্যবহার করবে।’ বোতল থেকে কবিতার পংক্তি সরানোর দাবি তুলেছেন তিনি।
কোম্পানির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। এ নিয়ে আগামীদিনে জলঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে একথা অস্বীকার করা যাবে না, বাংলার কবিদের মধ্যেই অনেকে মদ্যপান করতেন। কলকাতার খালাসিটোলায় মদের আড্ডায় যেতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাস্কর চক্রবর্তী। কমলকুমার মজুমদার তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢক ঢক করে মদ খেয়ে ফেলতেন। তাই মদের সঙ্গে বাংলার কবি, লেখকদের বন্ধন সর্বাত্মক। তবে কারও কবিতাই ব্র্যান্ডিংয়ে ব্যবহার হয়নি। রবীন্দ্রনাথকে দিয়েই শুরু হল এই যাত্রা। এখন দেখার, সাহিত্যপ্রেমী সুরাপ্রেমী বাঙালি বিষয়টিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়।