মার্কিন মুলুকে অর্থনৈতিক মন্দার মেঘ।

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, যে ট্যারিফ-যুদ্ধের প্রথম রাউন্ডটা জিতে গিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপ থেকে জাপান এর মতো খাতায়কলমে শক্তিশালী অর্থনীতি তাঁর বেঁধে দেওয়া শুল্ক-শর্তে রাজি হতে বাধ্য হয়েছে। বলা ভালো বাণিজ্য-সম্পর্ক থাকা দেশের মধ্যে চিন ছাড়া বাকি সবাইকেই আপাতত নাকে দড়ি দিয়ে নাগরদোলায় চাপিয়ে রেখেছেন পোটাস।

যেমন অবস্থা ভারতের। নয়াদিল্লির উপর ২৭ অগস্ট থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ব্যালিস্টিক মিসাইল আগেই লঞ্চ-প্যাডে বসিয়ে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আজ, শুক্রবার, আলাস্কায় হাই-ভোল্টেজ বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প-পুতিন। এ সবের মধ্যেই এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন ট্রেজ়ারি সেক্রেটারি স্কট বেসেনেট জানিয়ে দিলেন, বৈঠক তাঁদের জন্য ফলপ্রসূ না হলে রাশিয়া থেকে তেল কেনার অপরাধে ভারতের উপর কার্যকর শুল্কের হার আরও বাড়তে পারে।

মার্কিন শুল্ক-অর্থনীতির নিউ-নর্ম্যাল এখন অন্ততপক্ষে ১৫-২৫ শতাংশ হার। এই শুল্ক-হার বিংশ শতকের গোড়ার দিকে পেতে অভ্যস্ত ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার পরে পারদ আর কখনওই এতটা চড়েনি। বর্ধিত শুল্কের জেরে রাজকোষে আপাতত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আসছে ঠিকই। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের গরিষ্ঠ অংশের মতে এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্নটা হচ্ছে, এই শুল্কের ফলে কি মার্কিন অর্থনীতিতে উন্নতি কি হচ্ছে, নাকি তাকে মন্দার দিকে ঠেলছে?

দেদার ডলার আসছে শুল্কের রুট ধরে, তারপরেও মন্দা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত মার্কিন বাজারে যে পণ্য পৌঁছচ্ছে, তা কিন্তু বর্ধিত দরে নয়। এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘লিবারেশন ডে’ ট্যারিফ ঘোষণার কার্যকর ৯০ দিন পিছিয়ে পরেই সংস্থাগুলি শিপমেন্ট ফ্রন্ট-লোডিং করে নিয়ে কন্টেনার বোঝাই বিস্তর মাল এনে জমা করেছিল ওয়্যারহাউসে। এই ইনিশিয়াল হানিমুন পিরিয়ড কেটে যাওয়ার পর, যখন প্রেসিডেন্টের নিদান মতো চাহিদামতো পণ্য মার্কিন মুলুকেই তৈরি করা যাবে না, তখন আসবে আসল ধাক্কা।

তখন সংস্থাগুলি এবং সেই পণ্যের ‘আল্টিমেট বায়ার’ আমজনতার পকেটে তা ছেঁকা ধরাবে। বাজারে চাহিদার তুলনায় কম পণ্য থাকায়, মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি খারাপ হতে বাধ্য। যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে পিছনে টেনে ধরতে বাধ্য। যার উদাহরণ হিসেবে জেনারেল মোটরস এবং ফোকসফাগেন-এর উদাহরণ দিচ্ছেন তাঁরা। বর্ধিত আমদানি শুল্কের জেরে যারা ইতিমধ্যেই ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি (৮,৭৬৮ কোটি টাকা) ক্ষতির কথা জানিয়েছে।

এর সঙ্গেই রাখতে হবে মার্কিন চাকরি বাজার এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি পরিস্থিতির সাম্প্রতিক ছবিটা। সদ্য প্রাক্তন ইউএস কমিশনার অফ দ্য ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিক্স হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন চলতি মাসের গোড়াতেই। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সামনে এনে তিনি দাবি করেছিলেন, গত কয়েক মাসে কৃষি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের সংখ্যা ২.৫০ লক্ষেরও বেশি কমেছে। যা প্রকাশ্যে আসার পরেই তাঁর চাকরি খেয়েছেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এর মাধ্যমে দেশে উৎপাদন এবং চাকরির সংখ্যা (বিশেষত লেবার ইনসেনটিভ ক্ষেত্রে) হঠাৎ করে যে বাড়ানো যাবে না, সেটায় একমত বিশেষজ্ঞমহলের গরিষ্ঠ অংশ। গোল্ডম্যান স্যাক্সের দাবি, এই হারে চলতে থাকলে বছরের শেষের দিকে শুল্কের ছেঁকার আসল তাত গায়ে লাগবে মার্কিন সংস্থাগুলির। যারা তা উসুল করবে আমজনতার পকেট থেকে। সব মিলিয়ে বৃদ্ধির চাকার সামনে যে তা বড়সড় স্পিড-ব্রেকার তৈরি করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মন্দার আশঙ্কা তাই একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

গোল্ডম্যান স্যাক্স থেকে মুডিজ়, একাধিক বিশেষজ্ঞ সংস্থার তরফে দাবি করা হচ্ছে, মন্দার শুরুতে পরিস্থিতিটা এমনই থাকে। যা এখন মার্কিন মুলুকে রয়েছে। পাশাপাশি, দেশের অর্ধেকের বেশি শিল্পসংস্থার তরফে ইতিমধ্যেই ছাঁটাই শুরু হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এক সমীক্ষায় দেশের এক তৃতীয়াংশের বেশি ‘বড়’ কর্পোরেট সংস্থার সিইও জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান হাওয়া যা, তাতে শুল্ক পরিস্থিতিতে বড় বদল না এলে, আগামী ৬-৮ মাসের মধ্যে সংস্থার পে-রোলে বড়সড় সঙ্কোচন আসা প্রায় অনিবার্য। যে মনোভাব সে দেশের অর্থনীতিতে মন্দার মেঘ ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরালো করছে।

আরও পড়ুন:- মেদ কমানোর ইনজেকশনে চোখের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা, নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্য

আরও পড়ুন:- রাস্তায় কুকুর কামড়ালে প্রথমেই কী করতে হয়? জানা থাকলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন