3 বছরেও চালু হল না মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘পথক্ষণিকা’ প্রকল্প, কারণ কি ?

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পুরভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতির তিন বছর অতিক্রান্ত ৷ মহানগরে এখনও সেভাবে বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘পথক্ষণিকা’ ৷ তাই এই নিয়ে একরাশ ক্ষোভ জন্মেছে মহিলাদের মধ্যে ৷ গত তিন বছরে শহরে তৈরি হয়েছে মাত্র দুটি ‘পথক্ষণিকা’ ৷ কিন্তু তারও উদ্বোধনের বালাই নেই ৷ সেগুলি তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৷ এখনও কাজ বাকি আরও পাঁচটির ৷

প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদাই দল থেকে শুরু করে নির্বাচন বা প্রশাসনে মহিলাদের ক্ষমতায়নে প্রাধান্য দিয়েছেন । মহিলা ভোট ধরে রাখতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে । কলকাতা পুরনিগম নির্বাচনের প্রাক-মুহূর্তে শহুরে মহিলাদের স্বার্থে তেমনই একটি প্রতিশ্রুতি ছিল তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প ‘পথক্ষণিকা’ । এই বিষয়টি পুর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের ইস্তাহারের দশ দিগন্তেও উল্লেখ করেছিল । সেই প্রতিশ্রুতির তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বাস্তবায়নের পথে যাচ্ছে না শহরে । তবে ‘পথক্ষণিকা’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের দরবারে প্রশংসিত হত সেই কর্মকাণ্ড, মনে করছে সাধারণ মানুষ ।

কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর এই পছন্দের নারী স্বাচ্ছন্দ্যের প্রকল্প হয়েছে শহরের বুকে মাত্র দুটি জায়গায় । একটি উত্তর কলকাতার 51 নম্বর ওয়ার্ডে 15 নম্বর রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে । অপরটি দক্ষিণ কলকাতার পাটুলি দমকল কেন্দ্রের পাশে 110 নম্বর ওয়ার্ডে । ব্যাস । দুটি তৈরি হলেও সেগুলির উদ্বোধন এখনও হয়নি । ঝাঁ চকচকে ‘পথক্ষণিকা’ তালা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ।

আরও পড়ুন:- ‘ভূতুড়ে ভোটার’ তাড়াতে বড় সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের, জানতে বিস্তারিত পড়ুন

51 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইন্দ্রনীল কুমার বলেন, “2022 সালে ‘পথক্ষণিকা’ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলাম । লড়াই করে আদায় করেছি । শহরে প্রথম আমার ওয়ার্ডে তৈরি হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের প্রকল্প । মেয়র সাহেব সময় দেবেন, আগামী মাসেই সাধারণের জন্য খুলে যাবে দরজা । উপকৃত হবেন অসংখ্য মহিলা ।”

মহিলাদের কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প?

নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্যের দিক থেকে অতুলনীয় এই পথক্ষণিকা । এক ছাদের তলায় থাকবে অত্যাধুনিক শৌচালয়, স্নানঘর, পোশাক পরিবর্তনের ঘর, সন্তানকে স্তন্যপান করানোর ঘর, স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন, বেবি কেয়ারিং, বেসিন, সাময়িক বিশ্রামের জায়গা । ফলে পথচলতি থেকে শ্রমজীবী কিংবা ফিল্ড ওয়ার্কার্স মহিলা – সকলের কাছে দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানের একটি বড় জায়গা হতে পারে ‘পথক্ষণিকা’ । এত পরিষেবা মিলবে তাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে । এক একটি পথক্ষণিকা তৈরি করতে খরচ পড়বে 21 থেকে 26 লাখ টাকা । এর মধ্যেই ধরা আছে এক বছরের রক্ষণাবেক্ষণের খরচও ।

কাউন্সিলর ইন্দ্রনীল কুমারের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর এটা স্বপ্নের প্রকল্প । আমরা যারা তাঁর সৈনিক, তাঁর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করব । সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার এলাকায় ‘পথক্ষণিকা’ করায় প্রতিদিন অসংখ্য মহিলা উপকৃত হবেন । সামনেই ক্যালকাটা গার্লস, লি মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল । সেখানে বহু অভিভাবক আসেন । শিয়ালদা থেকে ডালহৌসি যাওয়া মহিলা পথচারীদের কথাও চিন্তা করা হয়েছে । বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, খেলার মাঠে, যেখানে মহিলা উপস্থিতি থাকে বহু সংখ্যায়, তাঁরা ‘পথক্ষণিকা’ ব্যবহার করতে পারবেন ।”

project Pathakhanika

‘পথক্ষণিকা’য় মায়েরা শিশুদের স্তন্যপান করাতে পারবেন

 

