1% Rules of Savings: মাসের শেষে কি আপনার পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে? বেতন পাওয়ার পর ২০ তারিখ পেরোতেই হাতটান? এই সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই, সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা বা ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং মেনে চললে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব দুটি সহজ অথচ অত্যন্ত কার্যকরী নিয়ম নিয়ে— ‘জিরো-বেসড বাজেটিং’ (Zero-Based Budgeting) এবং ‘১% রুল’ (1% Rule), যা সাধারণ মধ্যবিত্তের আর্থিক জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
জিরো-বেসড বাজেটিং (Zero-Based Budgeting) আসলে কী?
অনেকেই মাসের শুরুতে একটি আনুমানিক বাজেট তৈরি করেন, কিন্তু জিরো-বেসড বাজেটিং এর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথাগত বাজেটিং-এ খরচে রাশ টানা হয়, কিন্তু এই পদ্ধতিতে মাসের শুরুতেই আপনার আয়ের প্রতিটি টাকার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাজ বা ‘পারপাস’ ঠিক করে দেওয়া হয়।
কীভাবে কাজ করে এই পদ্ধতি?
- শূন্যের অঙ্ক: এই পদ্ধতির মূল মন্ত্র হলো: আয় – (খরচ + বিনিয়োগ) = ০। অর্থাৎ, আয়ের প্রতিটি পয়সা খরচের খাতা বা বিনিয়োগের খাতায় চলে যাবে। মাসের শেষে আপনার হাতে কোনো অলস টাকা বা ‘আইডল মানি’ পড়ে থাকবে না।
- প্রতিটি টাকার হিসাব: বাড়ি ভাড়া, খাবার খরচ, লোন ইএমআই (EMI) থেকে শুরু করে সেভিংস— সবকিছুর জন্য টাকা বরাদ্দ করা থাকে।
- প্রতি মাসে নতুন শুরু: এটি কোনো বাঁধাধরা ছক বা টেমপ্লেট নয়। প্রতি মাসে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট নতুন করে তৈরি করতে হবে। যেমন, কোনো মাসে পুজোর খরচ বা বিয়েবাড়ির উপহারের জন্য আলাদা বাজেট রাখতে হতে পারে, যা পরের মাসে নাও লাগতে পারে।
বিনিয়োগের ১% রুল (The 1% Rule of Investing)
বাজেট তৈরি করা হলো আর্থিক শৃঙ্খলার প্রথম ধাপ। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ গড়তে হলে সঞ্চয় বাড়ানো জরুরি। এখানেই কাজে আসে ‘১% রুল’। এই নিয়মটি অত্যন্ত সহজ— প্রতি মাসে আপনার ‘ভেরিয়েবল’ বা পরিবর্তনশীল খরচ মাত্র ১% কমিয়ে সেই টাকা সঞ্চয়ে বা এসআইপি-তে (SIP) যোগ করুন।
কীভাবে প্রয়োগ করবেন ১% রুল?
প্রথমে আপনার খরচকে দুটি ভাগে ভাগ করুন:
- ফিক্সড খরচ (Fixed Expenses): যা কমানো সম্ভব নয়। যেমন— বাড়ি ভাড়া, লোন, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম।
- ভেরিয়েবল খরচ (Variable Expenses): যা আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে। যেমন— বাইরে খাওয়া, ওটিটি সাবস্ক্রিপশন, শপিং বা যাতায়াত খরচ।
ধরুন, আপনার ভেরিয়েবল খরচ মাসে ১৫,০০০ টাকা। এর ১% হলো মাত্র ১৫০ টাকা। প্রথম মাসে এই ১৫০ টাকা খরচ কমিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে বা সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা করুন। শুনতে খুব কম মনে হলেও, এই ছোট পদক্ষেপটি একটি অভ্যাসে পরিণত হয়। পরের মাসে আরও ১% কমানোর চেষ্টা করুন। ১০-১৫ বছর পর কম্পাউন্ডিং-এর জাদুতে এই ছোট সঞ্চয়ই বিশাল অংকে পরিণত হতে পারে।
কেন এই পদ্ধতি জরুরি?
এই দুটি নিয়ম মেনে চললে আপনি কেবল আর্থিক সংকট থেকেই মুক্তি পাবেন না, বরং আপনার মধ্যে একটি ‘ইনভেস্টর মাইন্ডসেট’ তৈরি হবে। টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে তা নখদর্পণে থাকলে, অনর্থক খরচ কমে যায় এবং সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়ে। আজই শুরু করুন আপনার জিরো-বেসড বাজেটিং এবং নিশ্চিত করুন এক উজ্জ্বল আর্থিক ভবিষ্যৎ।
Follow Us














