Bangla News Dunia , পল্লব চক্রবর্তী : শাস্ত্র অনুসারে ব্রহ্মা , বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের দেবতা বলা হয়। তিন জনের মধ্যে শিবের পূজা ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। নানা রূপে বিষ্ণুর পূজাও যথেষ্ট প্রচলিত। ভারতে ব্রহ্মার পূজার চল প্রায় নেই বললেই চলে, ব্রহ্মা মন্দিরও বেশ দুর্লভ। কিন্তু ব্রহ্মা এমন অনাদৃত কেন? এই প্রশ্নটা অনেকের মনের মধ্যে জাগে। জেনে নিন ব্রহ্মার পুজার কেন প্রচলন নেই কেন ?
শিব তাঁর প্রলয়নৃত্যের জন্য বিখ্যাত। বিষ্ণু পরিচিত তাঁর সুদর্শন চক্রের জন্য। দুর্গা ও কালীও শক্তি দেবী হিসেবে আরাধ্যা। ব্রহ্মাকে বলা হয় বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা। যার কারনের আজ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি তার পুজার প্রচলন নেই। ব্রহ্মা কেন পূজিত হন না, কিছু শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাও রয়েছে। পুরাণে কথিত হয়েছে, ব্রহ্মা যখন সৃষ্টি প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন তখন নিজের কাজের সুবিধার জন্য সুন্দরী নারীকে তৈরি করেন তিনি। শতরূপা, গায়ত্রী, সরস্বতী, সাবিত্রী বা ব্রহ্মাণী নামে পরিচিতা সেই নারীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়েন ব্রহ্মা।
শতরূপা ব্রহ্মার থেকে আড়াল হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। নজর রাখতে ঘাড়ের উপর পাঁচটি মাথা তৈরি হয়ে যায় ব্রহ্মার। শতরূপা ব্রহ্মার কামাবেগ থেকে বাঁচতে নানা পশুর ছদ্মবেশ ধরে পালাতে থাকেন। ব্রহ্মাও পশুর পুরুষ রূপ ধারণ করে শতরূপার পিছু নেন। তৈরি হয় জীবকূল। শতরূপা বাঁচতে একটি গুহার ভিতর আশ্রয় নেন। ব্রহ্মা গুহাতে মিলিত হন শতরূপার সঙ্গে। শতরূপা ছিলেন ব্রহ্মার কন্যা। তাঁর সঙ্গে মিলিত হন ব্রহ্মা। অবৈধ যৌনাচারের অপরাধে শিব ব্রহ্মার পঞ্চম মাথাটি কেটে দেন ও অভিশাপ দেন , ধরাধামে কেউ ব্রহ্মার পূজা করবে না।
পৌরাণিক উপাখ্যান অনুযায়ী সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মা প্রজাপতিদের সৃষ্টি করেন। প্রজাপতিরা মানবজাতির আদি পিতা। মনুস্মৃতি গ্রন্থে এই প্রজাপতিদের নাম পাওয়া যায়। মারীচি, অত্রি, অঙ্গিরস, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতুজ, বশিষ্ঠ, দক্ষ, ভৃগু ও নারদ। সপ্তর্ষি নামে পরিচিত সাত মহান ঋষির স্রষ্টা ব্রহ্মা। এঁরা মনুষ্যাকারবিশিষ্ট ঋষি নন। তাকে বিশ্বসৃষ্টির কাজে সহায়তা করেন। তার এই পুত্রগণ তার শরীর থেকে জাত হননি, হয়েছেন তার মন থেকে। তাদের মানসপুত্র বলা হয়।
আর কাহিনিতে বলা হচ্ছে, বিষ্ণু ও ব্রহ্মার মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়- কে বেশি শক্তিশালী। অসত্ পথে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করার চেষ্টা করেছিলেন ব্রহ্মা। শিব ক্ষুব্ধ হন ও ব্রহ্মাকে অভিশাপ দেন , তিনি কোনওদিন পৃথিবীতে পূজিত হবেন না। রাজস্থানের পুষ্করে ভারতের প্রাচীনতম ব্রহ্মা মন্দিরটি অবস্থিত। প্রায় দু’হাজার বছর আগে এই মন্দির তৈরি। ভারতে এমন বৃহদাকার ব্রহ্মা মন্দির খুব কম আছে।
আরও খবর পেতে ফলো করুন আমাদের চ্যানেল