বর্তমান সময়ে ভারত কিংবা বাংলাদেশ উভয় দেশেই ব্যবসার প্রবণতা প্রবল হারে বাড়ছে। এমন সময়ে আপনার হাতে এমন হয় যে এই ব্যবসার সুযোগ নিয়ে এসেছি যার মাধ্যমে আপনি মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে সপ্তাহে ১৫ হাজার বা তার বেশি আয় করতে পারেন। আজকে যে ব্যবসাগুলি সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি সেগুলিতে অল্প সময়ে শুরু করে কিছুদিনের মধ্যেই লাভবান হতে পারবেন। আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে একটি ভাল ব্যবসা খুঁজে থাকেন তাহলে এই ৬টি ব্যবসার মধ্যে যেকোনো একটি করতে পারেন।
চলুন তাহলে আজকের এই প্রতিবেদনে ধাপে ধাপে এই ছয়টি সেরা ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করি যা খুব অল্প টাকায় শুরু করা সম্ভব তবে আপনার মূলধন আরো বেশি হলে সেটি আরো বড় জায়গায় পৌঁছাতে পারে –
১. চা ও স্ন্যাকসের দোকান
ভারত কিংবা বাংলাদেশে চা কেবল পানীয় পণ্য নয়, এ এক আবেগও বটে। এই দেশজ আবেগের উপর ভিত্তি করে আপনি চা ও স্ন্যাকসের একটি ছোট দোকান খুলে নিতে পারেন মাত্র ₹১০,০০০ টাকায পুঁজি খাটিয়ে তবে আরো বেশি মূলধন হলে বড় আকারে এই ব্যবসা করতে পারেন।
কোথায় খুলবেন?
বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি অফিসের কাছে, বাসস্ট্যান্ড, কলেজ ক্যাম্পাস বা ছোট বা বড়ো বাজার এলাকায় এমন দোকান খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। দিনে যদি ২০০ থেকে ৩০০ কাপ চা বিক্রি করতে পারেন, তাতে প্রতিদিনের খরচ উঠে যাওয়ার পাশাপাশি ভালো লাভ পকেটে আসবে।
কী বিক্রি করবেন?
চা-এর সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু খাবার বিক্রি করতে পারেন যেমন বিস্কুট, সিঙ্গারা, পাকোড়া, রোল ইত্যাদি। ভিন্ন স্বাদের চা যেমন আদা চা, লেবু চা, তুলসি চা-ও গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে থাকে।
লাভের অঙ্ক:
প্রতিদিন ₹১,৫০০–₹২,০০০ বিক্রি করলে সপ্তাহে ১৫,০০০+ হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
২. মোবাইল রিপেয়ারিং ও এক্সেসরিজ ব্যবসা
আজকের দিনে মোবাইল ফোন প্রতিটি মানুষের অপরিহার্য সঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে মোবাইল রিপেয়ারিং কাজ ও এক্সেসরিজের চাহিদাও দ্রুত হারে বাড়ছে। এই ব্যবসাটি শুরু করা যায় মাত্র ₹১০,০০০ টাকা দিয়ে তবে পুঁজি বেশি হলে লাভও বেশি সম্ভব ।
ব্যবসা কী কী প্রয়োজন?
- কিছু বেসিক টুলস (সোল্ডারিং কিট, স্ক্রু ড্রাইভার সেট, হট এয়ার গান ইত্যাদি)
- ট্রেনিং (৬ মাসের শর্ট কোর্স করতে পারেন)
- এক্সেসরিজ কেনা (কভার, চার্জার, হেডফোন, টেম্পার্ড গ্লাস ও অন্যান্য)
কোথায় করবেন?
ঘরেই ছোট দোকান শুরু করতে পারেন অথবা বাজারে ছোট জায়গা ভাড়া নিয়ে এই ব্যবসা করা সম্ভব ।
লাভের সম্ভাবনা:
প্রতিদিন ৫–৬ টি মোবাইল সারানো কাজ ও ₹২০০–₹৩০০ করে এক্সেসরিজ বিক্রি করে সপ্তাহে ৫-১৫ হাজার পর্যন্ত রোজগার সম্ভব।
৩. আগরবাতি ও মোমবাতি তৈরির ব্যবসা
বাংলাদেশ বা ভারতে প্রত্যেক ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে আগরবাতি ও মোমবাতির ব্যবহার অপরিহার্য অংশ হিসেবে পরিচিত। সারা বছর ধরেই চাহিদা থাকায় এটি একটি লাভজনক হোম-ভিত্তিক ব্যবসা হতে পারে।
কীভাবে শুরু করবেন?
এই ব্যবসার সামগ্রী ₹১০,০০০-এর মধ্যেই কিনে ফেলতে পারবেন—
- আগরবাতি পাউডার
- সুগন্ধি তেল
- স্টিক
- প্যাকেটিং উপকরণ
- ম্যানুয়াল আগরবাতি মেশিন
মোমবাতি তৈরির জন্য প্রয়োজন—
- মোম
- রং
- সুগন্ধি
- ছাঁচ
কোথায় বিক্রি করবেন?
স্থানীয় বাজারের দোকানে, হোলসেল মার্কেটে অথবা অনলাইনে (Amazon, Flipkart, Facebook Marketplace) বিক্রি করতে পারেন।
আয়ের পরিমাণ:
সঠিকভাবে মার্কেটিং করলে মাসে ₹৩০,০০০–₹৫০,০০০ পর্যন্ত লাভ করতে পারেন
৪. হাতে তৈরি ও কৃত্রিম গয়নার ব্যবসা
সাধারণত মেয়েদের কাছে স্টাইল মানেই গয়না।তাইতো হাতে তৈরি বা কৃত্রিম গয়নার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে ইনভেস্টমেন্ট অনেক কম, কিন্তু লাভ বেশি হয়।
কী কী লাগবে?
₹১০,০০০ টাকায় কিনে ফেলতে পারবেন—
- বিডস, স্টোন, থ্রেড ইত্যাদি
- হুক, লক
- ডিজাইনিং কিট
কোথায় বিক্রি করবেন?
লোকাল মার্কেট, বিভিন্ন মেলাযর স্টল, কিংবা Instagram, Facebook, WhatsApp Business-এর মাধ্যমে প্রচার করে। চাইলেই Amazon-এ লিস্টিং করতে পারেন এই সমস্ত প্রোডাক্ট।
কেন সফল হবেন?
- তরুণ প্রজন্মের মধ্যে চাহিদা প্রবল থাকে
- উপহার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে থাকে
- নিজস্ব ব্র্যান্ড গড়ে তোলা সম্ভব
সম্ভাব্য রোজগার:
এক্ষেত্রে প্রতি মাসে ₹২৫,০০০–₹৪০,০০০ আয় হতেই পারে।
৫. দর্জির দোকান ও বুটিক ব্যবসা
যদি আপনার সেলাই করার দক্ষতা থেকে থাকে কিংবা কাউকে নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন, তাহলে দর্জির কাজ বা বুটিক খুলে মাসে ভালো রোজগার করা সম্ভব।
কী লাগবে?
- একটি সেলাই মেশিন দরকার (বাড়িতে থাকলেও চলবে)
- কাপড়, সুতো, বোতাম ইত্যাদি ₹১০,০০০ বাজেটে কেনা সম্ভব
কী ধরনের পরিষেবা দেবেন?
- মহিলাদের পোশাক তৈরি ও রেডিমেড সেল
- কিডস ড্রেস বিক্রি
- ব্লাউজ ডিজাইন করা
- অল্টারেশন করা
কোথায় কাজ পাবেন?
- বাড়ির আশেপাশে প্রচার করুন
- সোশ্যাল মিডিয়াতে ডিজাইন পোস্ট করে অর্ডার করাতে পারেন
মাসিক আয়:
উৎসব বা বিয়ের মরশুমে এতে মাসে ₹৫০,০০০ পর্যন্ত রোজগার সম্ভব।
৬. টিফিন সার্ভিস ও হোমমেড ফুড ডেলিভারি
আমরা সকলে জানি বাংলায় খাওয়া দাওয়া সবার উপরে তাইতো খাবারের ব্যবসা সবসময় চলবে—এটা অলিখিত নিয়ম। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, যেখানে বহু মানুষ রান্না না করে হোমমেড খাবার খুঁজে থাকেন।
কীভাবে শুরু করবেন?
₹১০,০০০ পুঁজিতে—
- রান্নার উপকরণ কেনা
- বাসনপত্র কেনা
- ডেলিভারি কন্টেনার তৈরি
- গ্যাস বিল দেওয়া
কাদের জন্য?
- কলেজ ছাত্র ছাত্রী
- অফিস কর্মী হলে অবসর সময়ে
- একা থাকা পরিবার হলে
কিভাবে পৌঁছাবেন?
- হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রচার করতে পারেন
- Facebook Local Group এ শেয়ার
- Zomato বা Swiggy-তে লিস্টিং (পরবর্তী ধাপে) করতে পারেন
লাভের পরিমাণ :
প্রথম দিকে ১০–১৫ জন গ্রাহকের মাধ্যমে মাসে ₹৩০,০০০ আয় করা সম্ভব ভবিষ্যতে ক্যাটারিং পরিষেবা পর্যন্ত পৌঁছানো যেতে পারে।
যে সমস্ত তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যবসার খোঁজে রয়েছেন এবং তাদের হাতে পুঁজি কম রয়েছে এই প্রতিবেদনটি কেবল তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।যদি আপনি এটি কম পুঁজি দিয়ে শুরু করেন তবুও ভালো আয় করা সম্ভব কিন্তু যদি বেশি পুঁজি খাটিয়ে আরো বড় আকারের করে তুলতে পারেন তাহলে আপনার আয় আরো বেশি হবে।
