শুনানির মূল বিষয়বস্তু
এদিনের শুনানিতে মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী সৌম্য মজুমদার এবং বিকাশ ভট্টাচার্য একাধিক জোরালো সওয়াল করেন। তাদের প্রধান অভিযোগগুলি ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, নিয়ম লঙ্ঘন এবং দুর্নীতি। শুনানির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো:
- ব্রেকআপ মার্কস প্রকাশে অসঙ্গতি: মামলাকারীদের আইনজীবী জানান যে, ২০১৭ এবং ২০২১ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের ব্রেকআপ মার্কস প্রকাশ করার জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছিল। বোর্ড সেই মার্কস প্রকাশ করলেও তাতে একাধিক ভুল ছিল, যা সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও করা হয়নি।
- অ্যাপটিটিউড টেস্টে নির্দেশিকার অভাব: ২০১৭ সালের নিয়োগে অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়ার জন্য ইন্টারভিউয়ারদের কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি, যা ২০২১ সালের নিয়োগে ছিল। এটি পুরো প্রক্রিয়াটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
- মেধা তালিকার অভাব: প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কখনো ক্যাটেগরি অনুযায়ী ব্রেকআপ মার্কসসহ সম্পূর্ণ মেধা তালিকা প্রকাশ করেনি, যা স্বচ্ছতার অভাবকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
- দুর্নীতির অভিযোগ: আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি শুরু থেকেই একটি “প্রাতিষ্ঠানিক জালিয়াতি” (institutional fraud) ছিল। OMR শিট মূল্যায়নের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে কোনো টেন্ডার ছাড়াই নিয়োগ করা হয়েছিল, যা নিয়মের পরিপন্থী।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
শুনানি চলাকালীন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে, যদি ৩২ হাজার কর্মরত শিক্ষককে বরখাস্ত করে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বলা হয়, তবে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, কয়েক দশক আগে মাধ্যমিক পাস করা প্রার্থীদের এবং বর্তমান প্রার্থীদের একই প্ল্যাটফর্মে মূল্যায়ন করা কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
মামলার ভবিষ্যৎ
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বিকাশ ভট্টাচার্য তার সওয়াল চালিয়ে যাবেন। ৩২ হাজার শিক্ষকের ভবিষ্যৎ এখন আদালতের রায়ের ওপর নির্ভরশীল। একদিকে যেমন কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি হারানোর ভয়, তেমনই অন্যদিকে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের ন্যায়বিচারের আশা। এই মামলাটি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে। আগামী দিনে আদালত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে গোটা রাজ্য।