Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- শহরের কোলাহল, কংক্রিটের বন্দিদশা আর যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান? গাঢ় সবুজের মাঝে বুনো পাখির কূজন শুনতে, অদেখা প্রাণীদের কাছ থেকে নিঃশব্দ পাঠ নিতে চান? তাহলে আপনাকে একবার ঘুরেই আসতে হবে বর্ধমানের কেতুগ্রামের বেলুন গ্রামে, যেখানে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে এক অপূর্ব ইকো রিসর্ট— ‘জলবাড়ি’।
প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে ‘জলবাড়ি’
শিবাই নদীর তীরে প্রায় ৩০ বিঘা জমির উপর গড়ে ওঠা এই প্রকৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র একাধারে বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয়, আবার প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের জন্যও এক অনন্য স্বর্গরাজ্য। বন্যপ্রাণ চিত্রগ্রাহক ও বন্যপ্রাণ গবেষক তন্ময় ঘোষের হাতে গড়ে ওঠা এই প্রকল্পে লাগানো হয়েছে খুদিজাম, কদম, জিলাপি ফল, শিমুল, বকুলের মতো গাছ, যা পাখিদের জন্য আদর্শ আশ্রয়স্থল।
এই অরণ্যে ৪৭টি প্রজাতির দেশীয় ও পরিযায়ী পাখির বাস। শীতের মরশুমে সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে এখানে। একদিকে সাদা ফিতে লেজের দুধরাজ, পাঁচ রঙের ইন্ডিয়ান পিট্টা, শুকনো পাতার রঙের নাইটজার, নীল লেজের বাঁশপাতি, অন্যদিকে জলে খেলে বেড়ায় গ্রেল্যাস গুস, বার হেডেড গুসের দল।
এখানে ১৮০টিরও বেশি প্রজাতির সরীসৃপ, ৪৩টি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ৩৪ প্রজাতির দেশি মাছ রয়েছে। রাতের অন্ধকারে দেখা মেলে বনবিড়াল, ভোঁদড়, বিভিন্ন ধরনের প্যাঁচা, এমনকি মেছোবিড়ালেরও।
অনন্য এক রিসর্ট— প্রকৃতির বুকে আরামের নিবাস
‘জলবাড়ি’ শুধু সংরক্ষিত অরণ্য নয়, এখানে রয়েছে পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি চারটি কটেজ। এই রিসর্টের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব— প্রকৃতির সাথে নিবিড় সংযোগ। এখানে কোনও অত্যাধুনিক বিলাসিতা নেই, আছে প্রকৃতির অনবদ্য ছোঁয়া।
শৌচাগারগুলিও অভিনব— অর্ধেক খোলা ছাদ, যাতে বৃষ্টি হলে সরাসরি জল পড়ে স্নানের এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়। তার ভেতরেই গজিয়েছে গাছ। শুধু তাই নয়, এখানে এক ব্যতিক্রমী ‘জলবায়ু ব্যায়াম কেন্দ্র’ তৈরির পরিকল্পনাও চলছে, যেখানে শরীরচর্চার মধ্যেও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।
পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার এক দৃষ্টান্ত
তন্ময় ঘোষের বিশ্বাস, প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানই মানুষের ভবিষ্যত। প্রতিটি প্রাণী বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন— বনবিড়াল দিনে পাঁচটি ইঁদুর খায়, যা ফসল রক্ষা করতে সাহায্য করে। পাখিরা জমির ক্ষতিকর পোকা খেয়ে চাষের উৎপাদন বাড়ায়।
এখানে কোনও গাছ কাটা হয় না, কোনও প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় না। এমনকি সাপ বা পিঁপড়েও মারাও এখানে নিষিদ্ধ।
প্রকৃতি আর খাদ্যের অপূর্ব সংযোগ
শুধু প্রকৃতি দর্শন নয়, এখানে অর্গানিক ফুড-এর স্বাদও নিতে পারবেন পর্যটকরা। বিনা কীটনাশকে চাষ করা ধানের ভাত, শুক্তো, মাছ-মাংসের নানা পদ, আর শীতের সময় উদ্ধারনপুরের খাঁটি নলেন গুড়ের পায়েস ও সন্দেশ। পর্যটকরা চাইলে এখানেই গুড় তৈরি হতে দেখতেও পারেন।
পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রকল্প
রাজ্য পর্যটন মেলায় ‘বেস্ট ইনোভেটিভ প্রজেক্ট অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেয়েছে জলবাড়ি। তবে এটি পিকনিক স্পট নয়। উচ্চস্বরে গান-বাজনা, হৈ-হুল্লোড় এখানে নিষিদ্ধ। একমাত্র প্রকৃতিকে ভালোবাসেন, প্রকৃতির শান্তি উপভোগ করতে চান— তাদের জন্যই এই জায়গা আদর্শ।
কেন আসবেন ‘জলবাড়ি’-তে?
বিরল প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ ও জলজ প্রাণী দেখতে
প্রকৃতির কোলে নিরিবিলি সময় কাটাতে
সম্পূর্ণ অর্গানিক খাবারের স্বাদ নিতে
জীববৈচিত্র্যের অপরূপ মেলবন্ধন দেখতে
শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু বিরতি নিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে হারিয়ে যেতে চাইলে, প্রকৃতির সৌন্দর্যকে পরতে পরতে ছুঁতে চাইলে বেলুন গ্রামের ‘জলবাড়ি’ হতে পারে আপনার আদর্শ গন্তব্য।
আরও পড়ুন:- রাজ্য পুলিশে সরাসরি ইন্টারভিউর মাধ্যমে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত দেখে শীঘ্রই আবেদন করুন
আরও পড়ুন:- এভাবে রোজ রুটি খেলে গলগলিয়ে বেরোবে খারাপ কোলেস্টেরল, রইল বিস্তারিত