Bangla News Dunia , পল্লব চক্রবর্তী :– যোগ সম্পর্কিত ধারণা বর্তমানে যা সারা পৃথিবীর নজর কেড়েছে তা সুপ্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই প্রচলিত ছিল। তখন থেকেই অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে এবং এখন আমরা যাকে যোগা ভ্যাস বলে জানি তা প্রকৃত যোগাভ্যাসের থেকে অনেকটাই আলাদা।
যোগাসনের ইতিহাস —-
- বেদের আগের যুগ (৩০০০ খ্রীষ্টপূর্বের আগে)
পশ্চিমের শিক্ষিতরা এটাই বিশ্বাস করতেন যোগ আবিষ্কৃত হয় ৫০০ খ্রীষ্টপুর্বাব্দে। যদিও, হরপ্পা ও মহেঞ্জোদড়োর খনন কার্যের ফলে যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে তাতে যোগের বিভিন্ন ভঙ্গিমার ছবিও আছে। এর থেকেই বোঝা যায় যে খ্রীষ্টের জন্মের ৫০০০ বছর আগেও যোগাভ্যাসের প্রচলন ছিল।
- বৈদিক যুগ (খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ৮০০)
বৈদিক যুগে যোগাভ্যাস করা হত মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য এবং দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য। এখনকার যুগের যোগাভ্যাসের থেকে তখনকার ধর্মীয় আচারের যোগাভ্যাস অনেকটাই আলাদা ছিল।
- ঊপনিষদের যুগ (খ্রীষ্টপূর্ব ৮০০ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ২৫০)
ঊপনিষদ, মহাভারত ও গীতাতে যোগের উল্লেখ দেখা যায়। ভগবৎগীতাতে ঞ্জান যোগ, ভক্তি যোগ, রাজ যোগ ও কর্ম যোগ এই চার প্রকারের যোগেরই উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই সময় যোগ শুধুমাত্র শ্বাস বা ভঙ্গিমা সংক্রান্ত অভ্যাস ছিল না, তা ছিল প্রাত্যহিক জীবনের একটা অঙ্গ।
- ক্ল্যাসিকাল যুগ (খ্রীষ্টপূর্ব ১৮৪ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ১৪৮)
ক্ল্যাসিকাল যুগে পতঞ্জলি ১৯৫টা সূত্রকে একত্রিত করে যোগকে একটা সংক্ষিপ্ত আকার দেন। পতঞ্জলির যোগ দর্শন রাজ যোগ নামেই পরিচিত। ইয়ম্ (সামাজিক বিধি), নিয়ম (ব্যক্তিগত বিধি), আসন (শারীরিক ভঙ্গিমা), প্রাণায়াম (শ্বাস-প্রশ্বাসের বিধি), প্রত্যাহার (চেতনাকে সরিয়ে রাখা), ধারণ (মনঃসংযোগ), ধ্যান ও সমাধি।
- পোস্ট ক্ল্যাসিকাল যুগ (৮০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দ)
পতঞ্জলি যোগের অনুগামীরা আসন, ক্রিয়া ও প্রাণায়ামের দ্বারা শরীর ও মনের শুদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে যোগাভ্যাসকে নতুন মাত্রা দেন। শরীর ও মনের শুদ্ধি এই যোগাভ্যাসকারীদের সমাধির মত উচ্চ মার্গের সাধনাতে সাহায্য করত।
- আধুনিক যুগ (খ্রীষ্টাব্দ ১৮৬৩ পরবর্তী)
শিকাগোর ধর্ম মহাসম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতার মাধ্যমে সারা পৃথিবীর কাছে যোগকে পৌঁছে দেন। সারা বিশ্বই যোগকে ধর্ম নির্বিশেষে আধ্যাত্মিকতার এক অন্যতম অঙ্গ হিসাবে গ্রহন করেছে, কোন বিশেষ ধর্মের আচার হসাবে নয়।
বর্তমান যোগ চর্চা প্রাথমিক কালের যোগের থেকে অনেকটাই আলাদা, কিন্তু পতঞ্জলির যোগ-দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই এরও সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মনের সুস্থতার থেকে বেশী শরীরের সুস্থতার দিকে নজর দিচ্ছি।