Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- শহিদ পরিবার হিসেবে টানা 10 বছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে ডাক পেয়েছিলেন। এখন আর পান না। আজকের একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশেও ডাক পাননি। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন খাদ্য আন্দোলনের প্রথম শহিদ নুরুল ইসলামের পরিবার।
উত্তর 24 পরগনা স্বরূপনগরের ভোগলবাড়ি এলাকার বাসিন্দা তারা । তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ‘প্রয়োজন ফুরিয়েছে’ বলে তারা মনে করছেন। শহিদ নুরুল ইসলামের ভাই সুরত আলি মোল্লা বলেন, “বাম আমলে সিপিএম আমাদের ব্যবহার করল । তৃণমূলও তাই করছে। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে যাওয়ার জন্য স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তৃণমূল নেতা-সহ সকলের কাছে আবেদন করলেও তাঁরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অথচ, ঘরবাড়ি, শৌচালয় তৈরি থেকে শুরু করে একাধিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেগুলি পূরণ করা হয়নি।”
1966 সালের খাদ্য আন্দোলনে প্রথম শহিদ হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। তারপরে রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে বিমান বসু থেকে শুরু করে একাধিক বাম নেতা নুরুল ইসলামের মা আছিয়া বিবি, বাবা এনসাফ মোল্লা-সহ পরিবার নিয়ে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নুরুলের ভাই সুরাত আলি মোল্লাকে ভূমি ও রাজস্ব দফতরের কাজ দিয়েছিলেন । বিভিন্ন সময় স্থানীয় বাম নেতারা নুরুলের পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন বলেও দাবি করা হয়েছে নুরুলের পরিবারের তরফে।
পরবর্তীতে 2009 সালে বারাসতের জনসমাবেশ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে দলে যোগ দিয়েছিলেন সুরত আলি মোল্লা, তাঁর মা আছিয়া বিবি-সহ পরিবারের সদস্যরা। অশোকনগরের বর্তমান বিধায়ক তথা স্বরূপনগরের নেতা নারায়ণ গোস্বামী তাঁদের তৃণমূলে যোগদান করতে উৎসাহিত করেছিলেন। সেবার থেকেই 21 জুলাইয়ের শহিদ মঞ্চে নুরুলের মা, বোন, ভাইপোকে বহুবার ডাকা হয়েছিল। পরবর্তীতে তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নুরুলের ভাইপোকে রেলে চাকরির ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছিল।
1966 সালের খাদ্য আন্দোলনে প্রথম শহিদ হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম
উত্তর 24 পরগনার দাপুটে তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তথা বালুর সঙ্গে সখ্যতাও তৈরি হয়েছিল এই শহিদ পরিবারের। তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল ভালো। কিন্তু, ছন্দপতন ঘটে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগদানের পর। কারণ, নুরুল ইসলামের পরিবারকে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে ডাকা এবং উপস্থিত করানোর দায়িত্বে থাকতেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। বছরভর তৃণমূলের নানা কর্মসূচিতে নুরুলের পরিবারকে হাজির করানো, তাঁদের খোঁজ-খবর নেওয়া, যে কোনও সমস্যায় সরাসরি প্রাক্তন মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত এই পরিবার। এখন যা কোনওভাবেই সম্ভবপর হয়ে উঠছে না।
আরও পড়ুন:- ৩ বছরে ১১১০% রিটার্ন, সোমবারও লগ্নিকারীদের নজরে রেলের এই স্টক
খাদ্য আন্দোলনের প্রথম শহিদ নুরুল ইসলামের পরিবার
নুরুলের পরিবারের এক সদস্য বলেন, “প্রথমত শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে চলে যাওয়া এবং পরবর্তীতে নুরুলের মা আছিয়া বিবির মৃত্যুর পর কার্যত সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে তৃণমূল উচ্চ নেতৃত্বে সঙ্গে। ফলে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে আমন্ত্রণ পাওয়া তো দূর সেখানে যাওয়ার জন্য স্বরূপনগরের স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও বিশেষ পাত্তা পাওয়া যায়নি।” বিধায়ক বা স্থানীয় তৃণমূল উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দেখছি দেখব বলে কাটিয়ে দেওয়া হয়, অভিযোগ নুরুলের ভাই সুরত আলি মোল্লার।
আর আজ অর্থাৎ 2025-এর 21 জুলাইয়ের ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব বিশেষ গুরুত্ব না-দেওয়ায় নানাভাবে তৃণমূলের উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল শহিদ নুরুলের পরিবারের তরফে। কলকাতার একাধিক তাবড় নেতাকে ফোন করেও কোনও সুরাহা হয়নি। এক এক জন, এক একটা মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করার কথা জানিয়েছিলেন। সেই মতো কালীঘাটেও যোগাযোগ করা হয়েছিল বলে নুরুলের পরিবারের দাবি। কিন্তু সেখান থেকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয় ‘নুরুলের পরিবারকে শহিদ মঞ্চে ডাকা বা তাঁদের নিয়ে আসার বিষয়ে কোনও নির্দেশ পৌঁছয়নি।’
নুরুল ইসলামের পরিবারকে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে ডাকা এবং উপস্থিত করানোর দায়িত্বে থাকতেন শোভন চট্টোপাধ্যায়
অগত্যা একুশে জুলাইয়ের সমর্থনে এলাকার একাধিক পথসভা বা বৈঠকে অংশগ্রহণ করলেও আজ তারা ধর্মতলায় যাননি। উল্লেখ্য, শহিদ নুরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের 1993 সালের 21 জুলাইয়ের ঘটনার সঙ্গে কোনওভাবেই যোগসূত্র নেই। কিন্তু খাদ্য আন্দোলনের প্রথম শহিদ হিসাবে নুরুল ইসলামের পরিবারকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন:- কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন ? মুক্তি পেতে সহজ কিছু উপায় জেনে নিন