110 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বরাজকুমার মণ্ডল বলেন, “সুডা (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) থেকে আধিকারিকরা ‘পথক্ষণিকা’ পরিদর্শন করে গিয়েছেন । এবার মেয়র সাহেব বা বস্তি বিভাগের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার দিনক্ষণ দেখে উদ্বোধন করবেন । এই চত্ত্বরে প্রচুর দোকানপাট হয়েছে । সকালে বাজার হয় । দিনভর খাবার দোকান চলে । আশপাশে বহু মহিলা কাজে আসেন । সন্ধ্যায় ভিড় উপচে পড়ে । ফলে এটা চালু হলে সমস্ত বয়সের মহিলারাই উপকৃত হবেন ।”

 

এ বিষয়ে কলকাতা পুরনিগমের বস্তি বিভাগের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বপ্নের প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্ব উত্তরণ বা বস্তি বিভাগের । সুডা অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে । পুর ইস্তাহারে আমাদের দশ দিগন্তের একটি হল এই ‘পথক্ষণিকা’ । দ্রুত দুটি উদ্বোধন হবে । প্রাথমিকভাবে প্রতি বরোতে একটি করে তৈরি হবে । তারপর পরিস্থিতি ও আর্থিক সঙ্গতি বুঝে ওয়ার্ড ভিত্তিক করা হবে । অর্থ ও জমি পাওয়া মুশকিল, তাই সব বরোতে দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন হচ্ছে না । আমরা চেষ্টা করছি সব বাধা কাটিয়ে যাতে এই প্রকল্প সফল করা যায় ।”

project Pathakhanika

তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে ‘পথক্ষণিকা’ 

 

কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, উত্তরণ বিভাগ প্রতি বরো এলাকায় ‘পথক্ষণিকা’ প্রকল্প করার জন্য জমির খোঁজ করছে । দুটি তৈরি হয়ে গিয়েছে । পাইপলাইনে আছে পাঁচটি । 7 নম্বর বরোর অন্তর্গত 63 নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে মির্জা গালিব স্ট্রিটে, 6 নম্বর বরোতে 55 নম্বর ওয়ার্ডে হোলি চাইল্ড স্কুলের কাছে, 12 নম্বর বরোতে 101 নম্বর ওয়ার্ডে বৈষ্ণবঘাটায় বাইপাস লাগোয়া এলাকায়, 3 নম্বর বরোতে 32 নম্বর ওয়ার্ডের ক্যানেল সার্কুলার রোড ও 30 নম্বর ওয়ার্ডে ভিআইপি মার্কেট এলাকা মিলিয়ে মোট পাঁচটি ‘পথক্ষণিকা’ তৈরি হবে ।

এছাড়াও প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি শুরু হয়েছে আরও 4টি ‘পথক্ষণিকা’র । সেগুলি হল, 5 নম্বর বরোর 40 নম্বর ওয়ার্ডে লেডি ডাফরিন হাসপাতালের ভিতর । 1 নম্বর বরোর 5 নম্বর ওয়ার্ডে আরজি কর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ সংলগ্ন । 3 নম্বর বরোতে 33 নম্বর ওয়ার্ডে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে বিশ্রামাগারে । 6 নম্বর বরোতে 55 নম্বর ওয়ার্ডের এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের অভ্যন্তরে ।

মহিলারা চাইছেন ইতিমধ্যে কাজ সম্পন্ন ‘পথক্ষণিকা’ দুটি দ্রুত উদ্বোধন হয়ে চালু হোক ৷ পথচারী রিয়া চক্রবর্তী বলেন, “আমরা যাঁরা পথেঘাটে কাজে বের হই, রোজ রাস্তায় অনেক সময় শৌচকর্ম করতে গিয়ে পরিচ্ছন্ন পাই না । আবার বহু ক্ষেত্রে শিশুকে নিয়ে বের হলে তাকে খাওয়ানোর জায়গা নিয়ে সমস্যা হয় । ঋতুচক্র চলাকালীন সমস্যা হয় । অনেকেই কাজে যাওয়ার আগে পরে পোশাক পরিবর্তন করেন। পরিষ্কার হন । এক ছাদের তলায় সবটা মিলবে, এতে আমরা খুব খুশি ।” আরেক পথচারী রীণা দেব বলেন, “এক ছাদের তলায় এত সুবিধা পেলে খুব ভালো হবে । আমরা বা আমাদের মতো বহু মহিলা উপকৃত হবেন ।”

আরও পড়ুন:- জীবিত মেয়ের শ্রাদ্ধ করলেন বাবা-মা, কারণ জানলে চমকে যাবেন

আরও পড়ুন:- বাইক কতদিন অন্তর সার্ভিস করাবেন? ইঞ্জিন অয়েল কত কিমি অন্তর বদলাতে হয়? জেনে নিন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন