Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পৃথিবীর মাটিতে পা-রাখলেন শুভাংশু শুক্লা-সহ চার মহাকাশচারী ৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে 18 দিন থাকার পর সোমবার শুভাংশুদের ড্রাগন ক্যাপসুল বিকেল 4টে 15 মিনিটে (ভারতীয় সময়) রওনা দেয় সান দিয়েগোর উপকূলের উদ্দেশে ৷ আজ মঙ্গলবার ভারতীয় সময় অনুযায়ী বিকেল 3টে 01 মিনিটে সান দিয়েগোর উপকূলে সমুদ্রে স্প্ল্যাশডাউন হল শুভাংশুদের ড্রাগন স্পেসক্র্যাফটের। ফিরতে সময় লাগল 22 ঘণ্টা ৷
সান দিয়েগোতে এখন রাত ৷ স্থানীয় সময় রাত 2.34 ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে পৃথিবীতে ফিরলেন শুভাংশু-সহ তাঁর 4 সঙ্গী ৷ তাঁরা শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন কি না তা পরীক্ষা করা হবে ৷ ক্যাপসুল অবতরণের পর সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করে তাঁদেরকে স্পেসক্র্যাফট থেকে বের করে হবে ৷ জলযানে করে নদীর তীরে নিয়ে যাওয়া হবে ৷
ছেলে মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরতেই শুভাংশুর পরিবারের সদস্যরা আনন্দে আত্মহারা ৷ অ্যাক্সিওম-4 মিশনে শুভাংশুর সঙ্গে রয়েছেন তাঁর তিন সঙ্গী পেগি হুইটসন (Axiom-এর হিউম্যান স্পেসফ্লাইট ডিরেক্টর), স্লাভোস উজনানস্কি-উইসনিয়েস্কি এবং টিবর কাপু । ক্যাসপুল সাগরের জল ছুঁতেই শুভাংশুর মা কেঁদে ফেলেন ৷ ছেলে এতদিন পর ঘরে ফিরল, আনন্দে আবেগ ধরে রাখতে পারেনি শুভাংশুর মা ৷
- এদিন প্রথমে বেরোন পেগি উইটসন (Axiom-এর হিউম্যান স্পেসফ্লাইট ডিরেক্টর), তাঁকে ধরে নিয়ে আসেন উদ্ধারাকরীরা ৷ তিনি হাসতে হাসতে হেঁটে বেরিয়ে এলেন ৷
- দ্বিতীয়জন শুভাংশু ৷ হাসি মুখে বেরোলেন ভাররতের দ্বিতীয় মহাকাশচারী ৷ তাঁর পোশাকে ভারতের জাতীয় পতাকা ৷ ছেলেকে হেঁটে বেরিয়ে আসতে দেখতেই সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন শুভাংশুর বাবা ৷ এরপর শুভাংশুর বাবা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান ৷ ‘কবে ছেলের সঙ্গে দেখা হবে’ তারই অপেক্ষায় রয়েছেন শুভাংশুর বাবা ৷
- এরপর বেরিয়ে আসেন স্লাভোস উজনানস্কি-উইসনিয়েস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু ।
কখন ও কীভাবে হল স্প্ল্যাশডাউন ?
সমুদ্রে মহাকাশযান অবতরণের প্রক্রিয়াকে ‘স্প্ল্যাশডাউন’ বলা হয়। রেট্রোগ্রেড বার্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে ড্রাগন মহাকাশযানটি পৃথিবীর দিকে নেমে আসে। যার দরুণ এটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আওতায় প্রবেশ করতে পারবে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় মহাকাশযানটির গতিবেগ ছিল প্রায় 28 হাজার প্রতি ঘণ্টায়। তীব্র ঘর্ষণের ফলে প্রচণ্ড তাপও উৎপন্ন হবে, যেটি বিশেষ হিট শিল্ড দিয়ে রক্ষা করা হয়। বায়ুমণ্ডল ভেদ করার পর ছোট এবং বড় প্যারাসুটগুলো একে একে খুলে যায় ৷ যা গতি কমিয়ে এনে নিরাপদে স্প্ল্যাশডাউন নিশ্চিত করে। আবহাওয়া অনুকূলেই ছিল, সেই মতোই প্রশান্ত মহাসাগরের সান দিয়েগো উপকূলে অবতরণ করে ড্রাগন ক্যাপসুল। এরপর স্পেসএক্সের উদ্ধারকারী দল মহাকাশচারীদের ও ক্যাপসুলটিকে উদ্ধার করছেন।
এরপর মহাকাশযানটিকে একটি বিশেষ জাহাজে তোলা হবে ৷ তারপর ধীরে ধীরে ক্যাপসুল থেকে বের করে আনা হবে শুভাংশুদের। অ্যাক্সিওম-4 মিশনের সদস্য়দের জাহাজের মধ্য়েই একাধিক মেডিক্যাল চেকআপ হবে ৷ তীরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টারে চড়ানো হবে ৷ নাসা এই ঐতিহাসিক স্প্ল্যাশডাউন সরাসরি সম্প্রচার করবে বলে জানিয়েছে। উল্লেখ্য প্রায় 41 বছর পর কোনও ভারতীয় মহাকাশে পাড়ি দিলেন ৷ এর আগে 1984 সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে রাকেশ শর্মা মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন ৷
পরবর্তী সাতদিন কী কী করবেন শুভাংশুরা ?
তবে পৃথিবীতে ফিরেই মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না শুক্লারা ৷ ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে অবতরণের পরে বিশেষ নজরদারির মধ্যে তাঁকে থাকতে হবে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে মোটামুটি সাতদিন নজরদারিতে রাখা হবে তাঁকে। যেমন হয়েছিল সুনীতা উইলিয়ামসের ক্ষেত্রেও।
গত 25 জুন, ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে প্রায় 28 ঘণ্টা যাত্রা শেষে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছয় এবং অ্যাক্সিয়ম-4 মিশন সফলভাবে ডক করে । 14 দিনের মিশনে শুভাংশুরা মহাকাশে পাড়ি দেন ৷ 18 দিন কাটিয়ে আজ তাঁরা পৃথিবীতে ফিরছেন ৷ অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পরবর্তী পূর্ণকালীন মিশন ক্রু 11-এর উৎক্ষেপণ আগামী 31 জুলাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কত টাকা খরচ ইসরোর ?
শুভাংশুর আইএসএস-যাত্রার জন্য ইসরো প্রায় 550 কোটি টাকা খরচ করেছে । 2027 সালে মহাকাশে মানুষ পাঠাবে ভারত। সেই গগনযান প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করতেই শুভাংশুকে আইএসএস-এ পাঠানো হয়েছে ।
আরও পড়ুন:- মায়ের কোন কোন গুণ ছেলেদের মধ্যে দেখা যায় ? জেনে রাখুন
আরও পড়ুন:- আজ থেকে রেলে তত্কাল বুকিংয়ে নয়া নিয়ম শুরু, পুরো প্রক্রিয়া জেনে রাখুন