Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বিহার-নামটা শুনলেই অনেকের বন্দুক থেকে শুরু করে গোলাগুলি, বোমা, ধস্তাধস্তি বা রক্তপাতের মতো মন খারাপ করা শব্দের কথা মনে পড়ে যায় ৷ হাল আমলের ওয়েব সিরিজের হাত ধরে এমন ধারনা অল্পবিস্তর প্রতিষ্ঠাও পেতে শুরু করেছে ! দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা অস্বীকার খুব একটা সহজ কথা নয় ৷
দেশের এই রাজ্য ‘অপরাধের রাজধানী’ নামেই অধিক খ্যাত (পড়ুন কুখ্যাত) ৷ রাজ্যের প্রায় প্রতিটি থানায় দায়ের হওয়া এফআইআরের ফাইল দেখলে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাবে ৷ সেই রাজ্যেরই এক গ্রাম 111 বছর ধরে অপরাধমুক্ত ! স্বপ্নের মতো শোনালেও, ঘটনাটি একেবারে সত্যি ৷ গত 111 বছর কোনও মামলাও দায়ের হয়নি এই গ্রামে ৷ সরকারি নথি সেই কথাই বলছে ৷
নিজের ‘আইন’ মেনে চলে গ্রাম
গ্রামের নাম বনকট ৷ দেশের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ গ্রামটি গয়া জেলায় অবস্থিত ৷ চারিদিকে জঙ্গলে ঘেরা গ্রামে বসতি স্থাপন হয় 1914 সালে ৷ সেই থেকে নিজেদের তৈরি আইন মেনেই চলছেন গ্রামবাসীরা ৷ শান্তি বজায় রাখার জন্য থানা-পুলিশ করে আদালত গিয়ে মামলা করার দরকার পড়ে না ৷ বরং গ্রামের পঞ্চায়েতে 5 সদস্যের আলোচনার মাধ্যমেই এক নিমেষে যে কোনও সমস্যার সমাধান হয়ে যায় ৷ স্থানীয় বাসিন্দা 76 বছর বয়সি রামদেব যাদব বলেন, “গ্রামের প্রতিষ্ঠাতারা কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা তৈরি করেছিলেন ৷ এখনও পর্যন্ত সেই সমস্ত নিয়ম মেনেই আমরা সকলে বসবাস করি ৷”
জনসংখ্যা মাত্র 600 ৷ কোনও বিভেদ সৃষ্টি হলেই পঞ্চায়েতের সভা ডেকে সমস্যার সমাধান করেন অভিজ্ঞরা ৷ এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা 45 বছর বয়সি হীরা রাওয়ানি বলেন, “জন্মের পর থেকে কোনও রকমের অপরাধ হতে দেখেনি ৷ থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার কোনও ঘটনাও শুনিনি ৷”
পুলিশ আছে, কাজ নেই !
অপরাধ নেই ঠিকই, কিন্তু থানা রয়েছে ৷ বনকট গ্রামটি আমস থানার অন্তর্গত ৷ থানায় পুলিশের কর্মীরাও রয়েছেন ৷ কিন্তু, কোনও কাজ করতে হয় না তাঁদের ৷ থানার স্টেশন ইন-চার্জ শৈলেশ কুমার বলেন, ” দায়িত্বে আসার পর বিষয়টি শুনে আমিও অবাক ৷ ঘটনাটি আদৌ সত্যি কি না, তা জানার জন্য পুরনো সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখেছি ৷ স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেছি ৷ জানতে পেরেছি, এখনও পর্যন্ত ওই গ্রাম থেকে একটিও এফআইআর দায়ের করা হয়নি ৷”
খালি পড়ে রয়েছে থানা
‘হাঁড়ির খবর’ ও মুশলিক আসান
গ্রামের প্রধান রাজকুমার গেহলত বলেন, “বাসিন্দারা শান্তিতে থাকতে ভালোবাসেন ৷ দীর্ঘদিনের এই শান্তির বাতাবরণে ব্যাঘাত ঘটুক, তা কেউ চান না ৷” উল্লেখ্য, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্রামের প্রধানের পদে রয়েছেন রাজকুমার ৷ তাঁর কাছে গ্রামের প্রতিটি মানুষের ‘হাঁড়ির খবর’ রয়েছে ৷ বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল রেখে কীভাবে গ্রাম তথা গ্রামবাসীর উন্নতি হবে সেদিকেই নজর রয়েছে তাঁর ৷
কিন্তু প্রশ্ন হল, বছরের পর কিভাবে নিজেদের ধারা বজায় রেখেছেন বনকট গ্রামের বাসিন্দারা ? রামদেব জানান, যে কোনও সমস্যার সমাধানে 5 সদস্যকে নিয়ে পঞ্চায়েতে আলোচনা শুরু হয় ৷ 2 জন পক্ষে, 2 জন বিপক্ষে এবং একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি আলোচনার সময় ‘রেফারির’ ভূমিকা পালন করেন ৷ দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ এরপর দুই পক্ষই একটি লিখিত জমা দেন ৷ ব্যাস, ম্যাজিকের মতো সমস্যার সমাধান হয়ে যায় ৷
শান্তিতে থাকতেই ভালোবাসেন গ্রামের বাসিন্দারা
রামদেব আরও জানান, শাস্তি স্বরূপ দোষীর বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয় ৷ পরে সেই জরিমানার অর্থ দিয়েই গ্রামের বিভিন্ন উন্নতি প্রকল্পের কাজ হয় ৷ এমনকী, গ্রামের কোনও বাসিন্দার জরুরি প্রয়োজনেও সেই টাকা খরচ করা হয় ৷ কারও কোনও অনুষ্ঠানের জন্যও এই অর্থের খানিকটা ব্যবহার করা হয় ৷
মাওবাদীদের রক্ত চক্ষু….
স্থানীয় এক শিক্ষক তথা বিএলআরও তত্ত্বাবধায়ক অরুণ কুমার জানান, তুলসি যাদব, নাথুনি যাদব, মুঙ্গেশ্বর যাদব ও সজীবন যাদব নামে 4 ব্যক্তি জঙ্গল কেটে যাতাযাতের পথ তৈরি করেন ৷ মূলত, চাষাবাদের জন্য এলাকাটি পরিষ্কার করেন তাঁরা ৷ ধীরে ধীরে এলাকায় বসবাস শুরু করেন ৷ এরপরই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বসতি ৷ তিনি বলেন, “গ্রামের ভোটার সংখ্য়া মোট 352 জন ৷ এলাকার বাসিন্দারা চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল ৷ তবে, 15 বছর ধরে চাকরি ও উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যত্র যাচ্ছেন গ্রামের যুবকরা ৷” 1990 সালে গয়ায় প্রকট হয়ে উঠেছিল মাওবাদী আন্দোলন ৷ রামদেব বলেন, “সেই সময়েও গ্রামবাসীর ঐক্যে ফাটল ধরেনি ৷”
আরও পড়ুন:- বদলে যাচ্ছে UPI পেমেন্টে টাকা লেনদেনের পদ্ধতি, বিস্তারিত জেনে নিন