Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সুন্দরবন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি। এখানকার বিস্তীর্ণ নদীখাঁড়ি, কাদামাটির চর, আর ঘন অরণ্যের মাঝে ঘুরে বেড়ায় ভারতের জাতীয় পশু। যারা বন্যপ্রাণী ভালোবাসেন, তাঁদের অনেকেরই স্বপ্ন, একবার হলেও চোখে পড়ুক সেই রাজকীয় প্রাণীটি। কিন্তু সুন্দরবনের ঘন জঙ্গল আর বিস্তৃত এলাকার কারণে বাঘ দেখা যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই ভাগ্যের ব্যাপার। তবে সময় ও জায়গা বুঝে গেলে, বাঘ দেখার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
কখন গেলে বাঘ দেখার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি?
বনদফতরের কর্মীদের মতে, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই শীতকালীন সময়েই বাঘ দেখা সবচেয়ে বেশি সম্ভব। এই সময় তাপমাত্রা কমে আসে, জলস্তরও হ্রাস পায়, ফলে বাঘেরা শিকারের খোঁজে বা জল খেতে নদী ও খাঁড়ির ধারে চলে আসে। একইসঙ্গে, এই সময়ে গাছের পাতা ঝরে যাওয়ায় দৃশ্যমানতাও বাড়ে, তাই বাঘ চোখে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পর্যটকদের জন্য সকাল বা বিকেলের সময়টাই সবচেয়ে উপযোগী। কারণ, দুপুরে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বাঘেরা গহীন জঙ্গলে আশ্রয় নেয় এবং কম সক্রিয় থাকে।
সুন্দরবনের কোন কোন এলাকায় বাঘ দেখার সম্ভাবনা বেশি?
১. সজনেখালি অভয়ারণ্য ও ওয়াচ টাওয়ার
সুন্দরবনে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার, মিউজিয়াম এবং বন দফতরের অফিস রয়েছে। আশপাশে বাঘের চলাচল নিয়মিত, অনেকেই ভাগ্যবান হলে এখানে বাঘ দেখতে পান।
২. সুধান্যখালি ওয়াচ টাওয়ার
এই এলাকাটি বাঘের জলপান ও চলাচলের জন্য বিখ্যাত। এখানকার ওয়াচ টাওয়ার থেকে নদী ও বনভূমির বিস্তীর্ণ এলাকা দেখা যায়।
৩. দোবাঙ্কি ক্যানপি ওয়াক
দেখার মতো একটি আকর্ষণীয় এলাকা, যেখানে উঁচু কাঠের পুলের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাঘসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখা যায়।
৪. নেতিধোপানি
এই অঞ্চলটি ঐতিহাসিক দিক থেকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এখানে বাঘের উপস্থিতি নিয়মিত লক্ষ্য করা যায়। প্রবেশের জন্য আলাদা অনুমতি প্রয়োজন।
৫. পীরখালি, পাঁচমুখানি, গোসাবা খাঁড়ি অঞ্চল
এইসব এলাকায় নদীপথে ঘোরার সময় বাঘ দেখা গেলে তা খুব কাছ থেকেই দেখা যায়। অনেকে এখানেই বাঘ সাঁতার কাটতে দেখেছেন।
পর্যটকদের জন্য কিছু সতর্কতা
অনুমোদিত নৌকা ও গাইড ছাড়া জঙ্গলে প্রবেশ করা আইনত অপরাধ। নৌকা বা জেটি থেকে কোনওভাবেই নামা উচিত নয়। বাঘের খোঁজে অতি উৎসাহী হয়ে ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। ক্যামেরা ব্যবহার করার সময় শব্দ বা ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করাই শ্রেয়। বনবিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘গত কয়েক বছরে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। শীতকালে পর্যবেক্ষণ টিম প্রায়শই বাঘের চলাচল নজরে রাখে, বিশেষত জলের ধারে।’
সব মিলিয়ে বলা যায়, সুন্দরবনে বাঘ দেখা এক বিরল সৌভাগ্যের বিষয় হলেও, সঠিক সময়, জায়গা ও সতর্কতা মেনে চললে সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন শুনে বা চোখের সামনে তাকে দেখে নেওয়ার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে জীবনের অন্যতম রোমাঞ্চকর মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে।
ওয়াইল্ড লাইফ পর্যবেক্ষক শমীক দত্ত বিষয়টিতে বললেন, ‘বাঘ দেখতে গেলে রিমোট এলাকাগুলোতে যেতে হয়। কিন্তু ঝুঁকির কারণে সাধারণ পর্যটকদের সেসব জায়গায় যেতে দেওয়া হয় না। তাই সজনেখালির কাছে গেলে বাঘের দেখা মেলার সম্ভাবনা বেশি। তবে সেই বাঘেদের মধ্যে বাঘিনী বেশি। এখন সুন্দবনে বাঘ বেড়েছে। গর্ভবতী বাঘরা লোকালয়ের কাছে চলে আসে। যাতে মুরগি, হাস নিয়ে আসতে পারে। সজনেখালিতে শীতকালে বাঘ বেশি দেখার সম্ভাবনা বেশি। বাঘের মুভমেন্ট সকাল ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বেশি থাকে। তবে গরমের দুপুরে বাঘেরা হেঁতালের জঙ্গলে ঢুকে বসে থাকে।’
আরও পড়ুন:- ৮ আগস্টের মধ্যে KYC না করলেই ফ্রিজ হবে অ্যাকাউন্ট! সতর্ক করল এই ব্যাঙ্ক
আরও পড়ুন:- ডিম কীভাবে খেলে পুষ্টি সবচেয়ে বেশি পাবেন ? কি বলছেন পুষ্টিবিদরা জেনে নিন