সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিল্টার ব্যবহার বিগড়ে দিচ্ছে মেন্টাল হেলথ, গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- একবার ভাবুন তো, আমরা কি সত্যিই আমাদের আসল চেহারাকে ভালোবাসি? নাকি শুধুই সোশ্যাল মিডিয়ার ফিল্টারের মধ্য দিয়ে নিজেদের এক কল্পিত রূপে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি? আজকাল এমন অনেকেই আছেন, যারা ফিল্টার ছাড়া নিজেদের ছবি তুলতে বা শেয়ার করতেও লজ্জা পান! কিন্তু কেন? কেন আমাদের নিজেদের প্রকৃত সৌন্দর্য মেনে নিতে এত দ্বিধা?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফিল্টার-নির্ভরতা ধীরে ধীরে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার! আসুন, গবেষণার আলোকে জেনে নেওয়া যাক, কেমন করে ফিল্টার-নির্ভরতা আমাদের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শান্তিকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

ফিল্টারের মোহ: মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব
মানসিক বিশেষজ্ঞ ডঃ বিধি এম পিলনিয়া বলছেন, ‘‘নিত্যদিন ফিল্টার ব্যবহারের ফলে মানুষ অবাস্তব সৌন্দর্যের এক ধারণায় আটকে পড়ে।’’ যখন কেউ ফিল্টার ছাড়া নিজের মুখ আয়নায় দেখেন, তখন মনে হয় যেন কিছু একটা “ভুল” আছে! অথচ সেটাই আসল চেহারা!

আরও পড়ুন:- হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নওশাদ সিদ্দিকীর, জানুন কী কথা হল?

গবেষণা কী বলছে?
* পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সোশ্যাল মিডিয়া কম ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে একাকিত্ব ও ডিপ্রেশনের লক্ষণ অনেকটাই কম। অন্যদিকে, যারা বেশি সময় ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের রূপ নিয়ে সচেতন, তারা মানসিক চাপ ও হতাশায় ভুগছেন।

* ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘক্ষণ রিলস বা ফিল্টারযুক্ত ছবি দেখার কারণে আমাদের ঘুমের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এতে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা বাড়ে, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে।

* ফোর্টিস হাসপাতালের শিশু মনোবিজ্ঞানী ডঃ সমীর পারেখ জানিয়েছেন, ‘‘কিশোররা এখন নিজেদের বাস্তব চেহারা ফিল্টারের সাথে তুলনা করছে। এতে আত্মবিশ্বাস কমছে, সামাজিক যোগাযোগ দুর্বল হচ্ছে, এমনকি পড়াশোনায় মনোযোগের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।’’

সোশ্যাল মিডিয়ার নিখুঁত দুনিয়া বনাম বাস্তব জীবন
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ সত্যকান্ত ত্রিবেদী বলেন, ‘‘অতিরিক্ত ফিল্টার ব্যবহারের ফলে মানুষ বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। নিজেদের প্রকৃত রূপ মেনে নিতে পারছে না, ফলে হতাশা ও হীনম্মন্যতা বেড়ে যাচ্ছে।’’

ডঃ অনিল সিং শেখাওয়াত আরও যোগ করেন, ‘‘এখনকার কিশোর-কিশোরীরা শুধু ‘সুন্দর’ দেখানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তারা বাবা-মায়ের কাছ থেকে দামি ক্যামেরা ও লাইট সেটআপ কিনে রিল বানানোর দিকে বেশি মনোযোগী হচ্ছে। এটি মানসিকভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে, কারণ তারা বাস্তব জীবন থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।’’

কীভাবে ফিল্টার আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসবেন?
* নিজের প্রকৃত সৌন্দর্যকে ভালোবাসুন – ফিল্টার ছাড়া নিজের ছবি তুলুন ও পোস্ট করুন। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
* অতিরিক্ত ফিল্টার এড়িয়ে চলুন – ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন, তবে সেটাকে নির্ভরতা বানাবেন না।
* সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স করুন – মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটান।
•  স্মরণ রাখুন—আসল সৌন্দর্য মনের ভেতর – ফিল্টার শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন আনে, কিন্তু আসল সৌন্দর্য আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।

ফিল্টার নিঃসন্দেহে ছবি সুন্দর করে তোলে, কিন্তু বাস্তব জীবন ফিল্টারের মতো নয়! তাই নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের প্রকৃত সৌন্দর্যকে সম্মান করুন। মনে রাখবেন, ফিল্টারের পেছনে লুকিয়ে থাকা চেহারাটাই আপনার সত্যিকারের পরিচয়, এবং সেটাই সবচেয়ে সুন্দর!

আরও পড়ুন:- আপনার শিশুও কি পট্যাটো চিপসের ভক্ত? অবশ্য়ই জেনে রাখুন এই জিনিস

আরও পড়ুন:- হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করতে পাতে রাখুন এই ফলগুলি

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন