Bangla News Dunia, Pallab : নাম বিতর্কে শিয়ালদা (Sealdah)। শিয়ালদা বলতে রেলস্টেশন। উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) বিভিন্ন স্টেশনের নাম অনেকদিন আগে বদলে দিয়েছে সেখানকার বিজেপি সরকার। শিয়ালদা নাম পালটানোর পক্ষেও বিজেপি সওয়াল করছে অনেকদিন। রবিবার সেই দাবি আরও জোরালোভাবে জানালেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। স্টেশনটিকে জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত করতে তাঁর আগ্রহের কথা জানান।
আরও পড়ুন : ভারতের উত্থান সহ্য করতে পারছেন না ! ট্রাম্পকে কটাক্ষ করলেন রাজনাথ
সুকান্তের এই মন্তব্য সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যজুড়ে আলোড়ন ফেলেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে শিয়ালদার যোগাযোগ অনেকদিনের। কলকাতায় যাওয়ার জন্য অনেক এলাকারই উপায় ট্রেনে শিয়ালদা পৌঁছানো। ফলে রাজ্যের প্রায় সব এলাকার মানুষ শিয়ালদা নামটির সঙ্গে পরিচিত। অনেকের আবেগেও জড়িয়ে আছে নামটি। সেই নাম বদলের প্রস্তাব নিয়ে তাই নানা প্রতিক্রিয়া আছে।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে পালটা বিবেকানন্দের নামাঙ্কিত করার দাবি তোলা হয়েছে স্টেশনটিকে। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় শিয়ালদা নাম বদলের বিরোধিতা করেছেন। উত্তরবঙ্গের শিল্পমহলের পরিচিত নাম তথা কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির উত্তরবঙ্গের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জিৎ সাহা বলেন, ‘হঠাৎ কেন শিয়ালদা স্টেশনের নাম বদলের দাবি উঠছে, স্পষ্ট নয়। যেমন আছে, তেমনই থাক না।’
শ্যামাপ্রসাদ বা বিবেকানন্দের মতো কাউকে সম্মান জানাতে হলে ‘নতুন স্টেশন গড়ে তোলা যেতে পারে, তার প্রয়োজনও আছে’ বলে সঞ্জিতের মত। উত্তরবঙ্গের সাহিত্য জগতের বিশিষ্ট নাম বিপুল দাসের বক্তব্য, ‘শিয়ালদা নাম তো আজকের নয়, বহু পুরানো। স্টেশনটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য। নতুন করে নামকরণের যৌক্তিকতা বুঝতে পারছি না। নাম পরিবর্তন করলে বরং বিভ্রান্তি হবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যাত্রীদের। নাম না পরিবর্তন করাই উচিত।’
বিজেপি ও তৃণমূল উভয়েই নিজেদের প্রস্তাবের সামনে কিছু ঐতিহাসিক যুক্তি খাড়া করছে। যেমন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর যুক্তি, ‘একসময়ে এই স্টেশনে হাজার হাজার উদ্বাস্তু এসেছেন। তাঁদের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন যিনি, সেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে শিয়ালদার নাম হোক।’ এর আগেও বিজেপি এই দাবি তুলেছিল। গত বছরের অক্টোবরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো কলকাতায় এলে বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন।
তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘শিয়ালদার সঙ্গে মানুষের রক্তাক্ত ইতিহাস জড়িয়ে আছে। সর্বস্বান্ত মানুষ ভিড় করেছিলেন এই স্টেশনে। ক্যাম্প করে শিয়ালদা স্টেশনের আশপাশে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছিলেন যিনি, তাঁর নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।’ শ্যামাপ্রসাদের নামে সরাসরি বিরোধিতা করছে না তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, ‘তিনি শ্রদ্ধেয় মানুষ। তাঁর নামে বন্দর রয়েছে। আবার স্টেশন কেন?’
তবে শিয়ালদাকে বিবেকানন্দের নামাঙ্কিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন কুণাল। তাঁর ভাষায়, ‘শিকাগো ধর্মসভায় ঐতিহাসিক বক্তব্য রাখার পর তিনি বজবজে জাহাজ থেকে নেমে রেলপথে শিয়ালদায় পৌঁছোন। এই স্টেশনেই বিবেকানন্দকে তাঁর বিশ্বজয়ের জন্য সেদিন দেশের মানুষ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। তাই শিয়ালদা স্টেশনের নাম স্বামী বিবেকান্দের নামে করা হোক।’
বাম ও কংগ্রেসের মতে, শ্যামাপ্রসাদের নাম দিয়ে বিজেপি আসলে গেরুয়াকরণ করতে চাইছে বাংলার সংস্কৃতিকে। তৃণমূল পালটা বিবেকানন্দের নাম নেওয়ায় কিছুটা অস্বস্তিতেও পড়েছে বিজেপি। কারণ, হিন্দুত্বের রাজনীতিতে বিবেকানন্দকে আইকন হিসেবে তুলে ধরতে চায় বিজেপি।
সুকান্ত অবশ্য মনে করিয়ে দেন, ‘স্টেশনের নাম নির্ভর করে রাজ্য সরকারের ওপর।’ তাই তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে আর্জি জানিয়ে বলেন, ‘এই স্টেশনের নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম করতে কেন্দ্রকে প্রস্তাব পাঠান।’ শিয়ালদা-রানাঘাট রুটে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লোকাল ট্রেনের উদ্বোধন করতে এসে সুকান্ত ওই মন্তব্য করেন। ভবিষ্যতে রাজ্যে আরও বহু শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লোকাল ট্রেন চালুর আশ্বাসও দেন।
উদ্বোধনের পর নতুন ট্রেনে চড়ে দমদম স্টেশনে নামার পর সুকান্তকে ঘিরে তৃণমূল কর্মীরা জয় বাংলা স্লোগান দেন। সেখানে বিজেপির মহিলা কর্মীদেরও নিগৃহীত করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগ। পুলিশেরও কড়া সমালোচনা করেন তিনি।
আরও পড়ুন : সাবধান! স্মার্টফোন চার্জে দেওয়ার সময় এই ভুল করবেন না, ফোন Dead হয়ে যায়